ধারাবাহিক উপন্যাস
প্রিয়দর্শিনী
(তৃতীয় অধ্যায়)
(৬)
পেছনে ঘুরে দাঁড়াল মুকুন্দ। কেউ
নেই। তবে? যা শুনলাম সেটা কতটা সত্যি?
এমন কর্কশ ও নিষ্ঠুর হুকুম কে দিচ্ছে? নাকি মুকুন্দের মনের ভেতরেই যে দৃশ্য স্থায়ী
আসন করে গেড়ে বসেছে সেই ইতিহাসেরই পুনরাবৃত্তি এখনও ঘটে চলেছে! দু’ দিনের জমিদার, পার্টির হোল টাইমার, জোব্বার সঙ্গে
দড়িতে বাঁধা ধারালো তরবারি, অন্য হাতে ছোট খঞ্জর। এমন ভাষায় কথা বলে উপস্থিত জনতা
একটি বর্ণও বুঝতে পারে না। রেওয়াজ মোতাবেক জমিদারকে সাষ্টাঙ্গে প্রণাম করার প্রথা। কিন্তু মুকুন্দ সে প্রথা পালন করেনি। কী অসম্ভব দুর্গন্ধ সুলতান মাহমুদের গায়ে! পোষাকের জড়ি চুমকি মানুষ
হত্যার রক্তে শুকিয়ে কালচে বর্ণ ধারণ করেছে। যেদিন থেকে ক্ষমতায় এসেছেন, মাহমুদের
ঘোড়সওয়ার বাহিনী এলাকায় চুড়ান্ত দাপট চালিয়ে যাচ্ছে। যাকে পারছে বেত মারছে। মেয়েদের
ঘর থেকে টেনে বের করে আনছে। কেউ প্রতিবাদ করতে এলেই ধারালো তরবারির এক কোপে তার
মাথা শরীর থেকে নিমেষে আলাদা হয়ে যাচ্ছে।
মুকুন্দদের ঘরে কেউ আগুন লাগিয়ে
দিয়েছিল। আগুন ধরানো খুবই সোজা। মাঝরাতে চারপাশ যখন সমস্তই চুপচাপ, জনা ছ’য়েক ঘোড়সওয়ার এসে দাঁড়িয়েছিল কিছুটা তফাতে। তাদের
প্রত্যেকের মুখে কালো কাপড়ের আচ্ছাদন। দলপতির নির্দেশে একজন কেউ একটু সামনের দিকে
এগিয়ে যাবে। তারপর নদীতে জাল ফেলে যেমন জেলে, ঠিক তেমনই ভঙ্গিতে ছুঁড়ে দেবে জলন্ত
মশাল ঘরের চালে। এই সমস্ত বাঙ্গলা বাটীগুলি খুব ভাল জাতের খড় ও খড়ের আঁশ এবং
তালপাতা দিয়ে বেশ মজবুত করে তৈরী। ভাল করে মাটির প্রলেপ দেওয়া থাকে
দেওয়ালে। জানালায়
দেওয়া থাকে শুকনো দূর্ব্বা ঘাসের আচ্ছাদন। এর ফলে গরমের দিনে ঘরের অভ্যন্তর বেশ
শীতল থাকে।
কিন্তু অন্যদিকে এগুলির দাহ্য ক্ষমতা চূড়ান্ত।
এই আগুন মুকুন্দের মাথায় আগুন
ধরিয়ে দিয়েছিল। রত্না নদীর জল তাদের ঘরের আগুন নেভাতে পারেনি। সময় বড় ভাঙাচোরা এবং
উঁচুনীচু। গলার নীচে কী যেন একটা শক্ত ডেলা পাক দিয়ে
ওঠে মুকুন্দর।
কী হল বন্ধু? কতক্ষণ থেকে দেখছি এইখানে নির্জনে একাকী চুপ চাপ দাঁড়িয়ে, কী এত ভাবছ?
প্রসাদ। যুবকটি প্রায় মুকুন্দরই সমবয়সী। গাত্রবর্ণ উজ্জ্বল শ্যামবর্ণ। তীক্ষ্ণ নাসিকা।
পরনে সাধারণ একটি মলমল ধুতি। –‘এসো বন্ধু! এসো’- দু’হাত সামনে বাড়িয়ে দেয় মুকুন্দ।
কী ভাবছিলে এত? চোখ মুখ শুষ্ক উদাসীন দেখাচ্ছে!
ও তেমন কিছু না! এমনি দাঁড়িয়ে
বৈকালিক শোভা প্রত্যক্ষ করছি। তুমি লক্ষ্য করেছো প্রসাদ রাঢ়বঙ্গের এই বিশেষ
অঞ্চলটিতে শুধু সূর্যাস্তের সময়ই প্রাকৃতিক শোভা দ্বিগুন হয়ে দেখা দেয়!
বাব্বা! তোমার পর্যবেক্ষণ ক্ষমতার তারিফ করতে হয় বন্ধু! এমন নৈঃসর্গ শুধু
তুমিই উপলব্ধি করতে পারো।
হাসালে প্রসাদ! প্রকৃ্তি দেবী
কি এতই কৃপণা যে কেবল মাত্র আমার মত একজন অধম গৃহহারার চক্ষুতেই ধরা দেবেন? তুমিও প্রত্যক্ষ করো... দেখো কী অপূর্ব সুন্দর এই রাঢ়ভূমি! এমন দিগন্ত বিস্তৃত
অপরূপ মহিমাকে দু’নয়ন ভরে অনুভব না করলে জীবন বৃথা! মৃত্তিকার এমন বিভিন্ন বর্ণ এর পূর্বে আমি প্রত্যক্ষ করিনি। লোহিত, গাঢ় লোহিত, কৃষ্ণ
লোহিত, পিঙ্গল।
তাছাড়া কত বিভিন্ন প্রজাতির বৃক্ষরাজি রয়েছে যেগুলি একবার মাত্র প্রত্যক্ষ করলে মন ভরে না!
সূর্যাস্তের এমন মনোহর দৃশ্য এতদ্ ব্যতীত আমি চাক্ষুস করিনি।
প্রসাদ বলল, তোমার কথা একবর্ণও
সত্যি নয় মুকুন্দ! তুমি যা যা বললে তার সবই ছলনা! রাঢ় বঙ্গকে তুমি একটুও ভালবাসতে
পারোনি! তোমার স্মৃতিতে তোমার জন্মভূমি বর্ধমান এখনো উজ্জ্বল! দক্ষিণ রাঢ় তোমার
মনে একটুও রেখাপাত করেনি!
প্রসাদের এহেন বাক্য উচ্চারণে
মুকুন্দরাম একেবারে নিশ্চুপ হয়ে গেল। তার সুদীর্ঘ নয়ন দুটি সহসা আর্দ্র হয়ে উঠল।
ঠিক কথাই বলেছে প্রসাদ। তার দেশপ্রেম বন্ধু প্রসাদের কাছে স্পষ্টতই দৃশ্যমান। মুকুন্দরাম দীর্ঘশ্বাস গোপন করে অস্তায়মান সূর্য্যের
দিকে আবারও চেয়ে রইল। সূর্যটা কেমন ভ্যাবলানো। কোনো আসন্ন ধুলিঝড়ই সেটাকে বদলে দিতে
পারবে। মাটির বিভিন্ন স্তর বিভিন্ন
ক্ষমতা লোভীদের দখলে। যার পোষাবে না সে অন্য জায়গা দেখে নাও। গোটা দেশই যখন খাসজমি,
যেন তেন প্রকারেন আমরা তোমাকে আমাদের মত করে গড়ে পিটে নেব। হিংসার কারণে হামলার
কারণে মনোনয়ন পত্র দাখিল করা যায়নি। কোনো ব্যাপার না, আমরা যা যা বলি ঠিক তেমন
তেমন করো। তারপর আলুচাষী কেন আত্মহত্যা করল, কেন একশো চুয়াত্তর বিঘা রেলের জমিকে
রাতারাতি ব্যারিকেড দিয়ে ঘিরে ফেলা হল, সে বিবৃতি আমরা সামনের ১২নং ওয়ার্ডের
নির্বাচনের সময় দেব। তার আগে নয়।
তবু মুকুন্দ আর মুকুন্দর কয়েক
জন সঙ্গী হার মানতে রাজী হয়নি। তীব্র প্রতিবাদ করেছিল ওরা। খাসজমিকে ঘিরে বোমাবাজী
গণধর্ষণ পার্টির সক্রিয় কর্মীকে প্রকাশ্যে খুনের হুমকি... মাহমুদ
খান মুকুন্দদের সংগঠনকে রাতারাতি নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছিল। বলেছিল, এ দল দাঙ্গাবাজের
দল! এদের কথায় কেউ আপনারা কান দেবেন না!
দামুন্যা গ্রামের লোকজন তখন চরম
আতঙ্কিত অবস্থায় দিন কাটাচ্ছে। মুকুন্দরামের মনে হয়েছিল, আকাশ থেকে ভগবান অনবরত
বলে চলেছে - আমি তোমাদের জোড়ায় জোড়ায়
সৃষ্টি করেছি - শাশক-শোশক, জমিদার-প্রজা, হিন্দু-মুসলমান!
নীরবতা ভাঙ্গল প্রসাদ। ধীরে
ধীরে মুকুন্দের একদম পাশটিতে এসে বলল, তুমি একজন প্রোথিতযশা কবি। অথচ এমন বোকার মত
অশ্রু বিসর্জন করছো? যার যার ভবিতব্য তার নিজের ললাটেই লেখা থাকে। চাইলেও কেউ খন্ডাতে
পারে না। মুকুন্দ চোখের জল মোছার চেষ্টা করল না। আস্তে আস্তে বলল, মন খারাপ হলে
সেটাকে তো আর রুখতে পারি না প্রসাদ! মানসিক পীড়নই এখন একমাত্র প্রায়শ্চিত্ত আমার!
সে কী বলছো ভায়া? তোমার লেখনী কি তোমার অসি নয়? এমন ক্ষুরধার কলম এ তল্লাটে কয় জনার আছে বলতে পারো? তাছাড়া স্বয়ং রাজামশাই তোমার পৃষ্ঠপোষক।
সত্যি কথা বলতে কী, এখানে প্রথম যেদিন তোমায় আমি
দেখি, তখনই মনে হয়েছিল তুমি একজন বিখ্যাত ব্যক্তি।
...আঃ! ব্যঙ্গ কোরো না প্রসাদ!
একমাত্র তুমিই আমার মানসিক অবস্থাটা উপলব্ধি করতে পারো।
পারিই তো! কিন্তু আমি তো্মায় ব্যঙ্গ
করিনি। বলছি তোমার স্বপ্নে দেখা উপন্যাসটা কবে থেকে লেখা শুরু করবে? আমরা কিন্তু
অতি আগ্রহ সহকারে অপেক্ষা করছি!
আমরা বলতে কারা কারা? উমাপতি?
জয়াধূ? ওদের আমি কবি বলে মনেই করি না।
নাঃ! ওদের কথা বলব কেন?
তবে কে? মহারাজ বাঁকুড়া রায়?
হ্যাঁ মহারাজ তো অধীর আগ্রহে
অপেক্ষা করেই রয়েছেন, কিন্তু ওনাকেও আমি এখন বাদ দিয়েছি।
মুকুন্দরাম বন্ধু প্রসাদের দিকে
হাঁ করে চেয়ে, সুদীর্ঘ চক্ষু দুইটিতে কিছু কৌতুহল।
প্রসাদ বলল, আমরা মানে আমরা!
মুটে মজুর কুলি চাষী ফুলমালী ফলবিক্রেতা আর মহারাজের সৈন্য সামন্তেরা। সেই দলে
আমিও আছি মুকুন্দরাম, তোমার বন্ধু। জানো তো যে জিনিষ সাধারণ
মানুষ ব্যবহার করতে পারে না বা তার কাজে আসে না, তা কখনই জনপ্রিয়তা অর্জন করতে
পারে না।
ক্ষণিকের তরে মুকুন্দের মুখে কোনও জবাব ফুটল না। প্রসাদ আবার বলল, কী এত ভাবছ? তোমার স্বপ্নে দেখা উপন্যাসটা জলদি শুরু
করো!
দীর্ঘশ্বাস গোপন করে মুকুন্দরাম
বলল, হ্যাঁ সে কাব্যখানি আমাকে লিখতেই হবে! স্বয়ং দেবী চন্ডী আমায় স্বপ্নাদেশ
দিয়েছেন... সেই দিনটি কী করে বিস্মৃত হই? গাছতলায় আমার দেড় বৎসরের শিশুপুত্রটি ক্ষুধার জ্বালায় কাঁদতে কাঁদতে
ঘুমিয়ে পড়েছে। কাছে পিঠে একটি লোকালয় নেই যে কিছু দুধ সংগ্রহ করে আনব। স্ত্রীর গহনাপত্র ইত্যাদি সমস্তই তার আগে দস্যুরা
লুটেপুটে নিয়েছে! রামানন্দ, আমার একমাত্র কনিষ্ঠ ভাই, অনাহারে সেও ক্লিষ্ট।
এমতাবস্থায় দেবীর স্বপ্নাদেশ...
থাক থাক! কেন ওসব পুরনো স্মৃতি
মনে আনছো? এখন তো তুমি নিশ্চিত একটা আশ্রয় লাভ করতে পেরেছো! মহারাজ তোমাকে ঘরবাড়ি ইত্যাদি সবই দান করেছেন। এবার তুমি ওনার প্রত্যাশা পূরণ করো। ওইটিই এখন তোমার আশু কর্তব্য।
লিখব প্রসাদ! অবশ্যই আমি লিখব।
মুকুন্দরাম চক্রবর্তী না লিখে অধিক সময় তিষ্ঠোতে পারে না। তুমি তো জানই আমাদের গ্রামের সেই অতি প্রাচীন শিব মন্দিরটিকে স্মরণ করে শৈশবেই একখানি কবিতা লিখেছিলাম। ঐ দেবালয়টি আমারই কোনও এক পূর্বপুরুষের তৈরী। আমার পিতা গুণরাজ চক্রবর্তী অতি
প্রত্যুষে রত্না নদীতে স্নান সমাপন্তে শিবপূজা করতেন। আমার পিতামহ, তাঁর পিতা
এঁরাও কেউ একটি দিনের জন্য পূজা বন্ধ করেন নি। বর্ধমান জেলার দামুন্যা গ্রামের ঐ
মন্দিরটির আজ কী দশা কে জানে?
প্রসাদ জবাব দিল, আবার পুরনো
কথা টেনে আনছো? তোমাকে নিষেধ করেছি না!
হাঃ হাঃ প্রসাদ! তুমি কেমন
আজকাল শাসন করতে শিখে গিয়েছ! তোমার শাসনে আমি মনে মনে স্বস্তি পাই, তা
জান কি?
পাও বুঝি? তা বেশ তো! ভবিষ্যৎ
পাঠক এই প্রসাদ কুমারকে কবি মুকুন্দরাম চক্রবর্তীর সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ সুহৃদ বলেই চিনবে, তুমি দেখো!
ভবিষ্যৎ পাঠক? তারা কারা প্রসাদ?
ঐ একটু আগে যাদের নাম করলে,
তারা?
ঠিক ধরেছো! ঐ কুলি মুটে মজুর
তাঁতী জেলে চাষী এরাই তোমার কাব্যের একনিষ্ঠ ভবিষৎ পাঠক।
এর কারণ?
প্রসাদ জবাব দিল, দেখো মুকুন্দ এই বঙ্গদেশে প্রথমে শূর রাজবংশ ও
শেষে সেন রাজবংশ রাজত্ব করতেন। এঁরা ব্রাহ্মণ্য ধর্মের পৃষ্ঠপোষক ছিলেন। সংস্কৃত
ভাষাই ছিল এঁদের কথ্যভাষা। এবং এঁরা এই ভাষাটিকেই অধিক উৎসাহ দান করতেন। সুতরাং
দেশী ভাষা এঁদের কাছে ছিল অত্যন্ত অবজ্ঞার বস্তু। কিন্তু মুসলমান শাসনকালে দেশী বাংলা ভাষার আদর বৃ্দ্ধি লাভ করে।
বঙ্গের কাব্যকুঞ্জের যুবরাজ বড়ু চন্ডীদাস সুলতান সেকেন্দার শাহর সভায় সমাদৃত ছিলেন। তাঁর পুত্র
গিয়াসুদ্দিন আজম শাহ শাহমুহম্মদ সগীরের পৃষ্ঠপোষক ছিলেন। এই সময় পীর কুতুবে আলম
ফারসী ও বাংলা মিশ্রিত গজল রচনা করেন। পশ্চিমবঙ্গের কুলীন গ্রাম নিবাসী কবি মালাধর
বসু শ্রীকৃষ্ণবিজয় রচনা করে গৌড়ের সুলতানের কাছ থেকে গুণরাজ খাঁ খেতাব পান।
বাব্বা! প্রসাদ তুমি যে সব
মুখস্থ করে রেখেছো দেখছি!
রোসো মুকুন্দ, আরও আছে। বলছি
শোনো। মোটামুটি ৬৫০ খৃষ্টাব্দের কাছাকাছি কোনও সময়ে অর্থাৎ সপ্তম শতকে গৌড়ী
প্রাকৃত থেকে জন্ম নিয়েছিল প্রথম বাংলাভাষা।
তাই কি? আমার তো মনে হয় প্রসাদ
গৌড়ী প্রাকৃত নয়, মাগধী অপভ্রংশ থেকে জন্ম নিয়েছিল এই কোমল মধুর বিদ্রোহী
বাংলাভাষা। আদি বাঙালী তখন ঐ ভাষাতেই কথা বলে মনের ভাব প্রকাশ করত। সেই সব বাঙালী
কারা ছিল তুমি কি জান প্রসাদ? জন্মকালে যে বাংলা ভাষা ছিল, আজ তা শুনলে মনে হয় যেন
বহু অতীতের কন্ঠস্বর শুনছি। যার কিছুটা বুঝি, কিছু বুঝি না। যেন স্বপ্নের মধ্যে জড়িয়ে যাওয়া এক আধো পরিচিত কোনও ভাষা।
তুমি ঠিকই বলেছো মুকুন্দ।
প্রাচীন বাংলা ভাষার আদি লেখক মৎসেন্দ্রনাথ চন্দ্রদ্বীপের (বাখরগঞ্জ) অধিবাসী
ছিলেন। তিনি ৬৫৭ খৃষ্টাব্দে নেপালের রাজা নরেন্দ্রদেবের সভায় উপস্থিত হন।
মৎসেন্দ্রনাথের শিষ্য জালন্ধরি-পা, তাঁর শিষ্য কাহ্ণ-পা বা কানুপা সোমপুরী বিহারে
খৃষ্টীয় ৭০০ থেকে ৭৫০ এর মধ্যে তাঁর গ্রন্থ রচনা করেন। মৎসেন্দ্রনাথের চার চরণযুক্ত এবং কাহ্ণপার তেরোটি চর্যাগান পাওয়া গেছে। বাংলা সাহিত্যে এইগুলিই সর্ব্বাপেক্ষা প্রাচীন গ্রন্থ।
বেশ! কিন্তু একটা আমায় তুমি
বলো, তখন বাঙালী কেমন ছিল? কী
প্রকারে তারা দৈনিক জীবন যাপন করত? গৌড়কে কেন্দ্র করে সংস্কৃত সাহিত্য যেহেতু বৃ্দ্ধি লাভ করেছিল, বাংলা বলতে শুধু ঐ গৌড়কেই বোঝানো হত? তার বাইরে
বাঙালী, যারা কেবলমাত্র বাংলা ভাষাতেই কথা বলত, তাদের কোনও পরিচয় তোমার জানা আছে?
মালাধর বসু, কবি কেতকা দাস ও মনসা মঙ্গলের অন্যান্য কবিগণ বঙ্গদেশ বলতে কেবল গৌড়কেই বুঝিয়েছেন। রাঢ় বঙ্গের উল্লেখ তাঁরা কোথাওই করে
যান নি।
না না! এ তোমার ভুল ধারণা মুকুন্দ! ৭০০ থেকে ১৩৫০ খৃষ্টাব্দ পর্যন্ত বাংলা
ভাষাকে বলা হয় আঁধার যুগের ভাষা। চর্যাপদগুলি ঠিক ঐ সময়েরই রচনা। এই যে অজয়ের কূলে
আমরা দুই বন্ধু দাঁড়িয়ে সূর্যাস্ত দেখছি, এই অজয়েরই উত্তর কূলে ছিল জমিদার ইছাই
ঘোষের রাজত্ব। ত্রিষষ্ঠীগড়। রাঢ়বঙ্গ তখন আরও ঘন অরণ্যে সন্নিবদ্ধ। দিনের বেলাতেও
সূর্যালোক অরণ্যে প্রবেশাধিকার পেত না। গোপ বংশীয় সামন্ত রাজা ঈশ্বর ঘোষ নামমাত্র
অধীনতা স্বীকার করে প্রত্যন্ত প্রদেশ স্বাধীন ভাবেই শাসন করতেন।
কার অধীনতা স্বীকার করতেন না
তিনি? গৌড়?
হ্যাঁ। গৌড়ে তখন পাল বংশীয় রাজা
ন্যায় পাল রাজত্ব করতেন। কিন্তু ইছাই ঘোষ ন্যায় পালের অধীনতা মেনে চলতেন না। গড়ের
মধ্যে রাজধানীর সুরক্ষার জন্য ১০২৬টি লৌহ ও পিত্তলের কামান, জামরুক বন্দুক ইত্যাদি
ব্যবহার করা হত।
কী বলছ প্রসাদ? কতদিন পূর্ব্বের সে ঘটনা?
(ক্রমশ)
0 কমেন্টস্:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন