কালিমাটি অনলাইন

দ্বাদশ বর্ষ / পঞ্চম সংখ্যা / ১২৫

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

দ্বাদশ বর্ষ / পঞ্চম সংখ্যা / ১২৫

রবিবার, ১৪ জুন, ২০১৫

শ্রাবণী দাশগুপ্ত

যে কোনো দিকে


(১)

শতবার বলেছি, আসলে কি তাই চেয়েছিলাম? চাইছিলাম? কারণে অকারণে ঢাক পিটিয়েছি, এই জীবন রাখার কোনও মানে...? অন্তত আপাতত অকেজো অকর্মণ্যের পক্ষে... চলে যেতে পারি যে কোনো... একটা টানের অপেক্ষায় দিনপাত।
কাজ কবে ফুরিয়ে গেছে।
বয়স যাই হোক, গত বারো বছর যাবৎ, কারণ যাই হোক, প্রতিনিয়ত বলেছি - এভাবে অগত্যা বাধ্য হয়ে সঙ্কোচে নিষ্প্রয়োজন... এসমস্ত এক বা একাধিক ঘুরপোকা মগজে আমার। তবু আলোহাওয়া, গাছপাতা, টেলিভিশন, সংবাদপত্র, দুধপাঁউরুটি, ঝগড়াঝাঁটি, আমার আমার... বারো বছরের সকাল-বিকাল।

ক'দিন ঘুম হচ্ছিল না। মশারিতে মশা নেই, ঘুমপারানি ডিম আলো। পাশের  ঘরে পরের প্রজন্মের বিরক্ত কাছের মানুষেরা। অতীতে খাকী পোশা কের মানুষ, তাই দেখেছি অনেকবার তাকে। কান ঘেঁষে বেরিয়ে গেছে।
অধিক রাতে আমার ভয় করেছিল। পর পর গতকাল, গতপরশু, গততরশু।
আগে এরকম হয়নি এযাবৎ, এই এত হাস্যকর!
ঘুম-আনা বড়ি বিশ্বাসঘাতকতা করেছে। মশারির চালে তাকিয়ে দেখেছি সব মুখ।
মাথার কাছে জলের গেলাস থেকে গলায় ঢালতে হাত কাঁপিয়েছি। যদি শেষ গমন, আত্মজনদের মুখ দেখে, তাদের হাতের জলটুকু অন্তত... বিশ্রী কাতরতা! ছিঃ!
তড়িঘড়ি বুদ্ধিমতো ওষুধের ডিবে খুলে...।
জানালায় আলো দেখে হাতে চিমটি কেটেছি, না আছি, যাওয়া হয়নি। বুক খালি করে বাতাস বের করেছি। স্বস্তি। কুলকুচি করে লবঙ্গ রেখেছি বিস্বাদ মুখে। চশমা জলে ধুয়ে সাজিয়েছি চোখে, খবরের কাগজে। আজও হলো না দেখছি।


(২)

এখন আমি বিছানার পাশে। খালি চেয়ারটা আমারই, বসেছি এখন। খালি দেখেও বসছে না কেউ। সম্ভ্রমে? আমাকে এবার কী করবে ওরা? আয়না  আমার উলটোদিকেই। তাকিয়ে দেখছি, কই? ছবি তো সটান শোওয়া  মানুষটার। ঘিরেছে পরের প্রজন্মের মানুষজন। কাজ নেই ওদের? অগত্যা করুক, যা চায়। আমি বেরিয়ে গিয়ে ছাদে। কেউ দেখেছে? মনে হচ্ছে না।  ছয়লাপ কাটাকুটি পথে। বর্ডার সিক্যুরিটির বেড়া। বন্দুকের নল। গ্রেনেড। শুকিয়ে প্রিন্টেড রক্ত। যাই... আসি।
ডিঙিয়েছি। আমার লাগেনি কিছু আজ, কোনো যানই না।

নর্থসী-এর শহর। ছুঁচফোটানো হিম বাতাসের মধ্যে দাঁড়িয়েছি। এখানে  এসেছিলাম কবে কোন জীবনে? কেন এসেছিলাম? ভুলে গিয়েছি। সঙ্গে ছিল কি আর কেউ? অথচ সে আমার ছিল না। আমারই মতো কিন্তু... তার সোনারোদ চুল, মাখনশরীর ডবডবে, উষ্ণতার নিশ্চিন্ত নদীস্নান। ওটা ঠিক যে ছিলাম আমিই। মায়া ছিল? ভ্রম? কড়া হুইস্কির সঞ্জীব আবেশ? না। ফায়ারপ্লেস-এর লালচে আঁচে ঊরুর গোলাপী আদর আমাদের, চকোলেটের স্বাদে। কে ছিল সে? আর মনে নেই!

আর সেই ন্যাড়া রোদপোড়া মত্তমাঠ, বটবিরিক্ষে সুতোয় ঢিল, আঁচলের ঘ্রাণ  মা, কই আমার... মিলিয়ে গেছে। অশথপাতার জাল শিরায় কত হিজিবিজি। সকালে উঠিয়া আমি মনে মনে বলি। শাঁখের ফুঁ। এখানে কই? আনন্দ হরির লুঠে উপচে পড়েছে। মনসুরচাচার ভোরের আজান। কুড়িয়ে-কাচিয়ে সুটকেস বয়ে একা আমি স্টেশনপথে। তাতে কবিতার বই? ছিল। কবি হতে চেয়েছি কোনোকালে? মনে নেই!
তারপর শপথ... রুক্ষতার খোলস। চোখে আগুনের চশমা।

অন্য কিছু চাই এবারে মাঠের কাছে? বহু মাইল রিক্ত রুক্ষ মরুভূমির... বরফ জমা দেহের কাছে?

পুরনো বিছানায় শুয়ে আছে এখন নাকে তুলো গুঁজে, বাতাসবিরহিত। চিনতে পারি না। চোখের কোটরে পাতায় মাটির নিচের শব্দ আর কম্পন কিম্বা অন্ধকার। আমি যা তাই কি আদপে সত্যি?
আমি খুঁজেছি কাটাকুটি রাস্তায় হাজারটা প্রদীপ হাজারটা দপদপ... ভাবার সুযোগ? দেখার, বিস্মিত হওয়ার ঘুলঘুলি?

চলেছি নীলপথে। মেঘেরা রাস্তা বলে দিয়েছে। ভারহীন লাগছে, অপার সমৃদ্ধ প্রচুর ভরপুর। আগে আপাতত, উত্তর সমুদ্রের দিকে কাটিয়ে যাব দীর্ঘ প্রদক্ষিণে। ঠাণ্ডা নির্মল বসন্ত। নীলনয়না নির্জন কার্পেট ঘাসে, সাদা লেসের স্কার্ট, জুতোমোজা। ওই কি সে? দেখি কাছে যাই, পাশে বসে অহেতুক ডেকে, কবিতায় চমকে দেব।
এখানে জলের আল্পনাকে সাবধানে বাঁচিয়ে মধ্যযুগের ব্রিজ পাশাপাশি। সার্থক স্থপতি সব। চোখ খুলে, বুজে, স্বপ্নের যে কোনও সড়ক বেছে...।


দু'মুঠোই ভর্তি এখন। ভেবেছি, পরজন্মে ঠিকঠাক ইচ্ছেগুলো ঢেলে সাজাব।  তারপর...

0 কমেন্টস্:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন