কালিমাটি অনলাইন

দ্বাদশ বর্ষ / পঞ্চম সংখ্যা / ১২৫

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

দ্বাদশ বর্ষ / পঞ্চম সংখ্যা / ১২৫

বুধবার, ১৩ এপ্রিল, ২০২২

মেঘ অদিতি

 

কালিমাটির ঝুরোগল্প ১০৬


কোলাজ

এবার তার ফিরে যাবার পালা। শেষবার হয়ত সেকারণেই, ঘাড় ঘুরিয়ে সে দেখে নিচ্ছে আশপাশ। আকাশ কালচে। যতটা চোখ যায়, সীমানার একদিকে ধূসরে ছেয়ে যাচ্ছে। অন্যদিকে ঝাঁপাচ্ছে অন্ধকার। আহা এখনও তো হাতে ধরা ম্যাগনোলিয়া  গ্রান্ডিফ্লোরার মতো সতেজ এক সকাল, তবু পোড়াচোখ কেন যে দু’দিকেই ধায়!  এই সকালকে তবে কি কুচিকুচি করে ছড়িয়ে দেবে জমিনের ওপর?   

সে প্রসারিত করে হাত। মুঠো খুলে নেচে ওঠে গ্রান্ডিফ্লোরা। নাম না জানা কোন এক লেকের জলে ঝিকমিক করে চৈত্রের মায়া অথবা জীবন। আহা জীবন… মখমল সবুজ ঘাসে ছেয়ে গেছে চারপাশ। কিছুক্ষণ আগের ধূসরতা মুহূর্তে বিলীন। বেঁচে থাকার এই কি মহিমা। চারপাশের সাথে নিজেকে মুহূর্তে এভাবেই খাপ খাইয়ে নিতে হয় ভেবে সে পা ডোবাতে চায় ঘাসের আদরে। অথচ তা পাথরের মতো ভারী, নিয়ন্ত্রণহীন বোধ হলে বিস্ময়ে অনড় পা দুটোর দিকে চেয়ে থাকতে থাকতে তার হাতের মুঠোর দিকে চোখ পড়ে। আজ বিষ্যুদবার! ঠিক আগের মতই আজও কি দড়িতে ঝুলছে বাসি জামাকাপড়, টেবিলে আধখাওয়া চায়ের কাপ? ফ্রিজে না তোলায় টেবিলেই পড়ে আছে কি আধখাওয়া কষা আলুর? টয়লেট থেকে হয়ত  ভেসে আসছে হাওয়াই গুনগুন। সাথে বিড়ির ধোঁয়া। না কি বিষবাষ্প? হিলহিলে শরীর নিয়ে সে ঢুকে পড়তে চায় অকস্মাৎ সেই টয়লেটে। কুণ্ডলী পাকিয়ে ঘরময় ভেসে বেড়ায় তার ছায়া। এবং ভাবতে চায়, আগ্রাসনের পরিবৃত্ত থেকে সে কি কখনও ফিরতে চেয়েছিল আদৌ, নাকি মানিয়ে নেবার খেলায় তিলেতিলে নিজেকে  ধ্বংস করছিল? কিছুই তেমন মনে পড়ে না। ঘরটায় টিভি চলছে। একটা মেয়েকে জনা দশেক লোক টেনে হিঁচড়ে ঝোপের আড়ালে নিয়ে যাচ্ছে। হঠাৎ মনে পড়ে, শুক্রবারে তাদের কোথাও যাবার কথা হয়েছিল। আর বিষ্যুদবার মধ্যরাতে টলতে টলতে তার সঙ্গীটি মারতে মারতে তাকে ফেলে এসেছিল বড় রাস্তার মোড়ে। চোখ ধাঁধানো আলোর লড়িটা কি তারই অপেক্ষায় ছিল? টিভি পর্দার মেয়েটাকে সবাই মিলে এখন পুড়িয়ে দিচ্ছে। ধোঁয়ায় ভরে উঠছে আকাশ।

চৈত্রের রোদ নাকি চোখ, কী জানি কেন খানিক খরখরে হয়ে ওঠে। নাকি আকাশের  গায়ে লাগে ফাগুয়া লাল! মুহূর্তে দৃশ্যপট পালটে পালটে যায়। মহুয়া ঘ্রাণ মেখে চারপাশটা রঙিন হয়ে ওঠে। আর সে স্পষ্ট অনুভব করে আবির ছুঁইয়ে কেউ যেন খুব নরম স্পর্শ রাখছে ঠোঁটে। হাতের মুঠোয় গুঁজে দিচ্ছে গ্রান্ডিফ্লোরা সকাল। আর ফিসফিসিয়ে বলছে… ফেরো… এবার তো ফেরো…

ভয় করে খুব। ফিরতেই তো চাইছে। কিন্তু কোথায় ফিরবে সে? ফিরতে চেয়ে, এই অন্ধকার আর আলোর কোলাজের মাঝে সে কোন দিকে যাবে? বাতাসে আঁক টেনে টেনে সে লিখতে যায় জীবনের সমস্ত হাতছানিই কি শেষে ইতিহাসের পুনর্নির্মাণই হয়ে ওঠে না?

হঠাৎ ফাগুয়ার লাল মেখে তার সামনে দাঁড়ায় গ্রান্ডিফ্লোরা সকাল। ফের মিলিয়ে যেতে যেতে বলে যায়, এভাবেই প্রতিবার চক্রবুহ্য ভেদের সূত্রটি কিন্তু সকলেরই অজনা রয়ে যায়…  

 

 


0 কমেন্টস্:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন