কালিমাটি অনলাইন

দ্বাদশ বর্ষ / পঞ্চম সংখ্যা / ১২৫

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

দ্বাদশ বর্ষ / পঞ্চম সংখ্যা / ১২৫

বুধবার, ১ মে, ২০১৯

জ্যোতির্ময় মুখার্জি




একটা ফাটাফাটি কবিতা লিখেছি

এমনই মনে হচ্ছে আমার। বিকেলে পেস্টাব বা সন্ধ্যায়। বা কাল। বা অন্য কোনদিন। বা পত্রিকা থেকে ফিরে এসে

দারুণ কিছু একটা লিখে ফেলব, এই অহংকারে আমার আর কিছু লেখা হল না। বলেছিল, জয়িতা। জয়িতা ব‍্যানার্জি গোস্বামী। দারুণ লেখে। খিচুড়ি-স্কুলেখাবার  নিতে আসা গাভিন বউটির কথাও শুনেছিলাম ওর মুখে, ওর কবিতায়

মাঝে মাঝে এমনই হয়, নিজের লেখা পড়ে নিজেকেই আর চিনতে পারি না। ভাবি, এটা কি আমি লিখেছি! লিখলাম কী করে! বাহ্ রে আমি

রাতে আর ঘুম আসেনি। সকাল থেকে বউকে সাড়ে সাতবার বললাম কথাটা। ও তো ঠোঁট উল্টে, হাত উল্টে, ফিরে যাওয়া শরীর উল্টে বলে দিল, তোমার কবিতা রাখো তো তোমার কাছে

আর আমি ভাবছি, লিখে ফেলা কবিতাটি কি আর আমার?


আমাকে নিয়ে এক লাইন লিখে যান

আবেদনটা এমনই ছিল। আর আমি দেখছিলাম আর ভাবছিলাম সেই মেয়েটিকে বা ছেলেটিকে, ফেস থেকে বুকে। প্রোফাইলে ঢুকে ঢুকে ছবি, লেখা, আরও যা কিছু হাবিজাবি জমিয়ে রেখেছে ওরা, আমার মতো। দেখছিলাম আর ভাবছিলাম, কেমন ও

মানুষ দেখা এবং কিছু রেখা আঁকা, এ আমার পুরনো অভ‍্যাস। রোগ। অভ‍্যাস থেকে রোগে পরিণত হল, যখন আমি রহড়া রামকৃষ্ণ মিশনে। ফাটাফাটি ডিস্ট্রিক্ট লাইব্রেরিতে হিউম্যান সাইকোলজি পড়ে পড়ে এবং দেখছিলাম ও ভাবছিলাম ওই মেয়েটি কেমন এবং ছেলেটি

চেনা হলে অসুবিধা নেই, আসলে বড় সমস্যা। অচেনা হলে তো নো চিন্তা, কিন্তু তখনই বেশি চিন্তিত আমি। আমাকে নিয়ে। কী লিখি

একটা ফুল এবং তার কিছু পাপড়ি থাকে, ছাড়াতে ছাড়াতে ফুলটা যখন একটা পাপড়ি হয়ে গেল, জানলাম তখনই

আমি মোটেই আমার মতো নই


তুমি তো দেখছি একটা টেবিল দেখলেও কবিতা লিখে দিচ্ছ

বলল আকাশ (সাহা), আর হাসছি আর ভাবছি, তা হয়তো আমি পারি এখন। কারণ আমি জেনে গেছি, কবিতা আসলে আর কিছুই নয়, নিজের সঙ্গে বলা কথা লেখা। কিন্তু, চেষ্টা করলেও আর আমি টেবিলে ঝুঁকে কবিতা লিখতে পারব না

আমাদের জন্ম-সময়টা বড় অদ্ভুত। ধরাধরি থেকে টেপিটেপি যুগের মধ‍্যবর্তী প্রজন্ম আমরা। নেইফোন থেকে আইফোনের সাক্ষী হতে হতে স্মৃতি হয়ে গেল আমাদের ছেলেবেলা। মনে হয়, সে যেন অন্য কোনও দেশ, অন্য কেউ

আমি নই, আমি নেই কোথাও


খবরটা শুনেছিলাম

কাল রাতেই। ওদের দেশে নাকি মেঘ করেছে‌‌। বৃষ্টি নামতেই দাঁতে দাঁত চেপে ধরল। মশারি ছিঁড়ে লণ্ডভণ্ড। ঝাঁক ঝাঁক মশা

তবু কিছুতেই মেঘবালিকাশুনবে না ওরা। রূপমকে একটা চাকরি দিন’, বলছিল ওরা

ওরা মানে, যারা পেট বেঁধে শুয়ে আছে ফুটপাথে

আর আমি দেখছিলাম এসব। আর ভাবছিলাম, কী বোকা!

খবরটা যদিও নতুন কিছু নয়, সাতাশ দিনের পুরনো। নতুন যেটা, সেটা হল আমি ওদের নিয়ে কবিতা লিখছি। পেট ভরে, পিঠে বালিশ

আর ভাবছি, দেওয়ালে পিঠ ঠেকলেই কেন পেট বেঁধে নেমে আসে সব রাস্তায়

কারো কারো তবু সাজানো মঞ্চ থাকে। কারো কারো পর্দার আড়াল। ওদের শুধু একটা আকাশ

যেখানে মেঘ করে, বৃষ্টি নামে না









0 কমেন্টস্:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন