ঠিকানা
এমন নিঃস্ব রাতের কান্না শুনিনি আগে
তারকারা জলভরা চোখে তাকিয়ে আছে
মাটির পৃথিবীর দিকে অপলক চোখে
উজ্জ্বল আলো আর নেই তাদের
ঝাপসা হয়ে গেছে সারাটা আকাশ
পৃথিবীও জেগে আছে হুতাশন বুকে
এমন বিষণ্ন রাত দেখিনি কখনও
রক্তস্রোত আর ক্রন্দনের আবহে
শ্যাওলার মত ভাসছে মানুষ পথহীন
কোন দিগন্তের ওপারে যাবে স্থায়ী আবাসে
রাতও কাঁদে বিষণ্ন প্রহর কাঁদে অবিরাম
ঠিকানাহীন ঠিকানা কাঁদে আকাশ তলে
প্রান্তর
কত দেরি হবে জানিনা হিমশৈলের মত শীতল
শেষরাতের অন্ধকার সীমান্ত পেরিয়ে কখন
আলোর দরোজা খুলে দেবে। আকাশ উদ্ভ্রান্ত হয়ে
বিছিয়ে দেবে নক্ষত্রের বুটি আঁকা উড়ন্ত উড়না
পুবে পশ্চিমে, চূর্ণ চূর্ণ আলোকণা
সারাটা শরীরে
মোলায়েম হাতে বিছিয়ে দেবে, জানিনা।
এই যে ত্রিকালজ্ঞ প্রান্তিক প্রান্তর এখানে আলোর
উদ্ভাষকালে ক্লান্ত দেহে চেনাজানা বিবশদেহী
অগুনতি জন শেষ ঘুমের প্রশান্তির চাদরে
ছড়িয়েছে নিজেদের। শুয়ে আছে লাশ সারি সারি
কাতারে কাতারে বিষাদিত বেদনায়। প্রান্তরে
প্রান্তরে শুধু চেনাশোনা লাশ।
তবু আনন্দ ছিলো থৈ অথৈ, কৃষ্ণ বেদনাও ছিলো
অগ্নিস্রাবী লাভাস্রোতের অতল হাহাকারে।
রুপশালি ধানের প্রান্তরে শুয়েছিলো ক্ষুধার
আগুনে পোড়া লাশ। যেদিকে তাকাই প্রাণ নেই
গান নেই জীবনের ছোঁয়াটুকু নেই। শূন্য শুধু
মহাশূন্যে কেঁদে ফেরে আকুল হৃদয়ে।
আজ বুকের অন্দরে নিঃসঙ্গ প্রাণ এক হাহাকারের
প্রান্তরে রক্তস্রোতে হাবুডুবু খায়।
উত্তরকাল
অরণ্যের মাতাল সবুজে ঝড় ওঠে
গায়ক পাখিদের পালক ঝরে পড়ে
আকাশ এখন ঘনঘোর ধোঁয়াটে
গঞ্জের ঘাটে সারি সারি শূন্য নৌকো
ওপারে কি আছে জানা মুসকিল
প্রান্তিক জনেরা দরজায় দিলো খিল
বৃষ্টি জানেনা সময় অসময় ঝমঝম
হেমন্তের এই বিকেলে চরাচরে
কুয়াশা নেই কেবল আকাশের চোখে
ঝরঝর ধারা ব্যাকুলতায় ঝরে পড়ে
এখানে জুরি নদীর মরাস্রোতে হায়
শূন্যতা শুধু সারাদিন হাহাকার করে
একদিন সব নদী শুকিয়ে যাবে নিশ্চয়
একদিন সব ভূমি হারাবে শ্যামলিমা
ফ্যাকাসে আকাশ তলে সূর্যের আক্রোশ
শুষে নেবে নির্বিচারে মৃত্তিকার প্রাণরস
নীলগ্রহ অবলীলায় ধু ধু প্রান্তর মরুভূমি
রস-প্রাণহীন পৃথিবী ঝরবে মত্ত বিষাদে
0 কমেন্টস্:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন