কালিমাটি অনলাইন

দ্বাদশ বর্ষ / পঞ্চম সংখ্যা / ১২৫

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

দ্বাদশ বর্ষ / পঞ্চম সংখ্যা / ১২৫

সোমবার, ২২ সেপ্টেম্বর, ২০১৪

১১) অলোকপর্ণা


ঈশ্বর


বৃষ্টিভেজা মেয়েটা ফ্লোরে ঢুকে এলো। জুম করে তার কাছে যেতেই দেখা গেল  কুর্তি থেকে টপ টপ করে জল পড়ে কমলা কার্পেটকে লাল করে দিচ্ছে।
মেয়েটার পায়ে পায়ে চলতে চলতে ক্যামেরার চোখ তার ডেস্ক অবধি পৌঁছল। বয়স্ক ভদ্রমহিলা তৈরি ছিলেন তাকে কাজ দেওয়ার জন্য। কাঁধ থেকে ব্যাগ নামিয়ে মাটিতে রাখার আগেই তাকে কাজ দেওয়া
হলো। মেয়েটা ওড়না ঠিক  করতে করতে কাজে হাত লাগালো।

এক ঘন্টা পরে পর্দায় চোখ রাখতে দেখা যায়, ডান হাতে কাজ করতে করতে  মেয়েটা বাঁ হাতে কান খোঁচাচ্ছে। আজকাল এমন প্রায়ই ঘটে। প্রথম প্রথম খুবই সচেতন থাকত সে। মাস দুয়েক পরই তাকে একদিন কীবোর্ডের ওপর ঘুমে ঢলে  পড়তে দেখা যায়। জুম করতে স্পষ্ট হয়েছিল মেয়েটার শান্ত অসুখী মুখ। সুখ জিনিসটা আসলে অশান্তই। শান্তিকে তাই অসুখের হাত ধরে আসতে হয়। কুড়ি মিনিট পঁচিশ সেকেন্ড পর মেয়েটা নিজে থেকেই জেগে উঠে চমকে ছাদে লাগানো ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরাগুলোর দিকে তাকিয়েছিল। পর্দায় জুম করে দেখা হলো মেয়েটার চোখ যেমনটা ভাবা হয়েছিল তাই-ই, অসুখী শান্ত দুটো  চোখ নিয়ে মেয়েটা ভয়ে ভয়ে তাকিয়েছিল ক্যামেরার দিকে।
কেউ মেয়েটির বিরূদ্ধে অভিযোগ জানায়নি এ
ব্যাপারে।

সবাই যখন ঘরে ফিরে যায়, মেয়েটা বসে থাকে। ঠান্ডা ফ্লোরে কাঁপতে কাঁপতে মেয়েটা বসে থাকে। তাই সবকটা ক্যামেরাও চালু রাখতে হয়। নির্ধারিত সময় পার হয়ে যাওয়ার পরও কেন সে বসে আছে, আন্দাজ করা যায় না। শুধু বোঝা যায়, সে কম্পিউটার স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে আছে স্থির হয়ে। জুম করতে দেখা যায়, একটা ছবি খুলে রাখা আছে স্ক্রিনে। আরো জুম করার বৃথা চেষ্টা  করা হয়, -- ক্যামেরার ক্ষমতা সীমিত।  
এমনই চলে বেশ কিছুদিন আবার একদিন দেখা যায় মেয়েটা হাসছে, বয়স্ক  ভদ্রমহিলার গায়ে ঢলে পড়ে হাসছে। দেখতে বেশ ভালোই লাগে তখন।  ক্যামেরাগুলোর চোখ সেদিন ঘুরে ফিরে মেয়েটার মুখে এসে পড়ে। বাইরে রোদ বোধহয় একটু বেশিই ওঠে, বাসে কন্ডাক্টরের চিৎকারও মধুর শোনায়।

বৃষ্টিভেজা মেয়েটা চেয়ারে বসে আছে চুপ করে। বয়স্ক ভদ্রমহিলা নিজের কেবিনে ঢুকে গেছেন। অনেকক্ষণ হলো, মেয়েটার সামনে আধখানা কাজ খুলে  রাখা। ক্যামেরা জুম করে তার কম্পিউটার স্ক্রিনে। মেয়েটা আস্তে আস্তে অন্য কোনো ফোল্ডারে এলো। একটা ছবি বেছে নিয়ে খুলল। কিন্তু আর জুম করা সম্ভব  নয় জেনে মেয়েটার মুখে নজর রাখা হয়। স্থির চোখে ছবিটাকে দেখছে মেয়েটি।

তারপর একসময় কীবোর্ডের এক কোণায় থাকা ডিলিট বাটনে চাপ দিতে দেখা  গেল তাকে।

খালি স্ক্রিন থেকে ক্যামেরা মেয়েটার মুখে এসে পড়ে। আবার জুম করার বৃথা চেষ্টা করা হয় করা না গেলেও বোঝা যায় মেয়েটা কাঁদছে, স্থির হয়ে  কাঁদছে, শান্ত হয়ে কাঁদছে।

পর্দার এপাশে বসে থাকা মানুষটি চশমা খুলে নেন, কাচটা তার বেশ আবছা লাগছিল।



1 কমেন্টস্: