ধারাবাহিক উপন্যাস
তাহার নামটি
তাহার নামটি
(দুই)
পিমকে কোলে নিয়ে ছাদে দাঁড়িয়ে আছেন কাবেরী। এই সময়টা তাঁরা দুজনেই চুপ করে
বিকেল দেখেন। কাবেরীর মাঝে মাঝে ইচ্ছে হয় সমস্ত কাজকর্ম ফেলে ছাদে উঠে আসেন, এসে
সকাল দেখেন, দুপুর দেখেন, বিকেল দেখেন, রাতও দেখেন। ছাদটা যেন সময়ের হেরফেরে বদলে
বদলে যায়। কিন্তু বিকেল ছাড়া ছাদে আসা হয় না তাঁর।
কাবেরীর মনে হয়, বাড়ির এমন খোলা ছাদ যেন মেয়েদের জন্যেই তৈরি হয়েছে। এসব ছাদে
পুরুষদের যে কী ভীষণ বেমানান লাগে, তা বলে বোঝাতে পারবেন না তিনি। এই যখন তাঁর ভাসুর চানের পর গামছা মেলতে আসেন খালি গায়ে লুঙ্গি পরে,
কাবেরীর ভয়ানক অস্বস্তি হয় তা দেখে। ইচ্ছে করে, খুবই ইচ্ছে করে এক ধাক্কা দিয়ে ঐ
বিশাল ভুঁড়ি সমেত মানুষটাকে ছাদ থেকে ফেলে দিতে। কিন্তু এসব ইচ্ছে কাউকে বলা যায়
না, তা তিনি জানেন। তাই পিমকে আরো বুকের কাছে এনে ধরেন। পিমই কাবেরীর পার্সোনাল
ডাইরি। খালি বুকের খুব কাছটাতে এনে রাখা, ব্যস, যেন সব লেখা হয়ে যায় ওতে। কাবেরী
পিমের আলতো লোমে নাক গুঁজে দেন। পিমসুলভ গন্ধে তাঁর চোখ জুড়িয়ে আসে।
“সকালে জিজি কিছু বলচিলো মনে হয়?” সুনীল মজুমদারের গম্ভীর প্রশ্নে চমকে ওঠেন
কাবেরী। সন্ত্রস্ত হয়ে বলেন, “কি আর, ঐ কে যেন একটা দেওয়াল নোংরা
করচিলো, তাই দেখতে পেয়ে তাকেই কিচু বলচিলো বোদহয়।”
“তার মানে এটা জিজিরই কাজ”, আরো গম্ভীর শোনায় সুনীল মজুমদারের গলা।
“কি?”
“আজকে তুমি বাইরে বেরোওনি একবারও, না?”
প্রমাদ গোনেন কাবেরী, “না তো, কী হয়েচে?”
“পাঁচিলের গায়ে জিজি বড় বড় করে লিখে রেখেচে, এইখানে প্রস্রাব করিবেন, হ্যাঁ
ঠিক এইখানেই।”
“সে কী! নতুন রঙ করা
পাঁচিলে লিখেচে!” চোখ কপালে ওঠে কাবেরীর।
“কি করচে সে এখন?”
“দুপুরে খেয়েদেয়ে ঘুমুলো বোদহয়”
“আচ্চা, সে জাগলে বোলো কাল বিকেলে যেন চেম্বারে এসে দেখা করে যায়”, সুনীল
মজুমদার লুঙ্গিটা একটু উঁচু করে ধরে বেরিয়ে যান ছাদ থেকে।
এই মেয়ের জন্য যদি একটু শান্তিতে থাকতে পারা যায়! সুনীল নিজের ঘরে ঢুকে পড়তেই কাবেরী রঞ্জনার ঘরে ঢোকেন।
“এই মেয়ে ওঠ! অশান্তির আগার হয়েচে এক!” বড় টিউব লাইটটা জ্বালিয়ে দিতেই রঞ্জনা
ঘুমের ভাষায় প্রতিবাদ করে ওঠে। কাবেরী তার দিকে তাকিয়ে দেখেন, পায়ের জামা মাথায় তুলে সে শুয়ে
আছে।
“কোনো কিচুতেই মতি নেই তোর, ওঠ বলচি!” এক হ্যাঁচকা টান দিয়ে রঞ্জনাকে জাগিয়ে
দেন তিনি।
“মেলা ঝামেলা কোরো না তো!”
“তুই কী করে রেখেচিস
পাঁচিলের গায়ে?”
“ওরা মুতবে তার বেলা কিছু নেই, আর আমি লিখলেই অশান্তির আগার!”
“তাই বলে তুই নতুন রঙ করা পাঁচিলের গায়ে অমন লিকে দিয়ে আসবি!”
“যা করেছি, বেশ করেছি, ঘুমোতে দাও তো!”
“আমায় তো যা খুশি বলতে পারো, দাদা কাল ডেকে পাটিয়েচে তোমায়! ল্যাটা সামলাও গে
যাও!” টিউব লাইট বন্ধ করে কাবেরী ঘর থেকে বেরিয়ে যান। রঞ্জনা অন্ধকার ঘরে বিছানায়
ধড়ফড়িয়ে উঠে বসে, বুড়োটা ডেকেছে!
“কাকু, বোথ সাইড এক কপি,” অঞ্জন খাতা এগিয়ে দেয় ফটোকপির জন্য।
“এই ভাঁজ করা পেজগুলোই তো খালি?”
“হ্যাঁ”, হঠাৎ করে পিঠে একটা কিল খায় অঞ্জন, “উফফ!” পিছু ফিরতেই দেখে রাজীবকে।
“কী রে জুলপি, কী করছিস?”
পিঠে হাত বোলাতে বোলাতে অঞ্জন বলে, “জেরক্স”
“কত পড়বি বাল! কী হবে নাম্বার পেয়ে,
সেই তো বাবার দোকানেই বসতে হবে”
“বসলে বসব, তোর কী?”
“আমার কী বস্! আমার হলো গিয়ে এই! ঢিকচিকি ঢিকচিক ঢিকচিকি ঢিকচিক!” বলে পকেট থেকে পাতলা বইটা সে বের করে অঞ্জনের মুখের সামনে নাড়াতে থাকে।
“কী এটা?”
“দেখবি দাঁড়া, ও দুলালদা, এই বইটা পাঁচ কপি, বোথ সাইড, কালিটা চেক করে দিও”
“কোনো সাজেশান বুক?” অঞ্জন জানতে চায়।
“হ্যাঁ রে, জীবন বিজ্ঞানের!” বলে খ্যাক খ্যাক করে হাসে রাজীব।
ফটোকপি দোকানের কর্মী দুলাল বইটায় একবার চট করে চোখ বুলিয়েই বলে, “এসব কী টোটো! ছি ছি! এ বই আমি জেরক্স করতে পারব না। সুনীলদা জানতে পারলে তোমার সাথে আমাকেও খুন করে
রাখবে।
“আরে চাপ নিও না তো, জানলে এক কপি জ্যে কেও দিয়ে দিও, খুশি হয়ে যাবে” বলে আবার
হাসতে থাকে রাজীব।
“খুশি হবে! না না, এ আমি পারব না”
“আরে দশ টাকা বেশি দেব তোমায়, তালেও করবে না?” রাজীবের প্রস্তাবে আর কিছু বলতে
পারে না দুলাল। গম্ভীর মুখে
অঞ্জনের খাতা ফেরত দিয়ে বইটা মেশিনে চাপায়।
“কত হলো কাকু?” অঞ্জন
জিজ্ঞেস করে।
“পাঁচ টাকা।”
টাকা দিয়ে চলে আসার জন্য পা বাড়াতেই রাজীব অঞ্জনকে থামায়, “জুলপি, দাঁড়া। দুলালদা, এই জুলপির জন্যেও এক কপি করো তো!”
টাকা দিয়ে চলে আসার জন্য পা বাড়াতেই রাজীব অঞ্জনকে থামায়, “জুলপি, দাঁড়া। দুলালদা, এই জুলপির জন্যেও এক কপি করো তো!”
“আমি নেবো না রাজীব, ছাড় আমায়, দেরি হয়ে যাচ্ছে”
“আরে দাঁড়া না, পরে থ্যাঙ্কস জানাবি আমায়”
কিসের টানে অঞ্জন নিজেও বোঝে না, অপেক্ষা করে বইটার জন্য।
কপি হয়ে গেলে রাজীব গোপন এবং মূল্যবান কিছু দেওয়ার মতো করে অঞ্জনের হাতে কপিটা গুঁজে দিয়ে বলে, “নে, তোর জন্য, টাকা লাগবে না, সামলে রাখিস, তুই যা
ক্যালানে! তোর হেব্বি কাজে আসবে, যাঃ!”
বায়োলজি কপির মধ্যে পাতলা কপি করা পাতাগুলো একপ্রকার লুকিয়েই পড়ে। অঞ্জন
সাইকেল এগিয়ে নিয়ে যায়।
Hell is empty and all the devils are here
শীতের এক সুন্দর সকালে একটা সোজা লম্বা রাস্তা দিয়ে রিক্সা চলেছে, একজনের কোলে
বসা আরেকজন। চকচকে রোদ এসে পড়ছে যাত্রী দুজনের মুখের ওপর। ফাঁকা রাস্তায় বেশ জোরে
চলছে রিক্সাটা।
মেয়েটা বলে ওঠে, “জানো, বিড়ালের ন’টা প্রাণ থাকে!”
“তাই নাকি! কে বলল তোমায়?”
“লীনা মিস”
“আচ্চা! তা কোতায় থাকে প্রাণ!?”
“এই এখানে”, মেয়েটি লোকটার এক হাত তার পেট থেকে তুলে এনে বুকে ঠেকায়, সদ্য ফুটে
ওঠা বুক।
“এইখানে? কই আমি তো পাচ্চি না!” লোকটার এক হাত খামচে ধরে বিড়ালটার প্রথম
প্রাণ। আরেক হাত নেমে যায় বিড়ালের লেজের দিকে।
মেয়েটা হঠাৎই শক্ত হয়ে আসে। এতটাই শক্ত যে, তার নিজের জিভকে ইস্পাত ভারী বলে
মনে হয়।
শীতের সুন্দর সকালে রিক্সা এগিয়ে চলে
শনশন, রোদ লাগা রাস্তা দিয়ে।
(ক্রমশ)
ei obdi pora sera, the best online novela... ektu taratari kisti gulo publish kora jayna didi?
উত্তরমুছুন-Soumi
Kalimati Blogzine to monthly ekbar e beroy... Tai proti maase ekta kore chapter berochchhe... - alokparna
মুছুনখুব ই ভাল হচ্ছে। বিশেষ করে আঁকা গুলো আমার খুব প্রিয়। খুব ভাল কাজ যে যাই বলুক। আমি কিন্তু জানি, লোকে দেখছে, পড়ছে আর !!! :D
উত্তরমুছুন- সাঁঝবাতি
��- Alokparna
মুছুনkhub mojar hochhe apa, cholte thakuk ( shahiburrahman)
উত্তরমুছুনdhonyobad bhai :)
মুছুন- Alokparna
আপনার এইরকম লেখা আগে পড়িনি। ভালই লাগছে
উত্তরমুছুনdhonyobad :) ektu onyorokom kichhu likhte cheshta korechhi... bhalo thakun- Alokparna
মুছুন