কালিমাটি অনলাইন

দ্বাদশ বর্ষ / পঞ্চম সংখ্যা / ১২৫

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

দ্বাদশ বর্ষ / পঞ্চম সংখ্যা / ১২৫

বুধবার, ১৪ জুলাই, ২০২১

দেবযানী বসু

 

কালিমাটির ঝুরোগল্প ৯৮



পল্বলের পুতুল


আশ্রমের উদ্দেশ্যে ভ্যানগাড়িটা চালু করে দিয়ে মানে বিদায় করে দিয়ে মণিশংকর প্যান্টের পকেটে হাত ঢোকালো। মুখের ঘাম মুছল রুমাল দিয়ে তারপর বাইক স্টার্ট দিল। উড়ন্ত শরীরে তপ্ত হাওয়ার ঝাপটা লাগছে। শবরপাড়ার পাশ দিয়ে ওর যাতায়াত। গতরাতের স্বপ্নে পান্ডাটা এসেছিল। আসলে পান্ডাটা মারা গিয়েছিল ত্রিশ বছর আগে। মণিপুরে থাকত তখন। হাসপাতালে  নিয়ে গিয়েছিল। সেখানকার পশু চিকিৎসক ফরমালিনে ভিজিয়ে রেখে আরো কতো রকম কায়দা করে ওটার একটা স্টাফড বডি তৈরি করে দিয়েছিল।  মণিশংকরের বৌয়ের স্তনদুটি শিম্পাঞ্জির স্তনের মতো চ্যাপ্টা ও ছোট। যেমন মণি শুনেছিল মিঃ দত্তের বৌয়ের খুব অসুবিধা হত দত্তের ছোট আকারের পেনিস   নিয়ে। তবু আমরা মধ্যবিত্তরা এসব অসুবিধা গায়ে মাখতে চাই না। পান্ডার বডিটা সংরক্ষণের অভাবে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে আস্তে আস্তে।

এখন কুন্তলার নামের আগে তালব্য শ অথবা মণি জুড়ে দেয় মাঝে মাঝে মণি  শংকর। এই কুন্তলা ওকে আদর করে পান্ডা বলেই ডাকে অবশ্য পান্ডাপর্ব না জেনেই। পান্ডাযুগলের মধ্যে মেয়েটিই মারা গিয়েছিল আগে। ছেলে পান্ডাটি অনেকদিন বেঁচেছিল। মেয়ে পান্ডাটির একবার গর্ভপাত করতে হয়েছিল। মণিশংকরের ছেলে এখন বিদেশে থাকে। আর মৌপিয়া? মণি আলনায় মৌপিয়ার শাড়ি ঝুলিয়ে রাখে মৃত্যুর দশ বছর পরও। ফুলদানিতে ফুল রাখে রোজ যেমন মৌপিয়া করত। আর খাটের উপর মৌপিয়ার বাজানো বেহালাটা তোয়ালে দিয়ে ঢাকা থাকে। তার মাজে। ওর নামে চটি কেনে নতুন নতুন। কাজের মেয়েরা চটি  এদিক ওদিক করলে রেগে যায়। পুরনো পোস্টকার্ডে ফুটো করে মৌপিয়ার ছবি বসিয়ে বাঁধিয়ে রেখেছে।

কুন্তলাকে সে এসব দেখাতে চায় না। এমনকি ফেসবুকের প্রোফাইলে বৌকে জীবন্ত প্রতিপন্ন করে রাখে। পড়তেই পারে। মেয়েরা যখন তখন বুকে এসে ঝাঁপিয়ে পড়ে মণিশংকরের। আকর্ষণীয় বিপত্নীক কিনা। বুক থেকে কাঁধে চড়তে  আর কতোক্ষণ! তবে প্রেসিডেন্সি কলেজের একদা ছাত্রী কুন্তলার আসতে  দেরি  আছে। লন্ডন দূর বটেক।

সেই গতরাতের স্বপ্নটা -- কুন্তলার প্রসব বেদনা উঠেছে। গর্ভবতীর পেট ফোলা না থাকলেও চলে, স্বপ্নে এটা বোঝা গেল। কুন্তলা গা মোচড়াচ্ছে। আস্তে আস্তে  কুন্তলা নীল রঙের সাপ হয়ে গেল। সাপের পেট সিজার করে বাচ্চা বার করছে মণি। অনেক বাচ্চা! বাচ্চাদের হাতে তুলে নিতেই তারা পল্বলের রোবট পুতুল  হয়ে যাচ্ছে।


0 কমেন্টস্:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন