আগ্নেয়গিরি
(১)
মাথার সমস্ত চুল ঝরে পড়ে
যাচ্ছে আমার। পড়ে যাবার পরে প্রত্যেকটা চুলের গোড়া নাকে লাগিয়ে দেখি, বারুদ বারুদ
গন্ধ। তার মানে গলন্ত লাভা। কী করে এরকম হলো জানি না। আমি
এ্যাপার্টমেন্টের দোতলার মিস্টার ধরকে, পাড়ার চমকদাকে, নাকতলার কাকু-কাকিমাকে,
অফিসে নাতাশা-আসিফকে, ফেসবুকে আটান্নজন ভার্চুয়াল অন্তরঙ্গকে জিজ্ঞেস করেছিলাম।
ওরা বলল, এমন নাকি কস্মিন্কালেও শোনেনি। আমি তক্ষুণি পটাং করে চুল ছিঁড়ে গোড়াটা
শুঁকতে বললাম, আশ্চর্য, কেউ রাজি হলো না। ওতে কি
গু-মাখানো আছে নাকি? বলল, ‘ডাক্তার দেখা-দেখাও-দেখান!’
(২)
পড়েছি যে এ্যাসিড বৃষ্টি,
শুনেছি যে মাছ বৃষ্টিও নাকি হয়েছে পৃথিবীতে। মেঘ করেছে দেখে ভিজব বলে আমি আটতলার
ছাদে গিয়ে দাঁড়ালাম। আগুন নিভেও যেতে পারে তো! আমার টপফ্লোর,
আশেপাশে আর ফ্ল্যাট দেখি না। অন্য নিচু বাড়িদের
থেকেও দেখা যায় না। হঠাৎ বৃষ্টি এলো। তাতে জল নেই। কালো-সবুজ-হলুদ-নীল-খয়েরি- সাদা আরও নানান্ রঙের পালক আর লোম ঝুরঝুর, তারপর ঝমঝম করে
ছাদটা ভরে গেল। তাতে পোড়া বারুদ গন্ধ। আমার মাথা থেকে কি আগুন বেরচ্ছে ওপর দিকে?
বুঝতে পারছি না।
(৩)
ডাক্তার আমাকে অনেক ওষুধের
সঙ্গে ‘শান্তিসুরভি’ বলে একটা মাথায়
মাখার তেল দিয়েছেন। তাতে নাকি আগ্নেয়গিরি ঠাণ্ডা হয়ে নিভে যাবে। তেলের রঙটা অনেকটা
জল-মেশানো রক্তের মতো পাতলা। ওটা মাখতে মাখতে আমার সব চুল
পড়ে গেল, আর ঘুমও পায় বড়।
মাথাটা আলগা, হাল্কা, শান্ত, ঝিমঝিম।
(৪)
মোম বলল, ‘জান, গাজায় শিশুমৃত্যুর সংখ্যা?’
বললাম, ‘থাম থাম, ওগুলো সফট
টয়ের হাতপায়ের টুকরো ছিল। তোমার শখের মজদুরি বন্ধ কর!’
(৫)
‘খবরে প্রকাশ অমুক
স্কুলের মিড-ডে মিলে টিকটিকি পড়ে পঁয়ষট্টি জন ছাত্রছাত্রী গুরুতর অসুস্থ’। ঝি মঙ্গলা বলল, ‘ভাগ্যিস আমার মেয়েটা ওইদিন ইশকুল কামাই করেছিল!’
(৬)
যাওয়ার আগে শুনলাম, বিষমাখা
পাঁউরুটির টুকরো খেয়ে সন্তুদের বাড়ির দুটো পোষা বেড়াল মরেছে। ওগুলো আসলে নেংটি
ইঁদুর মারার কড়া বিষ। এ্যাম্বুলেন্সে বসে আমি হাসপাতালে চলেছি। শুনে বললাম, ‘কেয়া বাত!’
0 কমেন্টস্:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন