আলো
সেদিন মাঝগঙ্গায় একটা তেতলা বাড়ির ছাদে বাঁকা সিঁড়িকে গড়িয়ে যেতে দেখলাম... শীতল ভোরের উষ্ণ গঙ্গা তখন রোদের আদরে পুড়ছিল। তুমি জানো, মানুষ কখন পুড়তে ভালোবাসে গঙ্গাজলের মত? তুমি জানো, কেন আমার হাতব্যাগটায় বাতিল আধুলি... কেয়ারী করা পাঁচ-দশের কয়েন জমানো থাকে? প্রতি চাঁদরাতে ওরা সাঁতরে ওঠে নুনজল। ওরা এই আমিকে, ওই তুমিকে, বছরে বছরে বাতিল হতে... জনে জনে খুচরো হতে দেখেছে। তুমি বলছো খুচরো করো... ঘড়ায় ভরো... আমি বলছি... সমুদ্রকে ঘড়ায় যদি ভরা যেত, আমি তাহলে সে জলে মাছচাষ করতাম... তাকে রক্তে নুন করে মিশিয়ে দিতাম কি?
সেদিন মাঝগঙ্গায় একটা পোড়ো বাড়ির ছাদে বাঁকা জীবনকে ধাক্কা দিতে দেখলাম... আর ঠিক তখনই ইচ্ছে হলো...
এই বাতিল ঘাটের ফাটলভাঙা সিঁড়িতে বসে আমাদের সব বাতিল ইচ্ছেগুলো,
একদিন একটা একটা করে ভাসিয়ে দেব...
মুক্তিজল
একটু একটু করে অক্ষয় মন্দাক্রান্তা তালে পুড়ছে জলঝারি মেঘ। ধিকিধিকি উত্তাপে স্তব্ধতার ব্রম্ভরন্ধ্রে জ্বলে যাচ্ছে বৃষ্টিপাত। ক্যাকটাসের হলুদ-সবুজ জাফরির নিচে দাঁড়িয়ে কে যেন হাত নাড়ছে অনন্ত আত্মহত্যায়... হাসতে হাসতে। দোতলার সিঁড়িঘর থেকে কবিতার তখন ঝাঁপতালে জীবনের রোমশ বুকে ঝাঁপিয়ে পড়তে ইচ্ছে করছিল। কে যেন আত্মা থেকে রক্তে লাবডুব কেটে কেটে বলছিল, এই শেষবার। এই জীবনের দেখাশোনার ইতিরেখা অনন্ত অভিমানে দূরত্বের বাস ধরেছে হাসিমুখে।
এরপর স্বপ্নের ভিতর দিয়ে হেঁটে যাবে স্বপ্নান্তর। জন্মান্তর চিতায় আগুন হয়ে পুড়বে। জ্বোরো বৃষ্টিতে ঝোড়ো বৃষ্টিতে মুঠো মুঠো ছাই হয়ে যাওয়া গোধূলিতে... এই রোদহারানো মৃত মহাদেশে... তোর সিগারেটের ভেজা আগুনটুকু পোহাতে ফিরে আসবে ভীষণ ভেজা একলা কাক।
আর আমার শার্সিতে মরে যাওয়া বৃষ্টি হয়ত কড়া নেড়ে নেড়ে বলবে... সে আসবে... সে ফিরবে। চাপচাপ শ্বাসকষ্ট নিয়ে, ডুবে যাওয়া তাসের ঘরের দিকে সাপের মত শীতল চোখে দেখছি, কী অবহেলায় রাধাচূড়ার হলুদ থেকে টুপ্ করে খসে পড়ছে বিন্দু বিন্দু মুক্তি
আর
হাওয়ার শব্দ সোঁ-সোঁ করে কানে কানে বলছে...
‘যদি এক মুহূর্তের জন্যেও আমায় চাও... সেটাই সত্যি...’
0 কমেন্টস্:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন