কালিমাটি অনলাইন

দ্বাদশ বর্ষ / পঞ্চম সংখ্যা / ১২৫

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

দ্বাদশ বর্ষ / পঞ্চম সংখ্যা / ১২৫

শুক্রবার, ২৭ মার্চ, ২০১৫

মেঘ অদিতি


পরের বসন্তে



()
তখন সন্ধ্যা গুটিসুটি সন্ধ্যাতারাকে সাথে নিয়ে নেমে আসছে শহরের বুকে শহর সাজছে আলোকমালায় মেয়েটা, তার শরীরে তখন একুয়ামেরিন ছোঁয়া, যেন সমুদ্র হাসছে। পুরুষ শোভিত আর্মি গ্রিন- বাতাসে ছড়াচ্ছে দার্জিলিং চা সৌরভ ঠিক  তখনই মেয়েটা সামনে এসে দাঁড়ালো আর আর্মি গ্রিন তার উষ্ণ হাত বাড়িয়ে দিল। হাসিখুশি একুয়ামেরিন সেই হাতে হাত মেলাতেই বসন্ত আসার আগেই কত দোলের রঙ চলকে উঠে ছলকে গেল মোহন ভঙ্গিতে।

-   হুমম.. নস্টালজিয়া ব্যাপারটা আমার ঠিক পোষায় না।
ঠোঁট উলটে সহজ ভঙ্গিতে কাঁধ ঝাকালো সে। সে অর্থাৎ সেই পুরুষটি যার আর্মি গ্রিন রঙ এখন ঈজিপশিয়ান ব্লু-তে এসে থমকেছে।  
-   ইস্যু করা ক্রেডিট কার্ডের পিন কোডটা আমি মনে করতে পারছি না।
শুকনো ঠোঁট জিভ দিয়ে ভিজিয়ে নিতে নিতে মেয়েটা নিচু স্বরে বলল। বোধহয় সে বলতে চাইছিল, আমাদের সবটাই বর্তমান। অতীত স্মৃতি বলে কিছু এখনও তৈরি হয়নি। যা বর্তমান তার ভেতরই তো আমাদের বাস আজ, কাল, পরশু, পক্ষকাল, মাস, ছ মাস বা বছর এ সমস্তই তোমার কাছে অতীত হয়ে ওঠে কি করে!

পুরুষটির ভাইব্রেশন মোডে রাখা ফোন তখন ঘনঘন কেঁপে উঠছে। তার ব্যাকব্রাশ করা চুলে ঠিকরে পড়ছে গ্রীষ্মকালীন আলো। স্টে কানেকটেড ভঙ্গিতে সে তার হাতের মুঠোতে রাখা সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং-এ আঙুল বোলাচ্ছে আর কখনও হাসি হাসি মুখে  মেয়েটার দিকে দুএকটা উত্তর ছুঁড়ে দিচ্ছে। মেয়েটা সে উত্তরগুলোকেই লুফে নিয়ে একটা উলের বল বানাচ্ছে শূন্যে আর ভাবছে আগামী শীতে সে তার পুরুষটিকে একটা পুলওভার বানিয়ে দেবে।


()
পরের বছর। শীতের পাতা ঝরা তখনও শুরু হয়নি, তবু ঢের আগেই তানপুরার  ধুলো ঝাড়ল মেয়েটা। আঙুল ছোঁয়ালো তারে, কিছু যেন ভাবতে ভাবতে সুর হয়ে উঠতে চাইল সে। সন্ধ্যা নেমে আসার ছায়া তার ঘরেখাবার টেবিলে তখনও ঢাকা দেওয়া দুপুরের খাবারএকটা গ্লাসে আধখাওয়া জল, একটা আপেলের শরীর বিদ্ধ করে সটান দাঁড়িয়ে থাকা এক অহঙ্কারি ছুরি।

তার শরীরে ঘিরে মোভ রঙা লঙ স্কার্ট, লাইম ইয়েলো টপে আদুরে মায়াহঠাৎ ডোরবেল টুং টাং। তার ভ্রূ দু’টো খানিক জ্যামিতিক ঢঙে কুঁচকে ফের সোজা হলোআই হোলে চোখ রাখবার আগে তার একবার মনে হলো, দরজায় পরিচিত কেউ তো  আর আসে না অনেকদিন। দুধ, কেবল লাইন বা দৈনিক কাগজের বিল, এর বাইরে  তার ডোরবেলে হাত রাখে না কেউ। কর্পোরেট হবার সুবাদে প্রতিবেশি হিসেবে কে বা কারা তার আশেপাশে থাকে সেটাও সে বলতে পারবে না। আর তার আপনজনেরা... বুক থেকে বেরিয়ে আসা শ্বাসটাকে সে চারদেয়ালে ছড়িয়ে দিল। বেলটা আবার বেজে  উঠল, টুং... কিছু না ভেবে সটান সে দরজা খুলে দিল
  
ঘরে ঢুকে পড়ল এক ঝলক হাওয়া, কৃস্টাল ডিওর-এর মাতাল সৌরভ আর অপার  শূন্যতা। মেয়েটা হঠাৎ তার মোভ আর লাইম ইয়েলোর সন্ধিস্থলে, স্ফীত হয়ে ওঠা পেটে তার হাত দু’টো আড়াআড়ি রাখল। চোখ বুজে বুক ভরে ডিওর-এর শ্বাস  নিল। তারপর দরজা বন্ধ করে তানপুরার তারে হাত রেখে চোখ মেলে দিল অন্ধকারে।

অন্ধকারের চোখ থেকে নেমে আসা রূপালি রেখায় এবার সন্ধ্যাতারা নামুক না নামুক, আমরা কখনও আর জানতে পারব না, পরের বসন্তে তার ডোরবেল  আরেকবার বেজে উঠেছিল কি না...






2 কমেন্টস্: