কালিমাটি অনলাইন

দ্বাদশ বর্ষ / পঞ্চম সংখ্যা / ১২৫

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

দ্বাদশ বর্ষ / পঞ্চম সংখ্যা / ১২৫

সোমবার, ১ অক্টোবর, ২০১৮

ফেরনান্দো দেনিস ও এমিলি ব্রন্টে



প্রতিবেশী সাহিত্য


ফেরনান্দো দেনিস 
                    
(অনুবাদ : জয়া চৌধুরী)  




কবি পরিচিতিঃ

১৯৬৮ সালে কলম্বিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর সিয়েনাগায় জন্ম গ্রহণ করেন এই কবি। লাতিন আমেরিকার সাহিত্য জগতে সমসময়ের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ কবি। এতাবৎ প্রকাশিত সবচেয়ে বিখ্যাত কাব্যগ্রন্থ La criatura invisible en los crepúsculos de William Turner  বা ‘বিকেলের আলোয় উইলিয়াম টার্নারের অদৃশ্য ভূত’ ১৯৯৭ সালে প্রকাশিত হয়। এটির প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গে সে দেশের  সাহিত্য জগতে আলোড়ন পড়ে যায়। বিংশ শতকের সে দেশের অন্যতম উল্লেখযোগ্য সাহিত্য কীর্তি হিসাবে পরিগণিত হতে থাকে এটি। এই বইটি লেখার সময় ব্রিটিশ চিত্রকর উইলিয়াম টার্নারের আঁকা কিছু গোধূলির ছবি থেকে অনুপ্রেরণা পেয়েছিলেন তিনি। ২০১৭ সালে প্রকাশিত LOS MOSAICOS  DE BABILONIA বা ‘ব্যাবিলনের মোজাইক কারুকাজ’, LOS  CINCO SENTIDOS DEL VIENTO  বা ‘ঝড়ের পাঁচ অনুভূতি’, ২০০৪ সালে Ven a  estas arenas amarillas বা ‘এই হলুদ বালুকায় আপনারা আসুন’, একই সালে El vino rojo de las sílabas ‘পদাংশের রক্তলাল ওয়াইন’ ইত্যাদি তাঁর  কাব্যগ্রন্থের নাম। তাঁর কবিতায় প্রকৃতির স্বনতার সঙ্গে বহিঃপ্রকৃতির রূপের মেলবন্ধন ধরা পড়ে। সমসময়ের অন্যান্য বিখ্যাত কবি রোমুলো গাইয়েগো পুরস্কার বিজেতা উইলিয়াম ওসপিনা বা খোসে রামোন রিপোলি ম খোসে লুইস  রিভাস ইত্যাদিরা স্বীকার করেন, বর্তমান লাতিন আমেরিকার কন্ঠ বিধৃত হয় তাঁর কবিতায়। ভারতে সাহিত্য অকাদেমী ইতোমধ্যেই তাঁকে কলম্বিয়ার শ্রেষ্ঠ কবি বলে স্বীকৃতি দিয়েছে। ২০০৯ সালে তাঁর লেখা ১১৩টি কবিতা সম্বলিত Geometry of Water বা ‘জলের জ্যামিতি’ বইটি অনূদিত হয়েছে ভারতে সাহিত্য অকাদেমীর মাধ্যমে। বর্তমান কবিতাগুলি তাঁর সাম্প্রতিকতম  LA MUJER QUE SUEÑA EN LAS MURALLAS বা ‘দেওয়ালে তন্দ্রারত মেয়েটি’  থেকে নেওয়া।


La mujer del fuego (আগুনে মেয়ে) 


(১)

তোমাকে বলতে এসেছিলাম আগুনের কথা আর আমার দু’ঠোঁটে এনেছি বয়ে একটি শিখা
রাতের নকাশীর আলোয় কেঁপে উঠেছিলাম,
তার নীরবতায়, সে অনুরঞ্জিত তৃষ্ণা তার জঙ্গলের মধ্যে
উঠেছিল চড়চড় করে, তার আগুনের জাদু অক্ষরে,
আমার বালিকা স্বপ্নের মধ্যেকার সেই ভয়ার্ত
সরীসৃপগুলোয়।
আজ আমি দেওয়ালের কাছে নেমে এসেছি, বালির গভীরে খুঁড়ে
সেঁধিয়ে রাখতে চাই আজই আমার
গোপন গুহ্য সত্যগুলি,
জলুস, চারুতা এবং সঙ্গীতকেও যাতে রয়ে যাই
নিরস্ত্র, নিরবকাশ সমুদ্রে উগরে সে প্রাচীন
সৌন্দর্য পুড়িয়ে দেয় আমার রাতগুলি,
আমার শেষতম মুদ্রাটি ছুঁড়ে দেওয়া।


(২)

তার নিশ্চুপতা থেকেও, রাতের বেলায় বেরিয়ে এলাম, এবং আমি তো রাতেরই মানুষ
রাতের জাদুর কন্যা
আর তার রাতের অন্ধকার বিচ্ছুরণ করে আমার শব্দগুলি।
আমার নৈঃশব্দ্য তো অন্য নারীর কন্ঠ যে আমায় সঙ্গ দিয়েছে।
এই বহ্নৎসবের ইন্দ্রজাল, প্রেম, তৃষ্ণা
আন্দোলিত করে আমার সময়, এবং বালুঘড়িটি,
আমি সেই সঙ্গীত যে সন্ধ্যা নামার সময় বনের অন্দরে প্রবিষ্ট হয় সাহসে
এবং নগ্ন নেমে আসে দেওয়ালের গায়ে।

পাথরের পেছনটায় জেগে উঠি এই মিষ্টি বিস্ময়ে,
আলোর রহস্যময়তায়, ছায়ার সৌকর্যে - তার পৃষ্ঠায়
লিখি আমি, চুপ থাকার পেছনে যে নৈঃশব্দ্য আমাকে সঙ্গ দেয়,
আমার প্রলাপগুলিকে মিশিয়ে তরল করে দিই আমি, এই জালিম একাকীত্ব
যা পুড়িয়ে দেয় প্রতিটি ঢেউ, কাগজ,
আমার শরীরকে।


(৩)

আমার হাতের তেলোয় তারার একাকীত্ব আগাম দেখতে পায় সমুদ্র,
হস্তরেখার টিয়াপাখিটি অচেনা হাত দিয়ে অদলবদল করতে পারে,
আমার কোষ্ঠীর অপাঠ্য সংকেতলিপি, লাজুক, নিগূঢ়
রহস্যময়তার এই অন্তর্গত নৈঃশব্দ্যের প্রতীক।
এবং ইতিমধ্যেই কতবার পড়া গ্রহগুলির ইতিহাস,
নক্ষত্রেরা ফুলকি ছুঁড়তে থাকে
আমার রক্তের ঋক্ষগুলিতে,
তার বিচ্ছুরণকারী মুখগুলি অন্ধকারে ফিসফিস করে
ভবিষ্যৎ।



এমিলি ব্রন্টে

(অনুবাদ : ইন্দ্রাণী সরকার)  


  

কবি পরিচিতিঃ

এমিলি ব্রন্টে (জন্ম - জুলাই ৩০, ১৮১৮, থর্নটন, ইয়র্কশায়ার, ইংল্যান্ড; মৃত্যু -   ডিসেম্বর ১৯, ১৮৪৮, হাওয়ার্থ, ইয়র্কশায়ার) 
একজন ইংরেজি ঔপন্যাসিক ও কবি যিনি একটি মাত্র উপন্যাস ওয়েদারিং হাইটস (১৮৪৭) রচনা করেছিলেনকটি উচ্চ কল্পনাপ্রসূত কাজ, আবেগপ্রবণ এবং ঘৃণার উপর এবং ইয়র্কশায়ারের মূর জায়গাটি কেন্দ্র করে।

এমিলি সম্ভবত তিন ব্রন্টে বোনদের মধ্যে জ্যেষ্ঠ ছিলেন, কিন্তু তাঁর জীবনের ইতিহাস অত্যন্ত সংক্ষিপ্ত, কারণ তিনি নীরব এবং স্বল্পভাষী ছিলেন এবং যোগাযোগের  কোনও সুরাহা করেননি, এবং তাঁর একক উপন্যাসটি তা আধ্যাত্মিক অস্তিত্বের রহস্যের সমাধান করার পরিবর্তে অন্ধকার করে। 


How beautiful the Earth is still (পৃথিবী এখনও কত সুন্দর)

পৃথিবী এখনও কত সুন্দর!
তোমার কাছে কতটা সুখপূর্ণ 
বাস্তবে কতটা সত্যিকারের অসুস্থতা  
অথবা শুধু কষ্টের ছায়াময় প্রেতাত্মারা;
কীভাবে বসন্ত ঔজ্জ্বল্য আনতে পারে
এবং গ্রীষ্ম এসে শীতের রুক্ষতা ভুলিয়ে দেয়?
কেন সবাই যৌবনের স্মৃতি ধরে রাখে 
যখন যৌবন বিগত হয়ে প্রাধান্য হারায়?

যখন সেইসব জন যারা তোমার একদা 
ধনে মানে বয়সে সমগোত্রীয় ছিল 
তাদের সবার অশ্রুপূর্ণ সকাল 
একটি বিষাদময় দিনে পরিবর্তিত হয়েছে,

তারা অপ্রাপ্তবয়স্ক এবং তরুণ অবস্থায় মারা যায়,
তাদের হৃৎপিন্ড দুমড়ে মুচড়ে শেষ হবার আগে,
দুর্বল ক্রীতদাস, অনুভূতির কাছে পরাজিত,
একটি দুর্বল এবং অসহায় শিকার!

কারণ, তারা যখন উপভোগ করেছিল 
এবং পরিপূর্ণতালাভের পর আসা বিনষ্ট হয়েছিল,
যেমন শিশুদের আশা একটি বিশ্বস্ত স্তন ঘিরে,
আমি তেমন আশীর্বাদ ও বিশ্রামের অপেক্ষায়

একটি চিন্তাশীল আত্মা শীঘ্রই আমায় শেখায়,
জীবন যতক্ষণ ততক্ষণ আশা জিইয়ে রাখতে হয়
জীবনের প্রত্যেকটি অবস্থাতেই পার্থিব আনন্দ 
সর্বদাই বিবর্ণ হয়ে ক্রমশঃ বিনষ্ট হয় 

দূরদর্শিতার দ্বারা এ আমার অনুধাবন  
তাই বিশ্বাসঘাতকতার পশ্চাতে আর 
অনুসরণ করতে চাই না
কিন্তু দৃঢ় পা এবং শান্ত মুখ নিয়ে 
সব প্রলোভন থেকে সরে আসতে চাই 
বিস্তৃত বালির দিকে চেয়ে চেয়ে দেখি,
কীভাবে সমুদ্রের ঢেউগুলি তীরে ভেঙে পড়ে

ঐখানে আমার সমস্ত বাসনা নিহিত 
কোথায় তার গন্তব্য কে জানে!
আমার মন কখনো ফিরেও তাকায় না 
দেখতে যে সেখানে কী থাকতে পারে

এই আশা যখন আমার জ্ঞানপূর্ণ চোখের কাছে 
যৌবনের মত জাদু বিস্তার করে 
পৃথিবীর লক্ষ্য লক্ষ্য অজানা রহস্য,  
ভয়ঙ্কর অথচ সুন্দর

আশাই আমায় দু:খের হাত থেকে মুক্তি দেয় 
অন্যের কষ্ট দেখে আমার নিজের দু:খ ভোলায় 
আমায় আরও শক্ত হতে সাহায্য করে 
যাতে আমার দু:খকষ্ট বহন করতে সক্ষম হই

হে সান্ত্বনাদায়ক পিতা, আমি কি সাহসী হব না 
কবরের অন্ধকারকে স্পর্শ না করে?
না কি তোমার দেওয়া দু:খগুলোকে হেসে উড়িয়ে দেব?

ভাগ্য যত বিড়ম্বনা আনে ততই আমার মন সুদৃঢ় হয় 
তোমার শক্তি থেকে শক্তি আহরণ করে 
ভাগ্যের কাছে শুধু সৌভাগ্যের আশা করি

No coward soul is mine (কোনো কাপুরুষ আত্মা আমার নয়) 

পৃথিবী ঝড়জলে ভয় পেতে চাই না 
আমি স্বর্গের মহিমা দেখতে পাই 
বিশ্বাস আমায় ভয় থেকে রক্ষা করে 

আমার বুকের মধ্যে ঈশ্বর,
সর্বশক্তিমান সর্বদা বর্তমান দেবতা
যেন তাঁর অবিনশ্বর জীবনের 
ক্ষমতা আমাতে নিহিত করে রেখেছেন

অধিকাংশ মানুষের মনে বিশ্বাস যেন 
শুকনো আগাছার মত মূল্যহীন হয়ে যায়
তারা সমুদ্রের ফেনার মত ক্ষণস্থায়ী  
স্বল্পকালীন, ক্রমাগত পরিবর্তন, 
অব্যবহৃত এবং অসংযত 
ঈশ্বরে অনুভূতি জীবনে কঠিন 
পরিশ্রম করে আরব্ধ করতে হয়
শুধু ধর্মে গোঁড়া বিশ্বাস থাকলেই 
ভগবানকে পাওয়া যায় না,
তাঁর ওপর অগাধ বিশ্বাস থাকতে হয়

যা আসলেই ঈশ্বরের এক অনুভূতিকে 
জাগ্রত করে, জীবনের কষ্টের মুখোমুখি 
কোনটি আসলেই শক্তিশালী করে, 
তা ধর্ম বা ধর্মীয় বিশ্বাস নয় বরং 
সংগঠিত ধর্মের নীতির পরিবর্তে 
ঈশ্বরের মধ্যে আরও বেশি মৌলিক বিশ্বাস 
এটি একটি খুব ব্যক্তিগত সম্পর্ক, 
ঈশ্বরের ব্যক্তিগত ধারণা প্রোটেস্ট্যান্ট 
ধারণাটির উপর গভীরভাবে প্রতিষ্ঠিত

এমনকি যদি বস্তুগত বিশ্ব এবং মহাবিশ্ব 
সব অদৃশ্য হয়ে যাবে এবং শুধুমাত্র ঈশ্বরই রয়ে যাবেন
প্রত্যেক আত্মা ঈশ্বরের মধ্যে বিদ্যমান থাকতে সক্ষম হবেন 
সর্বশক্তিমান যে প্রয়োজন হয় এবং 
যেহেতু ঈশ্বর সবকিছুই জীবিত এবং 
জীবিত সবকিছুই, জীবন যাপনকারী 
সবকিছুই কার্যকরী, চিরন্তন, কারণ ঈশ্বর চিরন্তন 


Love and Friendship (ভালোবাসা ও বন্ধুত্ব)  

ভালোবাসা যেন একটি বন্যগোলাপ 
বন্ধুত্ব একটি চিরসবুজ হলি গাছ 
যখন গোলাপ ফোটে হলির রং গাঢ় হয়
কিন্তু কোনটি সর্বদা ফুটে থাকবে?

বনগোলাপটি বসন্তে সুন্দর ফুটে ওঠে 
গ্রীষ্মকালীন ফুলটি বাতাসে গন্ধ ছড়ায়
কিন্তু অপেক্ষা করো শীতের পুনরাবির্ভাবের  
তখন কি বনগোলাপের সৌন্দর্য্য থাকবে?

তাই ওই গোলাপের মালাটা ফেলে দাও 
নিজেকে সতেজ হলি দিয়ে সাজিয়ে নাও 
যখন শীত তোমার ভুরুতে ক্ষত করবে 
তখন তোমার মালাটি হয়ত সবুজ থাকবে




















0 কমেন্টস্:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন