কালিমাটি অনলাইন

দ্বাদশ বর্ষ / পঞ্চম সংখ্যা / ১২৫

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

দ্বাদশ বর্ষ / পঞ্চম সংখ্যা / ১২৫

শুক্রবার, ১৪ মে, ২০২১

অপরাহ্ণ সুসমিতো

 

কালিমাটির ঝুরোগল্প ৯৬


স্ক্রু

এই সময়টায় যে যা বলে বিশ্বাস করতে ভালো লাগে। সেদিন একজন লিখলেন যে প্রচুর ভিটামিন-সি খেতে হবে। চনমনে বিকেল থেকে ফিরে আসছিলাম বাসায়। অবশ্য ফেরার পথে কয়েকটি কমলালেবু কিনে এনেছি। গৃহবন্দি হতে যাব এমন সময় খেয়াল করলাম, রাস্তার পাশে একটা বাচ্চা মেয়ে কী যেন খুঁজছে মনোযোগ দিয়ে।

এই মেয়েটাকে আমি চিনি। ওর বাবা মাকেও আমি চিনি। আমার প্রতিবেশী। ওর  বয়স বড়জোড় ১২/১৩ হবে। হাঁটার গতি স্লো করে জানতে চাইলাম;

: পামেলা কী খুঁজছ তুমি? আমি কি তোমাকে সাহায্য করতে পারি?

মেয়েটা কাঁদো কাঁদো গলায় বলল, অবশ্যই পারো। ওর বাবার মাথার একটা স্ক্রু  হারিয়ে ফেলেছে, খুঁজে পাচ্ছে না। আর এই স্ক্রু হারাবার ফলে এখনকার এই গৃহবন্দি অবস্থায় বাবা সারাক্ষণ ওর মায়ের সাথে ঝগড়া করছে।

আমি মহা উৎসাহে স্ক্রু খুঁজতে নেমে পড়লাম।

ছোট্ট একটা স্ক্রু, পাচ্ছি না। দূরে তাকিয়ে দেখি একটা পুলিশের গাড়ি এদিকে আসছে। পুলিশের গাড়ি আমাদের দেখে গাড়ি থামিয়ে জানালার কাচ নামিয়ে জানতে চাইল আমরা কী সন্ধান করছি

পুলিশকে জানানোর পর পুলিশ গম্ভীর মুখে জানালা দিয়ে একটা চুম্বক ছুঁড়ে দিলো। যাক পুলিশের কাছে তাহলে চুম্বকও থাকে...

আর বেশিক্ষণ আমাদের খুঁজতে হলো না। চুম্বকের সাহায্যে মাথার স্ক্রুটা আবিস্কার করে ফেললাম।

পকেট থেকে জীবাণুনাশক তরল বের করে ভালো করে স্ক্রুটাকে মাখিয়ে একটা   কাগজে মুড়ে ওদের বাসায় এলাম। দরজার কাছেই বাসার ভেতর থেকে ভেসে আসছিল তীব্র ঝগড়া শব্দ। কান গরম হয়ে যাচ্ছে আমার। সবচে’ ভদ্রস্থ  গালাগালিটা হলো এরকম;

পামেলার বাবা: আজ থেকে তোমাকে আমি করোনা বলে ডাকব;

পামেলার মা: তোমাকে আমি ডাবল করোনা বলে ডাকব;

সাহস করে কলিং বেল চাপলাম। পামেলার মা এসে দরজা খুলল। চোখ কান্না কান্না। প্রতিবেশী বলে আমাকে ওরা আগেই চিনত। বোকা বোকা মুখ করে বিনয়ের সাথে বললাম;

: তোমার বরের মাথার স্ক্রু’টা খুঁজে পেয়েছি।

ভদ্রমহিলা রাগে গরগর করতে করতে আমার হাত থেকে ছোট্ট স্ক্রুটা নিয়ে স্বামীর মাথায় স্ক্রু-ড্রাইভার দিয়ে সুন্দর করে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে লাগিয়ে দিলেন। মুহূর্তে ওদের ঝগড়া হাওয়া। হাসিমুখে ৬ ফিট দূরে দাঁড়িয়ে আমার দিকে তাকিয়ে থাকলেন।

: তোমাদের এই ভালো মুহূর্তটুকুন দেখে একটা গান শোনাতে ইচ্ছা করছে। অনুমতি দিলে শোনাতে পারি। তবে আমার গলা খুবই বেসুরো।

ওরা অনুমতি দিতেই আমি গলা ছেড়ে শুরু করলাম:

ওরে মাথা তো একটা আজিব কারখানা

ঘাড়ের থেইকা নাইমা গেলে কাজ হবে না হবে না

ঘাড়ের উপর মাথার পরশ রবে না রবে না

ও একবার যদি স্ক্রু যায় খুলে

গেয়ান বুদ্ধি ঢিলা হবে ষোল আনা

ভাইরে অপরাহ্ণ কয় স্ক্রু টাইট রাখো ষোল আনা

একসময় আমার গান থামল। মিষ্টি মেয়ে পামেলা খুশি হয়ে আমাকে একটা সাবান উপহার দিলো।বাসায় এসে সেই সাবান দিয়ে ২১ সেকেন্ড ভালো করে হাত ধুয়েই লিখতে বসলাম।

 


2 কমেন্টস্: