কালিমাটি অনলাইন

দ্বাদশ বর্ষ / পঞ্চম সংখ্যা / ১২৫

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

দ্বাদশ বর্ষ / পঞ্চম সংখ্যা / ১২৫

শুক্রবার, ১৪ মে, ২০২১

গাজী নিষাদ

 

কবিতার কালিমাটি ১০৬


সংশপ্তক

 

প্রায় প্রতিদিনই ভাবি, একটা নতুন জীবন শুরু করবো আমি

আমার ভিতরে থাকা সেই আদিম কোষগুলির কথা আর শুনবো না

যা আমি চাই না, তা চায় আমার শরীর

যা আমি চাই না, তা চায় আমার শক্তি

 

এক জাতের মথ আছে, মৃত্যুর আগে রঙিন হয়ে উঠে

ওইসব রঙিন মথেদের বাসাতে কারুকাজ করা আছে আমাদের সমাধিলিপি

যেখানে সবুজ প্রজাপতির ঠোঁটে আঠালো মধুর ভিতরে অজস্র ভ্রুণ খেলা করে

এখানে আমার রঙ প্রতিটি মৃত্যুর আগে প্রগাঢ় কালচে

 

আমার মৃত্যুর কথা ছিলো পরিযায়ী পাখিদের দেশে-

এক ব্যাঙ্গমীর সংসারে

কিন্তু ভাঙ্গা পাখা নিয়ে আমি তার আগেই খসে পড়ি আমার অন্ধকার কূপের গভীর অতলে

যেখানে শত শত ব্যাঙ আমার মৃতদেহ সৎকার করে

 

আমার প্রতিটি জন্মে আমি জেগে উঠি এক নবজাত সূর্যের সকালে

যেখানে  বালুকাবেলায় আমার এক পাশে শীতল ছায়ার মতো স্থির দাঁড়িয়ে থাকে সারি সারি উঁচু পাহাড়

আর অন্য পাশ দিয়ে বয়ে যায় সমুদ্রের নিঃসীম নীল কোলাহল

পৃথিবীর আশ্চর্য বালুকাবেলায় আমি প্রথম চোখ মেলে দেখি - মাথার উপরে উড়ছে ঝাঁকে ঝাঁকে আলবার্ট্রস

 

আমি জেগে উঠি যখন আমার চোখে অসহনীয় হয়ে আসে কমল রোদ

আর দিগন্তের দিকে ছুটে যাই খাদ্যের সন্ধানে 

দ্বীপের নরম গুল্মলতার রসে যখন প্রায় পরিপূর্ণ হয় আমার পাকস্থলী,

আমি উচ্ছিষ্ট বীজগুলি বাছাই করি আর রোপণ করতে শুরু করি মাটিতে

 

প্রতিবার আমার কাজ সম্পূর্ণ হওয়ার আগেই একটা সাপ এসে আমাকে কেটে যায়

আমার নাভিমূলে ও দংশন করে, নিঃসরণ করে ওর সমস্ত বিষ,

আমি প্রথমত আড়ষ্ট হই এবং চেতনা হারাই, তারপর সম্মোহিতের মতো ওর পেছন পেছন যেতে থাকি আঁকাবাঁকা পথে

ওর নীল বিষে - ওরই মগজে কামড়ে,

যা এমুহূর্তে আমার শরীরের প্রতিটি ধমনিতে প্রবাহিত হচ্ছে-

আমি রাস্তা বদলাচ্ছি

 

শিব সাক্ষী

 

আমি জানি ওরা কেউ থাকবে না

এই যে এত কথা, সংযোগ ও দূরত্ব

ওরা কেউ থাকবে না

আমি জানি, ওরা সকলেই স্থানীয় ভ্রমর

আগন্তুক পাপড়ির ভিতরেও যারা মধু খুঁজে দেখে

আর কখনো ক্ষণিকের পানের পরে, যারা হতাশ হয়ে যায়

আমি জানি ওরা কেউ থাকবে না

ওরা শুধু মধু পান করতে চায়

মধুতে যে বিষ থাকে, সেই বিষকে ওরা মেনে নিতে চায় না

আমি জানি ওরা কেউই থাকবে না

ওরা ফুলের গহনা গলায় পরে  

ফুলের স্খলিত হওয়ার ইতিহাস জানে না

ওরা বিষমধুকে ধারণ করে

শুধু মধু পানের আশায়

যখনই ওরা অস্তিত্ব টের পায় বিষের

একমুহূর্তও বিলম্ব করে না

 

আমি জানি, ওরা কেউই থাকবে না

শীতের বাতাসে বিতারিত পাতার প্রস্থানের মতো-

ওরা সকলেই দূরে সরে যাবে

 

রাই প্রেসিডেন্সী

 

ওই কোমল মাটি খুঁড়ে অগাধ জল পান শেষে আমার ঘুমিয়ে পড়তে ইচ্ছা করে

গভীর ক্লান্তিতে

 

কিন্তু ওই মাটি আমাকে নেবে না

ওই জল আমার জন্যে উথলে উঠবে না

ওই প্রবল ভূমি আমার প্রশান্ত নিদ্রা হবে না

 

যদি বৃষ্টি না আসে

 

আমি এমন কোনো আকাশ খুঁজে পেলাম না যার দৈর্ঘ্য আমার ডানার চেয়ে বড়ো।

এমন কোনো ভূমিতে আমি দাঁড়াতে পারলাম না যার ভার আমার চেয়ে বেশি।

আমাকে পোড়াতে গিয়ে শ্মশান নিজেই পুড়ে ছারখার হয়ে গেলো।

যারা কাঁধে ক'রে আমার শব বয়ে নিয়ে এসেছিলো জয় শ্রীরাম ধ্বনি দিতে দিতে।

তারা পালিয়ে গেলো দিগবিদিকে।

অগলিত শরীরে অজস্র নক্ষত্রের নিচে শুয়ে রইলাম আমি অছিন্নমস্তা।

 

দূর থেকে দেখি চেয়ে নিজেকে। চোখ খুলে ঘুমিয়ে আছে আমার প্রিয়তমার পিতা।

রাত্রি গভীর হ'লে নিজেই নিজেকে ডাকি, আমার মৃতদেহ শোনে না আমার কথা।

কা'র প্রতীক্ষায় চিরকাল পড়ে থাকে দেহ,

কে এসে জ্বালাবে চিতা।

 

এ পথে আসে না কেউ, এখানে বৃষ্টি নামে না কখনো।

না যদি জ্বালাও তুমি আগুন একাকী, না করো নিজেই তুমি নিজের মুখাগ্নি।

 

 

 


2 কমেন্টস্: