কালিমাটি অনলাইন

দ্বাদশ বর্ষ / পঞ্চম সংখ্যা / ১২৫

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

দ্বাদশ বর্ষ / পঞ্চম সংখ্যা / ১২৫

বৃহস্পতিবার, ১৩ জানুয়ারী, ২০২২

অঞ্জন সেনগুপ্ত

 

 

ধারাবাহিক উপন্যাস

 

রূটম্যান




 

(১)

 

পার হয়ে যায় গাড়ি -পার হয় গরু

 

পাড়ায় দুটো পালসার এসেছে। ঝা-চকচকে চেহারা। মেদহীন কালো ঘোড়ার মতো দেখতে। দেখলেই মনে হয় একবার ওর শরীরে হাত ছোঁয়াই। অন্তত আঙুলের স্পর্শে মনটা একটা সুখানুভূতি চায়। মালিক হরিদাস রোজ সকালে ওর বাড়ির সদর দরজা অর্থাৎ বাঁশের বেড়াটা সরিয়ে পালসারটাকে বাইরে আনে। সাথে আনে এক বালতি জল আর একটা বহু ব্যবহৃত রঙের ফাঁকা ছোটকৌটো।

হরি একবার চারদিকটায় আলতো করে চোখ বুলিয়ে নেয়। না, রাস্তায় যাদের এই মুহূর্তে দরকার ছিল তারা কেউ নেই। তবে বীরেনের বাড়ির জানলা থেকে কে যেন হঠাৎ সরে গেল! এখনও জানলার ফুল ফুল পর্দাটা মৃদু দুলছে। হরি বুঝতে পারে, ওটা মালতী না হয়ে যায় না। রাস্তাঘাটে হঠাৎ দেখা বা চোখে চোখ পড়ে গেলে মালতী তাড়াতাড়ি পাশ কাটিয়ে চলে যায়। কিন্তু হরি জানে সে যেদিন পালসারটা নিজের বাড়ির সামনে দাঁড় করিয়ে চোখ থেকে রোদ চশমাটা সবে খুলেছে, সেদিন একেবারে সরাসরি মালতীর চোখে একরাশ বিস্ময় দেখতে পেয়েছিল। সে অপলক চোখে অনেকক্ষণ ধরে তাকিয়ে ছিল। তবে তা হরির দিকে নয়, সে দেখছিল ওর নতুন পালসারটাকে। অবশ্য হরি এতেই ধন্য হয়ে গিয়েছিল। সে মনে মনে হেসে বুঝতে পারছিল যে, পাখি এবার দানা খাবে।

এর মধ্যেই যারা হৈ হৈ করে দৌড়ে আসছে হরি ওদেরই প্রত্যাশা করছিল। পাড়ার কচি কাঁচারা হরির পালসারের সামনে এসে থমকে দাঁড়িয়ে যায়। কেউ কেউ আয়নায় নিজের মুখটা একবার দেখে নিয়ে বড়দের মতো নিজের চুলে আঙুল চালায়। কেউ আবার আঙুল ছোঁয়াতে গিয়েও সাহস পায় না। কেউ বা সোল্লাসে বলে ওঠে - আরে দেখ দেখ এই নতুন আরশিতে আমাকে কত সুন্দর দেখাচ্ছে! অথচ বাড়িরটাতে তো এমন দেখায় না! একে একে বাকিরাও নিজেদের মুখ দেখে পালসারের আয়নায়।

এসব দেখে হরি শব্দ করে হাসে। ওরাও সাহস করে হাসে। হরি বলে - কিরে, খুব লোভ হচ্ছে বুঝি? ওরা প্রায় একসাথেই মাথা নাড়ে।

হরি আবার মৃদু হেসে বলে - ঠিক আছে। দিতে পারি। তবে আমার একটা শর্ত আছে।

তিনজনেই একসাথে হরির মুখের দিকে তাকিয়ে বলে - কি শর্ত হরিদা?

-শর্তটা হল আমার এই টাট্টুটার শরীর থেকে ভালো করে ধুলো ঝেড়ে দিতে হবে। তারপর ওকে জল দিয়ে স্নান করিয়ে শুকনো গামছা দিয়ে মুছে দিবি। তাহলে তোদের মোড় পর্যন্ত টাট্টুর পিঠে চাপিয়ে হাওয়া খাইয়ে নিয়ে যাব। হরি ওদের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসে।

এই কচিদের মধ্যে বীরেনও ছিল। সে বলে - এই তো কয়েকদিন হল তোমার টাট্টুকে এনেছ হরিদা। আর এর মধ্যেই ওর শরীরে এত ধুলো লাগলো কীভাবে?  আমাদের গ্রামে তো এখন পাকা রাস্তা! মনে হচ্ছে এই টাট্টু বুঝি এক হাঁটু ধুলোর মধ্যে গড়াগড়ি খেয়েছে।

বাকি দুটোর থেকে বীরেন একটু বড়। তাই ওর চোখ-কথা সবই এদের থেকে পরিণত। হরি প্রথমে ভেবেছিল বীরেনের কথার কোন উত্তর দেবে না। কিন্তু ওর প্রশ্নের উত্তর না দিলে যদি ও আরো পাঁচজনকে বলে বেড়ায় তাহলে অনেকেরই এ ব্যাপারে ক্রমশই কৌতূহল বাড়তে থাকবে। তারচেয়ে বরং বলে ফেলাই ভাল। হরি আলতো করে বলে - বুঝলি বীরেন, এখন তো টাট্টু একেবারে নতুন। তাই ওকে নিয়ে এদিক ওদিকে ঘুরে বেড়াই। বলতে পারিস ওকে রাস্তা চেনাই। এতদিন আমার যত আত্মীয়দের বাড়ি যেতে পারিনি, টাট্টু আসার পরে রোজ চুটিয়ে তাদের বাড়ি বাড়ি ঘুরে বেড়াচ্ছি। ওকে দেখে সবাই বেশ খুশিও হয়েছে।

-সেটা কতদূরে হরিদা? বীরেন টাট্টু মুছতে মুছতে জানতে চায়।

- সেকি আর এক জায়গায় নাকি! কোনটা আপার বাগডোগরায় আবার কোনটা রাঙ্গাপানিতে আবার কোনটা ফুলবাড়িতে। বুঝতেই পারছিস সবটাই দূরে দূরে। হরি হাসতে হাসতে বলে।

-একদিন আমাকে তোমার টাট্টুতে চাপিয়ে নিয়ে যাবে হরিদা? আমি কোনদিন চা-বাগান দেখিনি।

হরি মনে মনে যে বিপদের আশংকা করছিল ঠিক তাই হল। বীরেনকে এক কথায় না বলে দিতেই পারে। কিন্তু সেটা এই মুহূর্তে সম্ভব না। কারণ ওকে হাতে  না রাখলে ওর দিদি মালতীর খবরাখবর পাওয়া যাবে না। আবার ওকে নিয়ে ঘোরাও যাবে না। তাই একটু ভেবে হরি বলল - দেখ বীরেন, আমি তো একটু রাতের দিকে যাই। তখন রাস্তা থাকে সুনসান। তাই টাট্টুও পাঁই-পাঁই করে ছোটে। তুই পেছনে বসলে হঠাৎ উড়ে যেতে পারিস। ঝোপঝাড়ে পড়ে থাকবি আর আমি টেরও পাব না। আপাতত তোদের তিনজনকেই আমাদের মোড় পর্যন্ত নিয়ে যাব, কেমন!

বীরেন এমন কথায় কতটুকু খুশি হল তা ওর মুখ দেখে বোঝা গেল না! তবে ওরা হৈ হৈ করে পালসারের পেছনে গাদাগাদি করে বসে বাগডোগরার মোড়ে গেলে হরি ওদের সবাইকে একটা করে ছোট ক্যাডবেরি কিনে দিল। এখন হরির পকেট যথেষ্ট গরম। গত কালই হাতে এসেছে একটা দশ হাজার টাকার বান্ডিল। এভাবে সপ্তাহে একটা বান্ডিল পেলেই যথেষ্ট। এক বছরের মধ্যেই তাহলে বাড়ির হাল ফিরিয়ে দেওয়া যাবে। হঠাৎ বীরেনের স্পর্শে হরির ভাবনায় ছেদ পড়ে। সে বীরেনের দিকে তাকাতেই বীরেন বলে - এবার আমরা কি বাড়ি ফিরব হরিদা? আসলে বলে আসিনি তো!

-হ্যাঁ, চল তোদের পৌছে দিই। আমাকে আবার এখনই আসতে হবে। হরি  অন্যমনস্ক ভাবে বলে।

কচি-কাঁচাদের নামিয়ে দিয়ে হরি চুপ করে বীরেনের হাতে আর একটা ক্যাডবেরি গুঁজে দিয়ে ফিসফিস করে বলল - এটা তোর দিদিকে দিস। বলবি এটা নতুন টাট্টু কেনার জন্য খাওয়ালাম। মনে করে দিস কিন্তু!

ওরা ফিরে যেতেই ফোনটা এল। আজ সকাল থেকে হরিও বেশ ক’বার হরেনের সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেছে। কিন্তু সব সময় এনগেজ পেয়েছে। ব্যাটা কার সাথে যে এত কথা বলছিল কে জানে! এতক্ষণে ওর হুঁশ হয়েছে। হরি ফোনটা ধরে বলল - তোর ব্যাপার কি বল তো? কতবার কল করেছি একবার দেখ।

-কী করি বল। প্রায় আধঘন্টা ধরে ফোনে কথা বলেই যাচ্ছে। এক কথাই এক’শ বার করে বলে চলেছে। তাই ছাড়তেও পারছিলাম না। হরেন বলে।

-কেন, কোন খবর আছে নাকি? হরি জানতে চায়।

-বস সে কথাই বলছিল। তবে এবার দু’বাক্স আসবে। হরেনের গলায় উচ্ছাস ধরা পড়ে।

-সে না হয় বুঝলাম। কিন্তু দু’বাক্স মানে যে কুড়ি হাজার টাকা তা বলেছিস তো? হরি বলে।

-না, তা অবশ্য বলিনি। হিসেবে তো তাই আসে, তাই না? হরেন জানতে চায়।

-হ্যাঁ, তাই আসে। কিন্তু ওরা যদি হিসেবে একটাই ধরে তখন কিন্তু কেচাইন হয়ে যাবে এটা বলে দিস ওদের। আমরা কিন্তু হিসেব বুঝে নেব। শালা লাইফ রিস্ক করে কাজ করি। রাস্তায় সব সময় বিপদ ওৎ পেতে থাকে। চালে একটু ভুল হলেই একেবারে শ্বশুর বাড়ির ভাত খাইয়ে ছাড়বে! তাছাড়া বিমলকেও তো খবরের জন্য দিতে হয়। সেই টাকা তো আর ওরা দেয় না। আমাদের পকেট থেকেই তো যায়। তুই ফোন করে পুরো হিসেব বুঝিয়ে দিবি। হরি এইভাবে হরেনকে বুঝিয়ে দিয়ে বাড়িতে ঢোকে।

ঘরে ঢুকতে না ঢুকতেই হরির একটা ফোন এল। হরি চোখের সামনে এনে দেখল বিমল ফোন করেছে। কিন্তু এমন অসময়ে তো বিমল কখনও ফোন করে না। এখন তো ওর ঘুমানোর সময়। সারারাত রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে সকালে ফাঁড়িতে মুখ দেখিয়ে তবে নিস্কৃতি। হরি সাতপাঁচ ভাবতে ভাবতেই ফোনটা ধরে।

-হ্যালো। কি ব্যাপার! এখনো ঘুমাওনি?

-খবর আছে। বিমল বেশ ফিসফিস করে বলে।

-একটু জোরে বলা যাবে? হরি জানতে চায়।

-না। বিমল চাপা স্বরে বলে।

-তুমি কি বাড়িতে নেই? অনেকের গলা পাচ্ছি কেন?

-না। আমি একটু পরে ফাঁড়ি থেকে বাড়ি যাব।

-তাহলে বল কী খবর রয়েছে? হরিও গলা নামিয়ে বলে।

-আমি এখন রাস্তায় দাঁড়িয়ে আছি। আজ নাকা চেকিংয়ে দু’ঘন্টা ফাঁকা থাকবে।

-কখন থেকে?

-রাত দশটা থেকে বারোটা।

-কেন তোমাদের এমন সুমতি হল বিমলদা?

-আসলে আমরা সহকর্মীর মেয়ের বিয়েতে যাব। তবে একেবারে তো চেকিং ফাঁকা রাখা যায় না।

-তাহলে আর ফোন করলে কেন! হরি অবাক হয়ে জানতে চায়।

-যারা থাকবে তারা অত নিয়ম কানুন জানে না। তেমন হলে যৎসামান্য দিয়ে কেটে পড়া যাবে।

-তুমি হঠাৎ করে বললে কেন? তোমরা যে বিয়ে বাড়ি যাবে তা তো আর আজ ঠিক হয়নি!

-না, তা অবশ্য ঠিকই বলেছ। আসলে তখন নাকার জন্য স্টাফ পাওয়া যাচ্ছিল না। তাই আমরা সবাই যেতাম না। কিন্তু আজই থানা জানিয়েছে যে দু’ঘন্টার জন্য কয়েকজনকে পাঠাতে পারে। তাই তোমাকে খবর দিলাম। বিমল বলে।

-ঠিক আছে। দেখি সব ব্যবস্থা ঠিকঠাক আছে কিনা। খবরটা অন্তত একদিন আগে পেলে ভালো হত। একটা প্রস্তুতির ব্যাপার থাকে তো।

-কাজ হলে আমারটা ভুলো না যেন। আজ আবার একশো টাকা চাঁদা খসে যাবে। বিমল ফ্যাঁচফ্যাঁচ করে হাসে।

-সে তোমাকে মনে করিয়ে দিতে হবে না। কাজ হলে ঠিক পেয়ে যাবে।

বিমল ফোন ছেড়ে দিয়েছে। হরি কিছুটা সময় ভাবে। আজ যদি বুধবার হত তাহলে ভালো হত। এখন ওদের কাছে মাল কতগুলো আছে তা তো আর জানার উপায় নেই। কাজেই সবটাই নির্ভর করছে ভাগ্যের উপর। এসব ভাবতে ভাবতেই হরেনকে ফোন করে।

-হ্যাঁ, বল বন্ধু। তুই কোথায়? হরেন বলে।

-আমি বাড়িতেই আছি। বিমলদা ফোন করেছিল।

-কী বলছে? টাকা বাড়াতে হবে বুঝি? হরেন জানতে চায়।

-না, তা নয়।তবে একটা খবর আছে। হরি একটু থেমে আবার বলে- তুই এখনই খবর নে তো আজ ওদের ঘরে কতগুলো অবলা আছে। আর ওদের আজকে লোড করে পাঠাতে পারবে কিনা। আমাকে আধ ঘন্টার মধ্যেই জানাবি। হরি ফোন ছেড়ে দেয়। এই মুহূর্তে ওর বিমলের উপর ভীষণ রাগ হচ্ছে। শুধু একটা দিন আগেই খবরটা পেলে পকেট ভরে যেত। আগের কয়েকটা খেপে যা পাওয়া গিয়েছিল তাই দিয়ে ও আর হরেন দুটো টাট্টু কিনেছে। এখন হাতে বিশের বেশি নেই। শুধু খবরটা একটু আগে পাওয়া গেলেই আবার বেশ মোটা আমদানী হয়ে যেত। আরে বাবা, আমাদের পকেটে এলে তো তোর পকেটও যে গরম হয়ে যেত! সবটাই তো পড়ে পাওয়া চোদ্দ আনা। এটা না বোঝার মতো বোকা নয় বিমল। এখন সবটাই ভাগ্যের ব্যাপার।

কোমরে গামছা বেঁধে পুকুরপানে যেতে যেতে হঠাৎ মালতীর কথা মনে পড়ে যায়। কে জানে বীরেন ঐ ক্যাডবেরিটা দিদিকে দিয়েছিল, নাকি নিজেই খেয়ে নিয়েছে। বাচ্চা ছেলে। ওর আরো একটা খাওয়ার লোভ হতেই পারে। এতে অবশ্য হরি তেমন কিছুই মনে করেনি। হাজার হোক ওর ভাগ্যে যদি মালতীর নাম লেখা থাকে তাহলে তো বীরেন শ্যালকই হবে। পাঁচটা তো নয়। একটাই শ্যালক। ওর আবদার তো মেটাতেই হবে। এই সব আবোল তাবোল ভাবতে ভাবতেই হঠাৎ ভূত দেখার মতোই চমকে ওঠে হরি। কারণ সামনেই মালতী দাঁড়িয়ে আছে। এ তো মেঘ না চাইতেই বৃষ্টি ধেয়ে এল। হরি মুচকি হেসে বলে-কি চান করে আসা হল?

বুকের গামছাটা শরীরে প্রায় এঁটে বসেছে। মালতী এই অবস্থায় হরিকে দেখে ভীষণ লজ্জা পায়। ও তাড়াতাড়ি গামছাটাকে আরো ভালো করে সারা বুকে ছড়িয়ে দিয়ে বলে- কেন দেখে বোঝা যাচ্ছে না?

হরি যে নিজেও লজ্জা পেয়েছে তা ওর নিচু মাথা দেখেই বোঝা যাচ্ছে। ঐ অবস্থায় হরি বলে- না, মানে ইয়ে আর কি! কথা জড়িয়ে যায় হরির।

মালতী মুখে হাত চাপা দেয়। মুখে গাম্ভীর্য এনে বলে- নতুন গাড়িটা কোথা থেকে এল?

-কেন বীরেন কিছু বলেনি? হরি জানতে চায় ।

-ও আবার কী বলবে এসব ব্যাপারে! বাচ্চা ছেলের মাথায় কি এসব আসবে নাকি!

হরি মাথা নীচু করেই কথা বলছিল। যেন সামনে কোন মাননীয় কেউ দাঁড়িয়ে রয়েছে। আসলে হরি এই প্রথম সিক্তাবস্থায় মালতীকে দেখল। আর একবার দেখতে লোভ হলেও লজ্জায় মাথা তুলতে পারছিল না। তবে ঐ অবস্থায় সে তখন থেকেই মালতীর পায়ের পাতা থেকে একেবারে হাঁটুর কয়েক ইঞ্চি উপরে উঠে থাকা জামাটা দিব্বি দেখছিল। ওর বেশ ফর্সা নিটোল পা দুটো দেখলেই মনে হয় কবে যে ঐ পায়ে সে নিজের হাতে এক জোড়া রূপার নূপুর পরিয়ে দেবে তা কেবল ভগবানই জানেন।

-তোমাকে তো সারাদিন বাড়িতেই দেখি। আসলে তুমি সত্যিই কী চাকরী কর বল তো?

-আমার চাকরী তো দিনে নয়। সে তো রাতে। হরি ঘাবড়ে গিয়ে বলে।

-এ আবার কেমন চাকরী যেখানে রোজই রাতে ডিউটি থাকে! মালতীর গলায় বিস্ময় ঝরে পড়ে।

-সে তুমি বুঝবে না। তাছাড়া আমি তো আর একা করি না। পূব পাড়ার হরেনও আমার সাথে একই কাজ করে। রুটম্যান বলতে পার। হরি এবার একটু হাসার চেষ্টা করে।

-মাস্টারী শুনেছি, পুলিশ-মিলিটারীর চাকরীও শুনেছি। এমনকি পঞ্চায়েতের চাকরীও শুনেছি। কিন্তু ঐ যে কি একটা চাকরী বললে তা তো শুনিনি। ঠিক আছে বাবার কাছ থেকে জেনে নেব। মালতী পা বাড়ায়।

-আরে বাবার কাছে জানতে যাবে কেন! রুটম্যান হচ্ছে গিয়ে পিওনের মতো। জান তো পিওনরা যেমন বাড়ি বাড়ি আমাদের সবার চিঠি বিলি করে বেড়ায়, ঠিক তেমনি আমরাও খবরাখবর আদান প্রদান করে থাকি। ব্যস, এইটুকুই আমাদের কাজ। হরি এইটুকু বোঝাতে পেরেই খুশি হয়ে হাসে।

মালতী সন্দেহজনক চোখে হরির মুখের দিকে তাকিয়ে বলে- যত্ত সব আজেবাজে চাকরী। রাস্তা ছাড়, বাড়ি যাব।

হরি তাড়াতাড়ি রাস্তার একপাশে সরে দাঁড়ায়। তারপর হঠাৎ ক্যাডবেরির কথাটা মনে পড়ায় বলে- বীরেন তোমাকে ক্যাডবেরিটা দিয়েছে তো?

মালতী এ কথার কোন উত্তর না দিয়ে হনহন করে বাড়ির পানে হাঁটা দেয়।

এমন ভাগ্যবান গরু বোধহয় খুব কমই আছে যারা অসুখে মারা যায়। অনেক সময় বিষাক্ত সাপের কামড়েও মারা যেতে দেখা গেছে। বিশেষ করে বর্ষাকালে। তখন মুখ দিয়ে গ্যাঁজলা বেরিয়ে আসে। মারা গেলে ওদের ফেলা হয় নির্দিষ্ট স্থানীয় ভাগাড়ে। তখন শকুন আকাশে চক্কড় কাটতে থাকে। অত উঁচুতে কে যে ওদের খবর দেয় কে জানে! কিন্তু চট করে ওরা ভাগাড়ে নামে না। বহু উঁচু থেকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে নজর রাখে মৃত খাবারের উপর। কারণ তখন চামারের কাছে খবর পৌছে গেছে। সে ছুটে এসেছে ভাগাড়ের উদ্দেশে। নিপুণ হাতের সৌ্কর্যে খুব দ্রুত খুলে যাচ্ছে আজন্ম লালিত চামড়াটি। মাংসালো নধর শরীরটি যতই উন্মুক্ত হচ্ছে, ততই শূন্যে ঘুর্ণায়মান একঝাঁক কালো ছায়া ক্রমশই প্রকট হয়ে নীচে নেমে আসছে। ওরা যে কত মাস ধরে বুভূক্ষু রয়েছে তার খবর কি আর মানুষ রাখে! অবশ্য এতে মানুষের বয়েই গেছে। একটা শকুন থাকে মোরগের মতো ঝুঁটি বিশিষ্ট। আর ও হল ঐ গোষ্ঠির দলপতি বা রাজা। আগে সে তার সুতীক্ষ্ণ ঠোঁটের সাহায্যে মাংসের স্বাদ গ্রহণ করবে, তারপর বাকিরা ঝাঁপিয়ে পড়বে খাদ্যের উপর। এটাই ওদের পরম্পরা।

এসব সাত কাহনের কথা সব গরুই জানে। কিন্তু কেউ নিজের ভাগ্যের সুলুক সন্ধান করতে পারে না। কার কাছেই বা করবে! গৃহস্বামী ততদিনই ভীষণ আদর যত্ন করে ভালো ভালো খাবার মুখের সামনে তুলে দে্য়, যতদিন গাভীটি দুধেল থাকে বা হালের বলদটি কর্মঠ থাকে। ধীরে ধীরে সেই গাভীর দুধ কমে গেলে একদিন আবার সে গর্ভবতী হয়ে যায়। কিন্তু তাই বা কত বছর। যেদিন সে আর গর্ভবতী হতে পারবে না বা বলদটি জমি চাষ করতে গিয়ে হুমড়ি খেয়ে পড়বে, সেদিন থেকেই গৃহস্বামীর কপালে ভাঁজ পড়বে! এত বছরের প্রেম-ভালোবাসা সব এক মুহূর্তেই উবে যাবে। আর কয়েকদিনের মধ্যেই সেই গাভী বা বলদটি গোহাটার উদ্দেশে দু’চোখে টলটলে জল নিয়ে একান্ত অনিচ্ছা সত্ত্বেও যেতে বাধ্য হবে। এতসব বোঝার মতো যৎসামান্য বুদ্ধি তাদের নেই বলেই তাদের আদর  করে মানুষ ‘বলদ’ বলে থাকে। আর তাই কোন বলদই কোনদিন বিদ্রোহী হয়ে উঠতে পারেনি। তাদের মৃত্যুর জন্য যে তাদের গৃহস্বামীই দায়ি এমন আজব কথা কেউ তাদের কোনদিন বলেনি। আর বললেই বা শুনছে কে! ইয়া বড় বড় কানই  শুধু আছে বটে কিন্তু মানুষের অনেক কথাই তারা শুনতে বা বুঝতে পারে না।

ভাগ্যিস বুঝতে পারে না। তাহলে কি আর ব্যাপারীরা গ্রামে গ্রামে ঘুরে বা গোহাটা থেকে ওদের কিনে নিতে পারত! কখনই না। গৃহস্বামীরা এক সময় ওদের মুক্ত করে দিতে বাধ্য হত। আর ওরাও দলবদ্ধ ভাবে সন্ন্যাস নিয়ে এগ্রাম ওগ্রাম ঘুরে বেড়াত। এমন জীবনই তো ছিল কাঙ্ক্ষিত। ভাগ্যিস ওদের জীবনটা অমন হয়নি! হরি নিজের এমন আবোলতাবোল ভাবনার কোন মাথা মুন্ডু খুঁজে পায় না। অবশ্য এমনটা আজ নতুন নয়। মাঝে মাঝে রাতে অদ্ভুত অদ্ভুত গরুর স্বপ্ন দেখে। দলে দলে গরুরা ওদের বাঁকানো শিং উঁচিয়ে ওর দিকে তেড়ে আসে! ও প্রাণপণে  দৌড়াতে থাকে আর মাঝে মাঝেই হোঁচক খেয়ে পড়ে যায়! এমন উদ্ভট স্বপ্নের কোন মানে না থাকলেও হরির ঘুমটা ভেঙে যায়। আর গলাটা শুকিয়ে কাঠের মতো খটখটে হয়ে যায়। সারা মুখে জমে থাকে বিন্দু বিন্দু ঘাম। ফ্যানের স্পিড বাড়িয়ে ঐ অবস্থায় শুয়ে পড়লে মুখটা ঠান্ডা হয়ে যায়। ধীরে ধীরে ঘামগুলো শুকিয়ে গেলে হরি আবার পাশ ফিরে শুয়ে থাকে।

ঘুমটা ভেঙে যাবার পরে আবার সবেমাত্র চোখ দুটো যেই না লেগে এসেছে অমনি ঘুমটা চটকে গেল হরেনের ফোনে। ওর জন্য হরি আলাদা রিং টোন করে রেখেছে। চোখ বন্ধ করেই বলল- বল কী খবর আছে।

-ওরা রাজি আছে। হরেন উত্তেজিত গলায় বলে।

-কটা বাক্স পাঠাবে বলল। হরি চোখ বন্ধ করেই কথা চালিয়ে যায়।

হরেন জানে হরি গাড়িকে বাক্স বলে। তাই হেসে বলে- দুটো বড় বাক্সের কথা বলেছে।

-তবে এখন ওগুলো কোথায় আছে রে? রওনা দিয়েছে কি?

-হ্যাঁ। শুনলাম অবলারা নিজের নিজের গাড়িতে উঠে পড়েছে। কিছু পরেই পাঞ্জিপাড়া হয়ে ইসলামপুর-চোপড়া পেরিয়ে শিলিগুড়ির পথ ধরবে। তবে তার আগেই আমাদের কাজটা যেন হয়ে যায়। তোকে তাই বলছি এখন ছয়টা বাজে। আমরা কিন্তু সাতটার মধ্যেই কাজ শুরু করে দেব, এটা মাথায় রাখিস। তুই বরং আর একবার বিমলদার সাথে একেবারে পাক্কা কথা বলে নে। তাহলে আমরা অন্তত নিশ্চিন্ত হতে পারি।

হরিচরণ দাস আর হরেন চিনিকে এই অঞ্চলের লোকেরা আদর করে হরি-হর বলে ডাকে। ওরা মাঝে মাঝেই যে নতুন পালসারে চেপে রাস্তার ধুলো উড়িয়ে সাঁ-সাঁ করে কোথায় যায় তা ইদানীং মোড়ের সব দোকানের একমাত্র আলোচ্য বিষয়। বিশেষ করে সন্ধ্যার পরে ভট্ ভট্ করে মোটর বাইকের আওয়াজ হলেই সকলেই ঘাড় ঘুরিয়ে হরি-হরের নিশি ভ্রমণের ব্যাপারে রসালো আলোচনা শুরু করে দেয়। যে যেমন ভাবে পারে গল্পের গরুকে একেবারে তালগাছে উঠিয়ে তবে দোকান ছাড়ে।

তবে দিনের আলোচনা একটু অন্য ধরনের। বিষয় পালটে গিয়ে কাগজের হেড লাইনে চোখ রেখে শুরু হয় করোনা ভাইরাসে দেশ ও রাজ্যে গতকাল পর্যন্ত মোট আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা এবং তা নিয়ে রাজ্য ও কেন্দ্রের উপর দোষারোপের পালা। অবশ্য যারা আলোচনায় অংশগ্রহণ করে থাকেন তাদের কারোর মুখই ঢাকা থাকে না। কারণ তারা গর্ব করে বলেন যে শহরের থেকে করোনার প্রকোপ গ্রামে নাকি অনেক কম। আসলে তাদের শরীরে ইমিউনিটি নাকি অনেক বেশি। কিন্তু সুকুমার চা খেতে এলেই শুরু হয়ে যায় রাজনীতির আলোচনা। একুশের নির্বাচনে বিধান সভায় কারা নবান্নের চেয়ারগুলোকে গঙ্গায় ফেলে নতুন চেয়ার নিয়ে আসবে তা নাকি সুকুমার আগে থেকেই বলে দিতে পারে। আর এই নিয়েই রোজ উত্তাল হয়ে ওঠে নিতাইয়ের চায়ের দোকান। কিছু লোক ইচ্ছে করেই এসব প্রসঙ্গ তুলে আনন্দ পায়। আর সুকুমার তার সমস্ত কাগুজে বিদ্যা উগড়ে দিয়ে বাহবা নিয়ে চলে।

সন্ধ্যায় যারা নিতাইয়ের দোকানে ভিড় জমায় তাদের হরেকরকমের আলোচনার মধ্যে হরি-হরের ব্যাপারটাই সাধারণত মুখ্য বিষয় হয়ে থাকে। আর হবে নাই বা কেন!  বাড়ি ঘরের চেহারায় কোন জৌলুস নেই তাদের বাড়িতে হঠাৎ করে পালসারের মতো অমন দামি গাড়ি থাকে কীভাবে সেটাই স্থানীয়দের মাথায় কিছুতেই ঢুকছে না! কেউ বলল, হয়তো ওরা ভালো চাকরী পেয়েছে। আবার কেউ বলল, তাহলে তো ওদের পাশের বাড়ির লোক ব্যাপারটা সবার আগেই  জানত। অথচ কেউ জানে না কেন! একজন আলোচক বলল হয়তো ছেলে ভীষণ ঝামেলা করায় নবীন শেষ পর্যন্ত জমি বেঁচতে বাধ্য হয়েছে। কিন্তু নবীনের এমন আহামরি জমি নেই যার থেকে সে কিছু বেঁচে ছেলের বাইকের বায়না মেটাবে। নবীন অমন ধাঁচের মানুষই নয়। এভাবেই আলোচকেরা একের পর এক যুক্তি খাড়া করতে লাগল। আর তার মধ্যেই বেশ জোরে দুটো কালো রঙের পালসার সামনের রাস্তা দিয়ে বেরিয়ে গেল। একটা হরির আর একটা হরেনের।

কিছুক্ষণের মধ্যেই বাইক দুটো একটু নির্জন জায়গা দেখে দাঁড়িয়ে পড়ে। হরি বলল- একবার ফোন লাগা। দেখ বাক্সগুলো এখন কতটা এসেছে। ওদের বলে দিবি আমরা না বললে যেন কাছাকাছির কোন ধাবায় অপেক্ষা করে। এবার চল লাইনটা একবার দেখে আসি।

বাইকদুটো আবার এগিয়ে চলল তবে বেশ দূরত্ব বজায় রেখে। নাকা চেকিং পার হয়ে যাওয়ার সময় দু’জনেই ভালো করে দেখে নিল ওদের আঁটুনিটা কতটা শক্ত। বোঝাই গেল আজ সবাই নেমন্তন্ন খেতে যাওয়ার আনন্দে বেশ ফুরফুরে মেজাজেই রয়েছে। কেউ কেউ দিব্বি রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে সিগারেট টেনে চলেছে। তবু ব্যাপারটা কতটা ঢিলেঢালা তা জানার জন্য হরি একবার বিমলকে ফোন করল। বিমল যা বলল তাহল ওরা দশটায় নয়  নয়টা নাগাদ চলে যাবে। আবার সাড়ে এগারটা নাগাদ নাকায় চলে আসবে। থানা থেকে মাত্র দু’জন পুলিশ পাঠিয়েছে। ফলে ঐ সময় রাস্তা একেবারে পরিষ্কার থাকবে।

হরি মোবাইলটা পকেটে ঢুকিয়ে বলল- শোন হরেন, তুই একবার ফোন করে বলে দে যে, ওরা যেন দশটার মধ্যেই নাকা চেকিং পার হয়ে যায়।

হরেন ফোন করে সব ব্যবস্থা পাকা করার পরে ওরা কিছুটা আঁধারে বাইক স্ট্যান্ড করে সিগারেট ধরায়। দূর থেকে মাঝে মাঝে দুটো আলোর ফুলকি ছাড়া তেমন কিছুই দেখা যাচ্ছে না। ওরা নিশ্চিন্ত মনে অন্ধকারে ধোঁয়ার রিং ছোঁড়ে। কে জানে সিগারেটের ধোঁয়ায় পাখিদের কোন অসুবিধা হয় কিনা। অথচ গাছের উপরে নিজের নিজের বাসায় বসে দু’একটা পাখি যেন একটু অস্থির হয়ে ওঠে! সামান্য ডানা ঝাপটানোর শব্দ হয়। হরেন বলে- আচ্ছা হরি, এই যে এতদিন ধরে হাজার হাজার অবলাকে নিয়ে বাক্সগুলো চলে যাচ্ছে কিন্তু তারা যাচ্ছেটা কোথায় বল তো?

হরি সিগারেটের শেষাংশটা ঘাসের মধ্যে ছুঁড়ে দিয়ে বলে- যাবে আর কোথায়। ওদের দৌড় তো সীমানার এপারেই। তাই কিছু যায় কোচবিহার আর কিছু বাক্স সোজা চলে যায় আসাম।

-ব্যস! তারপর বাক্সগুলো না হয় আবার যেখান থেকে এসেছিল সেখানে ফিরে যায়। কিন্তু ঐ অবলারা কি ওখানেই দাঁড়িয়ে থাকে? হরেন অতটা বোঝে না। তাই বোকার মতো জিজ্ঞাসা করে।

হরেনের অমন কথা শুনে হরি অন্ধকারে হেসে বলে- আমাদের নামটা জানিস তো?

-হ্যাঁ, জানবো না কেন! আমরা হলাম রুটম্যান।

-যাকগে, তাহলে তোর মনে আছে দেখছি। তাহলে আমাদের কাজ হল রাস্তার হালচাল আগে থেকেই ওদের জানিয়ে দেওয়া। এর বেশি আমাদের না জানলেও চলবে।

-আহা তুই মিছিমিছি রাগ করছিস কেন। আমরা দু’জনে এক সাথে কাজ করছি। তাই আমাদের মধ্যে কোন কথাই গোপন থাকাটা ঠিক নয়।

-তুই যা পেট পাতলা হরেন, তাই আবার কাউকে কথায় কথায় বলে না ফেলিস। কারণ তোর যমুনাকে কিন্তু বোকা ভাবিস না। ও তোর ব্যাপারে সব কিছু পুরো না জেনে এক পাও এগোবে না। আর তুইও কথার প্যাঁচে জানি ওর কাছে একদিন সবটাই বমি করে দিবি। তখন আমরা মুশকিলে পড়ে যাব। জানিস তো আমাদের কাজে টাকা যেমন আছে তেমনি ঝুক্কিও আছে। পেটে বোম মারলেও যেন কোন কথা না বেরিয়ে যায়। তাহলে কিন্তু একেবারে মামাবাড়িতে ঢুকিয়ে দেবে।

-না, না। আমি কি অত বোকা নাকি। এই যে তোর সাথে এতদিন ধরে রুটম্যানের কাজ করছি সেভাবে বাড়ির লোকেই জানে না। তাছাড়া আমি যমুনাকে কেনই বা বলতে যাব। হ্যাঁ, ওকে আমি ভালোবাসি বটে। কিন্তু ও তো মেয়েমানুষ। ওদের পেট আরো পাতলা হয়। হরেন হাসতে হাসতে বলে।

-ঠিক আছে। না বললেই ভালো। তবে বলি শোন, আমরা যেমন এখানকার রুটম্যানের কাজ করি তেমনি এই বাক্সগুলো থেকে অবলাদের নামালেই তা চলে যায় ওখানকার রুটম্যানদের দায়িত্বে। ওর আবার গভীর রাতে অবলাদের নিয়ে কারোর বাড়ির গোপন গোয়ালে রেখে আসে। তারপর সুযোগ বুঝে যদি অল্প অল্প করে অবলাদের হাঁকিয়ে নিয়ে পদ্মার পারে নিয়ে যেতে পারে তাহলে তো কেল্লা ফতে। বাকিটা অন্যেরা বুঝে নেয়। আশাকরি তোকে আর বোঝাতে হবে না।

একটু চুপ করে থেকে হরেন বলে- সে না হয় বুঝলাম। কিন্তু যার গোয়ালে রাখা হবে সে তার গোয়াল ভাড়া দেয় নাকি?

-সে তো অবশ্যই। এখানে কোন কাজই মুখ দেখে মাগনা হয় না। আমি যতদূর জানি যারা অবলাদের সীমানা পর্যন্ত পৌছে দিয়ে আসে তারা একেবারেই রাখালের মতোই যায়। যেন অন্য কেউ দেখলে মনে করবে অবলাদের চরাতে নিয়ে যাচ্ছে। আর এর বদলে ওরা পায় অবলা প্রতি একহাজার নগদ। দিনে যতবার পৌছে দেবে ততবারই পকেট গরম হয়ে যাবে। তুই বুঝতে পারছিস তো দিনে এক বা দু’হাজার ওদের কাছে কত বড় টাকা। তাই শুনেছি এখন ঐ সব গ্রামে এসব বাড়তি কাজ করার জন্য লোকের অভাব হয় না। এছাড়া যদি রক্ষী বাবুদের একবার পকেট গরম করে দিতে পারে তাহলে তো চিন্তাই থাকবে না! এবার চল আমরা ফুলবাড়িতে গিয়ে আমাদের জায়গায় দাঁড়াই। ওদের কিন্তু আসার সময় হয়ে গেল।

হরেনের কৌ্তুহল যেন মিটতেই চায় না! সে বুঝতে পারে না যে হরি এতসব জানে অথচ সে কেন জানে না! যদিও হরি অনেকদিন ধরেই এই লাইনের রুটম্যান। ইদানীং একা আর পেরে উঠছে না দেখেই সে হরেনকে নিয়েছে। আর হরেনেরও মাস ছয়েকের মধ্যেই একটা পালসার হয়ে গেছে। ভাবা যায়! এ তো মধুর ভান্ড!

 

(ক্রমশ)


0 কমেন্টস্:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন