কালিমাটি অনলাইন

দ্বাদশ বর্ষ / পঞ্চম সংখ্যা / ১২৫

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

দ্বাদশ বর্ষ / পঞ্চম সংখ্যা / ১২৫

বুধবার, ১৪ জুলাই, ২০২১

সম্রাট লস্কর

 

কালিমাটির ঝুরোগল্প ৯৮



গাণিতিক

 

আজ রাত। এটাই ফাইনাল। আর কোনো দ্বিধা নয়। অনেকবার পিছিয়ে এসেছে সে আগে। কিন্তু এবার সে মনস্থির করে ফেলেছে। অতএব, আজ রাতেই।

যে কোনো বিষয় নিয়ে বিশদে রিসার্চ করা তার স্বভাব। এক্ষেত্রেও তার ব্যতিক্রম হয় নি। পারফেকশনিস্ট হিসাবে শ্লাঘা বোধ করে সে, তার মৃত্যু কেন নিঁখুত হবে না? ইন্টারনেটে আত্মহনন নিয়ে শেষ কয়েক মাস কম গবেষণা সে কম করে নি। নানা ধরনের প্রশ্ন, সর্বজ্ঞ গুগল সহানুভূতিশীল হয়ে জানিয়েছে যে, চাইলেই সাহায্য  পাওয়া যাবে। একটা হেল্পলাইন নম্বর। সে হাসে নি, ব্যঙ্গ করে নি। উদ্দেশ্য তো ভালোই, শুধু তার সাহায্যের প্রয়োজন নেই। আর ভালো লাগছে না। বত্রিশ বছর বেঁচেছে সে। এই যথেষ্ট।

তার বাঁ দিকে একটা সিলিন্ডার। সেটায় ভর্তি কার্বন মনোক্সাইড গ্যাস। পাশে একটা বিশাল পলিথিন ব্যাগ। একটু বাদেই এই ঘরেই সে তৈরি করবে একটা এয়ারটাইট চেম্বার। তারপর সিলিন্ডারের নবটা ঘোরালেই…। বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা না করলে অবশ্য এইভাবে অর্ডার দিয়ে কার্বন মনোক্সাইডের সিলিন্ডার সে জোগাড় করতে পারত না। অনেক প্রশ্ন উঠত।

টেবিলে রাখা মোবাইলটা দু’বার আওয়াজ করে উঠল। মেসেজ এসেছে হোয়াটসঅ্যাপে। নাতাশা হতে পারে। মেয়েটার আসল নামও সে জানে না। টিন্ডারে আলাপ গত বছর। তারপর থেকে মোবাইল নাম্বার আদান-প্রদান, সেক্স চ্যাট, ন্যুডস। কোনোদিনই অবশ্য সামনা সামনি দেখা হয় নি। একটু বাদেই সে মরতে চলেছে। তবুও নাতাশার শরীরের জ্যামিতি তার চোখের সামনে চকিতে ভেসে এল। সে বুঝতে পারছিল যে সে দৃঢ় হচ্ছে, আরো দৃঢ়।

পরমুহূর্তেই মোবাইলটা বেজে উঠল। অচেনা নাম্বার। কে?

— স্যার, আমি আসিফ বলছি।

  আসিফ, পিজি ফোর্থ সেমেস্টারের ছাত্র। সিরিয়াস, ভালো ছেলে। কিন্তু এখন কেন?

— পরশু অনিবার্ণ স্যার ডিফারেন্সিয়াল টোপোলজির ইন্টারনাল নেবেন, কিন্তু বেশ কিছু প্রবলেম সল্‌ভ করতে পারছি না।  

—এটা আমায় কেন বলছ? আমি তো এটা পড়াই না। অনিবার্ণকে বল।

— স্যার এ.এসের ব্যবহার কেমন আপনি তো জানেনই। আপনি যদি একটু হেল্প করতেন। আপনাকে হোয়াটসঅ্যাপেও পাঠিয়েছি…

সে চুপ করে থাকল। তারপর ‘দেখছি’ বলে কলটা কেটে দিল। হোয়াটসঅ্যাপে আসিফ বেশ কয়েকটা প্রবলেম পাঠিয়েছে। তার অনিবার্ণের ওপর রাগ হল। একে তো ছেলে-মেয়েদের ঠিক করে বোঝাতে পারে না, তারপর এমন উগ্র ব্যবহার যে তারা যোগাযোগ করতেও ভয় পায়। কথা দিয়েছে অগত্যা প্রবলেমগুলো করে দিতেই হবে। সে টেবিলে বসল তার নোটবুক নিয়ে। ডিফারেন্সিয়াল টোপোলজি আপাতত ক্লাসে না পড়ালেও সে ভালোই বোঝে। কিন্তু এই প্রবলেমগুলো বেশ অন্যরকম। প্রথমটা করতেই মিনিট পনেরো লাগল। দ্বিতীয়টা শুরু করতে না করতেই আবার প্রথমটায় ফিরে গেল। না, এটা নিশ্চিত ভুল হয়েছে। আবার করতে হবে। সে ডিফারেন্সিয়াল টোপোলজিতে ডুব দিল। পাশে একটা গ্যাস সিলিন্ডার আর পলিথিন ব্যাগ অপেক্ষায় কখন তার অঙ্ক শেষ হবে। অঙ্ক আর শেষ হয় না। পাতার ওপর অনেক কাটাকুটি খেলা চলছে, চলেই যাচ্ছে…   

 

      

   


4 কমেন্টস্: