কালিমাটির ঝুরোগল্প ১০৪ |
কবি
‘আজকাল যে যার মতন যায়, কেউ কাউকে এগিয়ে দেয় না।
মল্লিকবাড়ির ঢ্যামনা, বালিগঞ্জী জজ, অজয়পাড়ের বাউল, নকশাল ছেলেটা
অকস্মাৎ স্বাবলম্বী-
‘যে যার আঁধারে যায় একা।
আমি অত নই,
কী রকম শূন্য লাগ, ভয়’। (চির মিছিল, মণীন্দ্র গুপ্ত)
সবকিছুই কবিতা, অথবা এ জীবন শুধু সরলরেখা। সরলরেখা যার দুইদিকেই দুটো দরোজা, অনন্ত চলে যাওয়া দুই দিকেই। পৃথিবীর দিকে অথবা কবিতার দিকে – দরজা খোলাই শুধু এগিয়ে যাওয়া। অমুক দুই দরোজার ফাঁকটুকুতে, চৈত্রের রোদ জোৎস্নার খিলখিলি কেয়াফুলের সুবাস মাখন-মিছরির মধুর স্পর্শ প্রেমহীনের প্রেম আজ নয় কাল – এই দোনামোনায় ভেবেছিল বাদবাকি জীবনটা বেশ কেটেই যাবে তার। কিন্তু হল না। কবিতা দিন কবিতা রাত কবিতা বসন্ত, জন্ম কবিতা মৃত্যু কবিতা এই রকম অনেক দেখে দেখে অমুক বড় হয়েছে, কিন্তু সরলরেখারও যে কোনো বিধিবদ্ধ সতর্কীকরণ হয় তা জানা ছিল না। হাট বাজারের আঁট-ঘাট অলিগলি কানাগলি বিশ্রী গালাগালি কুকুরদের দলাদলি চাক্ষুস করেছিল বটে কিন্তু তবুও বুঝলে হে নাগরিক, নিজস্ব দুঃখের একটা মাতাল করা নেশা থাকে, যাতে আপামর চুন হলুদ লাগালেও ব্যথা যাবার নয়। মল্লিক বাড়ির ঢ্যামনা পৃথিবীর দরোজা দেখেছিল কিন্তু গিয়েছিল বোধহয় অন্যদিকে, অমুক তাও পারল না। অতি সহজ একটা দরোজা সেটাই পার হওয়া – পারল না, কেবল যে প্রথা বিরোধী কাজ করবে না বলে নয়, প্রথার স্রোতে গিয়েও মাঝপথে থমকেছে, ভেবেছে, সরলরেখা-জীবন এতই কি মিছিল-সর্বস্ব এতই অকস্মাৎ স্বাবলম্বী? নগরের মাঝে খোলা দরোজা, একরাশি আঁধারে কবি ডুবছে কবি ভাসছে কাব্য সকল নকল – কবিকে কে বঁচিয়ে রেখেছে? মডার্ন গেজেটস্? না বাচিক শিল্পী? স্টেজ ফাটিয়ে চিল চিৎকারের আহা উহু ওহো? কবিতার বই? কাব্য জ্বালিয়ে কে হাত সেঁকছে কে রুটি গড়ছে কে কে কে? কবি নামে কেউ ছিল এখন নেই নাকি ছিলই না কখনও- এই সব প্রশ্নে বিভোর অমুক সকাল থেকে রাত, রাত থেকে সকাল হেঁটে হেঁটে… নাগরিকগণ শুন সবে / মন কি লিখিয়া লবে / কেহ নাহি জানে আনকথা-
কবিতার জন্ম কবে হয়েছিল? লুইপাদ কাহ্নপাদ চসার রুমি ভরতচন্দ্র লরেন্স ফারলিঙ্গেটি উইলিয়াম বারোস দরোজা খুলে হাপিত্যেস দাঁড়িয়ে, কবির কবিতা পড়া হবে না, কাব্য পড়া হবে না। মালকোঁচা বাঁধা হয়ে গেছে, নাগরিক আর তবে দেরী না, কবির লাশ উলটে পড়ে আছে যেমন থাকুক অত দেখতে ফেকতে যেও না, তেমন বুঝলে লাশ ডিঙিয়ে চলে এসো কবিতা পড়া হবে, শুধু কবিতা, শুধু কবিতা…
0 কমেন্টস্:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন