কালিমাটি অনলাইন

দ্বাদশ বর্ষ / পঞ্চম সংখ্যা / ১২৫

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

দ্বাদশ বর্ষ / পঞ্চম সংখ্যা / ১২৫

শনিবার, ২৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৬

অশোক তাঁতী

প্রচণ্ড বৈদ্যুতিক ছুতার


বাসে চেপে চলেছি কলকাতা যাব সায়ন্তনির পত্রিকার জন্য গল্পপাঠ। হঠাৎ ফোন। - এখন আবার কী হলো?  
মেয়ে বলল – বাবা তুমি কাঁপছ না?
- কাঁপব কেন?
- ভূমিকম্প হচ্ছে।  
- তুই কী করে বুঝলি?
- ফ্যানটা দুলছে, গতবারের মতো আমার মাথা ঘুরছে। আর বাথরুমের বালতির জল কাঁপছে জানো বাবা, এখন ফ্ল্যাটের সবাই শাঁখ বাজাচ্ছে। শাঁখ কেন বাজায় তুমি জানো, বাবা?
- প্রকৃ্তির সাথে যুদ্ধ করার জন্যে। মানুষ সেই প্রাচীন প্রস্তরযুগ থেকে যুদ্ধ করে এসেছেকুরুক্ষেত্রে পাঞ্চজন্য বেজেছে দুষ্টুদের দমনের জন্য।
- বাঃ! বেশ মজা শাঁখ বাজলে যুদ্ধ হয়
- দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে শাঁখের মতো সাইরেন বেজেছিল সাইরেন মানে যুদ্ধবিমান, মাটির তলায় লুকিয়ে পড়া
- যুদ্ধ মানে লুকিয়ে পড়া?
- যুদ্ধ মানে যেমন আক্রমণ তেমনি আত্মরক্ষাও দুর্যোধন লেকের নিচে আত্মগোপন করেছিলেন। ছোটবেলায় আমার বাবা, মানে তোর ঠাকুরদা সুর করে করে পড়তেন-
শুষ্ক বন দহে যেন জ্বলন্ত আগুনে।
কহত সঞ্জয় কোথা পাব দুর্য্যোধনে।।

বাসে আমার পাশের লোকটা জুলজুল করে তাকিয়ে থাকল। মেয়ে বলল, কী সুন্দর সুর! তারপরে কী?

শুনিয়া সঞ্জয় কহে বচন বিশেষ
দুর্য্যোধন রাজা হ্রদে করিল প্রবেশ।।

- আমি জানি। মাটির নিচটাকে গাড্ডা বলে। যুদ্ধে হেরে গেলে সবাই গাড্ডায় পড়ে।  
- বাজে কথা বেশি না বলে তুই এখন পড়তে বস! রিক্তামাসি কোথায়?
- মাসি বলল রান্না হয়ে গেছে। ঢাকা দিয়ে গেলাম। তুমি খেয়ে নিও। মা বলেছে, দুঘণ্টা পর অফিস থেকে ফিরবে।  
- তুমি বেশিক্ষণ ফেসবুক কোরো না। স্নান করে নিও।
- একটা কথা, বাবা যুদ্ধের রিমেক হয়?
- হয় বৈকি। সব যুদ্ধই তো ক্রুসেড আর জিহাদ। ধর্মযুদ্ধ।
- আজ সকালে টিভিতে দেখাল, সিরিয়াতে এরোপ্লেনের বোমা ফেটে আগুন বের হচ্ছে ওটা কার ধর্মযুদ্ধ?
- যারা জিতবে ধর্মযুদ্ধ তাদের। অন্যরা বাজে লোক।
  
মেয়ে কী বুঝল জানি না, টা টা বলে ফোনটা রাখল। সত্যিই, যুদ্ধ শেষ না হলে বোঝাই যায় না কে ভালো আর কে বাজে। বাইরে টিপটিপ বৃষ্টি হচ্ছে। বাস আস্তে চলছে। দুপুরের এই মৃদু ঢুলুনিতে ঘুম পায়। ক্লাস সেভেনে পড়লেও মেয়ে ফেসবুক নিয়ে কী করছে, ভেবে কোনও লাভ নেই। আমরা দুজন দুদিকে ছুটছিএখনও  একটাই ভরসা, মেয়ে বন্ধুর মতো সব কিছু বলে আমাকে

বাস ডানকুনি পার হচ্ছে। হঠাৎ ফোনটা কেঁপে উঠল। চোখ খুলে দেখলাম মেয়ের এমএমএস। একটা ছবি পাঠিয়েছে। লম্বা একটা মোটা পেনের মতো আকৃতি, তাতে অ্যালুমিনিয়াম সাদা পেন্ট লাগানো। যেমন নাগা সন্ন্যাসীদের গায়ে লাগানো থাকে। তীব্র আধিপত্য বোধ। কীসের ছবি বুঝতে পারছি না। মেয়েকে ফোন করলাম –  এটা কী পাঠিয়েছিস?
মেয়ে বলল, বাবা একটা শর্ট ফিল্ম দেখলাম। মৃগাঙ্ক বলে একজন প্রচণ্ড বৈদ্যুতিক ছুতারের সিনেমা বানিয়েছে। তাতে এটা আছে।

অবাক হলাম। এটা তো মলয় রায়চৌধুরীর কবিতা! যেখানে শুভার কথা আছে।  বি ঠাকুরের শুভা বোবা। কিন্তু মলয়ের শুভা তীব্র শারীরিকতাই সাবধানে বললাম – তুই সিনেমাটা দেখলি?
- একটু দেখেছি। বুঝতেই পারছিলাম না!  
- সে তো বুঝলাম। কিন্তু এটা কী ছবি পাঠিয়েছিস?
- বাবা তুমি খুব বোকা। একে বলে ডিলডো।

আমার বুকের ভেতরটা কেঁপে উঠল। ম্যাটার আর অ্যান্টিম্যাটারের মিলনে তীব্র এক শীৎকার ধ্বনি। মৃগাঙ্ক তুই ঐ সিনেমার পর পাঞ্চজন্যর আওয়াজ দিয়েছিস তো?
না দিলে যুদ্ধ কোথায় হবে?


0 কমেন্টস্:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন