আত্মজা
সতীচ্ছদ ছিঁড়ে গেছে, বিশ্বাস ভেঙেছ আমার
যন্ত্রণার গূঢ় উৎস থেকে ঝরে রক্ত প্লাবন--
নতজানু হয়ে তাই ভিক্ষা মাগি সিঁদুর-সোহাগ,
কেড়ে নিয়ে লাজবস্ত্র -- ঢাকো এই কলঙ্কের দাগ!
আমার বিধাতা তুমি, ওই পায়ে আমার ভূবন,
তোমার করুণা চেয়ে মাথা কোটে যত আত্মজন--
স্বীকৃতি স্বাক্ষর দিয়ে ধন্য করো ওগো দয়াময়,
ধ্বস্ত আমি, ব্যর্থ আমি, এইটুকু শেষ আশ্রয়;
সম্প্রদত্তা হয়ে আছি, তবুও তো বাকি সপ্তপদী--
সর্বনাশ সমুৎপন্ন, বরমাল্য নাই দাও যদি!
ছেঁড়া সতীচ্ছদ থেকে ঊরু রক্ত প্লাবন,
ছিন্নভিন্ন দুই ঠোঁট, দুই স্তনে নখর আক্রোশ--
কালশিটে পড়া পিঠ, বিচূর্ণ কাচের চুড়ির
দাগ নিয়ে মণিবন্ধে হয়ে আছি মৃতবৎ স্থির!
পালিয়ে গিয়েছ তুমি, জানি তুমি বিবাহিত আজ--
মুক্ত তুমি, নিরাপদ, দ্যুতিময় তোমার সমাজ;
এ দায় আমার একা, আমার একার অপরাধ--
আমারি এ ঊরুমূলে রেখে গেছ সকল প্রমাদ।
ও মা, তুমি বলেছিলে বাকি আছে শেষ কন্যাদায়--
খুঁজে পেতে সৎপাত্রে পাত্রস্থ করবে আমায়।
মনুস্মৃতি মেনে আমি ছিলাম তো ভালো মেয়ে বেশ,
হাঁটি হাঁটি পা পা মেনে গেছি সকল নির্দেশ--
প্রশ্নহীন আনুগত্যে অন্ধচোখে ধরেছি আঁচল,
তুমিই মা বলেছিলে সে আমার পূণ্যের ফল;
আজ মা গো বেশ্যা বলে রাতদিন ছুঁড়ে দাও ঘৃণা--
সুচারু সীবনে ভাব সতীচ্ছদ জোড়া যাবে কি না!
কুৎসিত, প্রতিবন্ধী, যেন মৃত মাংসের স্তূপ--
মা তোমার শুচি ঘরে ক্ষত ঠোঁটে থাকি যেন চুপ।
তবে আর কাঁদি কেন? কি এমন অপরাধ তার?
অরক্ষণীয়া জেনে শুধু সুযোগের সদ্ব্যবহার
করে গেছে, এই মাত্র দোষ অনায়াসে করে দেব ক্ষমা--
সহস্রগুণে শঠ, জন্মদাত্রী, যে আমার মা!
মানভয়ে অনায়াসে অন্ধকারে ঠেলেছ আমায়,
গর্ভঋণ চুকে গেছে, ঘুচে গেছে সবটুকু দায়;
বড় মূল্যে স্বাধিকার অর্জন করেছি স্বাধীনা--
ছেঁড়া সতীচ্ছদ নিয়ে আজ আমি আম্র আত্মজা।
মুহূর্ত-নির্যাস
নিংড়ে দাও, নিজেকে নিংড়ে দাও,
যেমন আঙুর নিংড়ে বেরিয়ে আসে স্বাদু রস--
শুধু ঘাম নয়,
শুধু চোখের জল নয়,
নিংড়ে দাও নিজের মেধা,
নিজের আশা,
দবদবে আবেগ,
জ্যান্ত হৃৎপিণ্ড নিংড়ানো তাজা রক্ত--
উষ্ণ নিবিড়তায় লালন কর তোমার বিশ্বাস।
দেখো
একদিন ঠিক
মাটির গর্ভ চিরে ফুল ফুটবে!
এই মুহূর্তটার কেশর চেপে রেখো শক্ত হাতে--
সে ঘাড় বাঁকাবে,
লাফাবে,
ক্ষুর ঠুকবে অশান্ত পায়ে;
দিগন্তের দিকে চেয়ে আনমনা হলে
পস্তাবে!
ভবিষ্যৎ অনেক দূর--
এই মুহূর্তটাকে দেখে রাখো,
ভবিষ্যতে এই তোমাকে দেখবে।
জানো তো,
পাহাড়ে অন্যমনস্কতার অর্থ
মৃত্যু!
আহির ভৈরব
বেজে ওঠে আহির ভৈরব!
কাক ডাকে,
ভোর হয়,
চোখ মেলে বিশ্ব নিখিল--
শিশিরেরা আড় ভাঙে ঘাসের পাতায়।
সরগমে সাধি নি তো সুর--
তবুও অরূপ
হাওয়ায় হাওয়ায় বাজে অশ্রুত মীড়।
আহিরিনী রাধা!
সরগমে সুর হয় ভুল,
আলোর আবির মেখে
থরোথরো ঝরে পরে
অকাল বকুল।
পাতলা কুয়াশা
দোল খায় নরম আলোয়,
ভিজে মাটি, মাটির ভিতর
অস্থির, চঞ্চল জায়মান যত অঙ্কুর--
জীবনের অন্তরায়
এও এক ভৈরবী সুর।
ঋক্ মন্ত্রেই আবাহন,
জবাকুসুমসঙ্কাশং!
নগ্নবক্ষ নিলাজ ঊষসী
নীবীবন্ধ খুলে ফেলে
ছুঁড়ে দেয় লাজবস্ত্রখানি।
রাত্রির বাসর,
শ্যামবক্ষে রাধার রমণ--
আলো আর অন্ধকারে
আদিম সঙ্গম!
বেজে ওঠে আহির ভৈরব!
আলোর ঔরস
রাত্রির গর্ভ চিরে
জন্ম দেয় নতুন সকাল।
ঊষার আহ্বান,
শালিকের চিরল ডাকে
বেজে ওঠে জীবনের তান।
0 কমেন্টস্:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন