আমার নাম লাল
কেউ কেউ খিস্তি করে ‘বাল’ বলে
ডাকে আমায়। আমার নাম ‘লাল’। বাবা একসময় নকশাল করত শুনেছি। এখন আর করে না। আমার
যখন পাঁচ মাস বয়স, বাবাকে তখন এক রাতে পুলিশ তুলে নিয়ে গিয়েছিল। তাই বাবা এখন আর
কিছুই করে না। জানালার ধারে বসে বসে পাঁচিলের শ্যাওলা, শামুক, পিঁপড়ে, কাক, শালিখ
দেখে। শ্যাওলা, শামুক, পিঁপড়ে, কাক, শালিখ দেখতে দেখতে বাবার ঠোঁট বেয়ে গাল বেয়ে
লাল ঝরে পড়ে। আমার নাম লাল।
বাবার সামনে গিয়ে যদি তুমি দাঁড়াও, বাবা মুখ তুলে তাকাবে।
কিন্তু তোমায় দেখবে না। বাবার চোখ তোমার উপরই থাকবে, কিন্তু বাবা তোমাকে দেখবে না।
মা বলে বাবা সব জানে, সব বোঝে, সবই দেখে। শুধু বোঝাতে পারে না। কিন্তু আমার তা মনে
হয় না। যখন মায়ের সাথে দেখা করতে যতীনকাকু আমাদের ঘরে আসে, কই বাবার চোখ তো ছুঁচলো হয়ে যায় না! বাবার
চোয়াল তো শক্ত হয়ে ওঠে না আমার মতো! আমার নাম লাল। যতীনকাকুর
সাথে মা বেরিয়ে গেলে আমি বাবার সামনে এসে দাঁড়াই একেকদিন। বাবা আমার দিকে মুখ তুলে তাকায়, যদিও
বাবা আমায় দেখে না। আমি খক করে থুতু ফেলি বাবার মুখে। বাবা তখনও আমার দিকেই তাকিয়ে
থাকে।
আজকে সন্ধ্যেবেলা ফুটবল পেটানোর পর আমরা দলবেঁধে পেচ্ছাপ
করছিলাম যখন, পাপাই কোথা থেকে দৌড়ে এসে খবরটা দিল। পাঁচিলের উপর প্রায় মুছে আসা
কাস্তেটাকে ভিজিয়ে দিচ্ছিলাম তখন আমি। খবরটা শুনতেই আমি বাড়ির দিকে দৌড়লাম।
ভেবেছিলাম বাবা আজকে কিছু করবে। ভেবেছিলাম বাবা অন্তত একটা চড় মারবে যতীনকাকুকে।
কিন্তু গলির মুখ অবধি পৌঁছানোর আগেই দেখলাম যতীনকাকুর বাইকের পিছনে স্যুটকেস কোলে মা চলে যাচ্ছে। বাইকের
পিছনে কিছু দূর পর্যন্ত ধাওয়া করার পর মা দেখতে পেল আমায়। আমায় দেখে মা
হাত নাড়তে থাকল, আমি গলির মাঝে থমকে গেলাম। বড় রাস্তার মোড় পর্যন্ত মা হাত নেড়ে
গেল, যতক্ষণ আমায় দেখা যায়।
বাড়ি ফিরতে দেখি বাবা
জানালার সামনে বসে। অন্ধকারে পাঁচিলের কিছুই দেখা যাচ্ছে না। বাবা অন্ধকার দেখছে।
আমি স্টোভের পাশে রাখা বঁটিটা তুলে নিয়ে বাবার সামনে গিয়ে দাঁড়ালাম। বাবা আমার দিকে তাকাল। কিন্তু
বাবা আমায় দেখতে পেল না। কালো জং পড়ে আসা বঁটিটা
আমি বাবার গলায় চালিয়ে দিলাম। ফিনকি
দিয়ে রক্ত বেরিয়ে এসে বাবার জামা, সোঁদা পড়া দেওয়াল, বিছানার চাদর ভিজিয়ে দিল।
আমার চোখের সামনে বাবার গলা থেকে রক্ত বেরিয়ে আসতে থাকল গলগল করে; গরম,
তাজা লাল রক্ত। বাবার চোখ তখনও আমার
দিকে, আমার নাম লাল।
দারুণ হয়েছে। ফাস্ট , সেকেন্ড পার্ট দুটোই... পুরোটা পড়ার জন্যে অপেক্ষা বইমেলার...
উত্তরমুছুন- সাঁঝবাতি
:-)
মুছুনঘটনা শরীর, অনুভূতি তার প্রটোপ্লাজম।
উত্তরমুছুনঘটনা শরীর, অনুভূতি তার প্রটোপ্লাজম।
উত্তরমুছুন:) - Alokparna
মুছুন