শিরোনামহীন তিনটি
কবিতা
মৃতদের অভিমান থাকে না,
থাকতে নেই।
আমি একাধারে মৃত এবং জীবিত।
আমার দু’চোখ টলটলে নদী; কিন্তু পাড়
উপচায় না। নিজেকে দু ভাগ করে
আলাপ করি
পরস্পর; জীবনের বহমানতার কথা বলি, বলি
‘তোমার তো খাবারের প্রয়োজন
নেই আর, বিলাসবহুল বাড়িরও
দরকার নেই।’
টেবিলে থরে থরে
সাজানো খাবার, বিশাল
বাড়ির চাকচিক্য আর মেকি হাসি
হৃদয় ছোঁয় না;
জিজ্ঞেস করি, ‘তুমি কেমন রয়েছো?’ তুমি
নিরুত্তর থাকো। আমি বলি,
‘আমি ভালো নেই। আহা, দু’প্যাকেট তাস যদি আনতাম,
তোমার সাথে জমতো খেলা।’
তুমি বললে, ‘তাতে কি, চলো না হয়
মনে মনে খেলি, মানসাঙ্কের মতো হিসেব কষি
মনের ভিতর। অনন্তকাল ধরে
খেলে যাই।’
(২)
ফেলে আসা দূর সমুদ্রের তটভূমি;
ওখান থেকে বয়ে আসা হঠাৎ দমকা
বাতাস; সন্তর্পণে ফেলা বহুকালের
জমানো, ভুলে যাওয়া দীর্ঘশ্বাস;
পেছন ফিরে চাইলাম; আমার ভঙ্গুর,
জীর্ণ হাড়ের ভেতর জাগতে থাকে
অবাক শিহরণ। আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে
থাকা পশমের নরম চাদর আর
যাবতীয় শীতের পোষাক, তাও
সবকিছু ভেদ করে বুকের গহনে
ছুঁয়ে দেয় কারুর শীতল হাত।
মাঝরাত পার করে ঘুমহীন
চোখ, অশ্রু টলমল; ভেসে যায়
সমস্ত ব্যথা, শোক, ভেসে যায় সকল মনস্তাপ, মান অভিমান,
অনুভূতির তীব্র অবদমন আর প্রতিজ্ঞা অটল।
ভেঙে যায় দুয়ারের সকল বদ্ধ আগল।
(৩)
কথা বলি অবিরত জল, হাওয়া,
মাটির সাথে। নিদ্রাহীন কত রাত
কেটে যায় এই করে। শূন্যতার
হাহাকারে অনুরণিত নিকষ অতল
অন্ধকার। যারা ছিল কোনো এক
সময়, এখন অদৃশ্য আকৃতিহীন তারা,
মনে মনে গড়ি তাদের সেই জল,
হাওয়া আর মাটি থেকে, যাদের সাথে আজ
তারা মিশে আছে। শ্রাবণের নবধারার
মতন ঘুম নেমে আসুক দু’চোখ জুড়ে;
ভুলিয়ে দিক চিরবিদায়ের স্মৃতি,
থাকবে না বেদনা কোনো, যেন কেউ
হারিয়ে যায়নি কখনো; চেনা সব
গলিতে ঘুরে বেড়াবো, বুক ভরে
নিঃশ্বাস নেবো আর বাতাসে পাবো
প্রিয় মানুষের প্রিয়তম ঘ্রাণ;
আহা, পৃথিবীর সমস্ত সুখের
এখানেই বুঝি বাস, যেখানে সকল
স্মৃতি আর কল্পনা একসাথে মিলে
থাকে। বুকের ভিতর এক অবোধ্য
আকুতি কেবল, বাকি সব থমকে আছে,
নীরব, নিশ্চুপ হয়ে; আঁধারের
পর্দা চিরে জ্যোতির্ময় এক অতি
আশ্চর্য পথের চিহ্ন ভেসে উঠে, যেখানে
মিলতে পারি পিতা আর পিতামহী
এবং আর যারা চলে গেছে তাদের
সাথে, এক নিবিড়, উষ্ণ আলিঙ্গনে।
আমি একাধারে মৃত এবং জীবিত...! হাজারো শব্দের মধ্যে তুলে নিলাম শব্দদ্বয়। কবির জন্য শুভ কামনা
উত্তরমুছুনঅনেক ধন্যবাদ।
মুছুনএই মন্তব্যটি লেখক দ্বারা সরানো হয়েছে।
উত্তরমুছুন
উত্তরমুছুনতিনটি কবিতাই নিজের সঙ্গে নিজের সংলাপ।পাঠ শেষেও কোথাও একটা বেদনার সুরটি পাঠকের মনে অনুরণনের রেশ রেখে দেয়।
অনেক ধন্যবাদ সুন্দর মন্তব্যের জন্য।
মুছুন