কালিমাটি অনলাইন

দ্বাদশ বর্ষ / পঞ্চম সংখ্যা / ১২৫

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

দ্বাদশ বর্ষ / পঞ্চম সংখ্যা / ১২৫

সোমবার, ২২ সেপ্টেম্বর, ২০১৪

০৪) নভেরা হোসেন




ব্যাগের মধ্যে একগুচ্ছ নির্জনতা...

সকাল থেকেই বৃষ্টি ঝরছেঝিরঝিরে নয়, একদম ক্যাটস অ্যান্ড ডগসএই বৃষ্টিতে  ভিজতে ইচ্ছে করেইচ্ছে করলেই ভেজা যায় না, তার জন্য প্রস্তুতি লাগেনা না  ভেজার জন্য ছাতা, বর্ষাতি লাগে না, লাগে ঐরকম বৃষ্টি হতে পারার ইচ্ছেনিজেকে ভিন্ন ধাতুর না ভাবতে পারার দ্যোতনাএটা খুব সহজ নয়, আবার খুব যে কসরৎ করে পেতে হবে, তাও নয়আমাদের সময়ের নায়ক- লেরমন্তভের হাতে তৈরি হয়েছিল, তাকে অর্ডার দিয়ে বানানো যায়নিঅগ্নি রায়ের সাথে পরিচয়টাও মিরাক্যালঅনেকটা ছাই ঝাড়তে ঝাড়তে হাতে কার্বন এসে লাগলএটা দ্যুতি ছড়াচ্ছিল না, কিন্তু ত্বক বুঝতে পারে ত্বকের ভাষা, যেমন কবিতা কবিকে চিনে নেয়হাত কেটে গেলে ছোটবেলায় নানু দুর্বা-ঘাস ছেঁচে হাতে লাগিয়ে দিতএটা মহৌষধের মতো কাজ করত, যাকে এখন  এন্টিবায়োটিক বলছিকবিতা, গদ্য,  নানা ধরনের টেক্সট পড়তে পড়তে বেশ অনেককাল গেলবয়সের হিসাবে সেটা বেশি নয়, সময়ের হিসাবে দীর্ঘউড়োজাহাজে চেপে অগ্নির বই দিল্লি থেকে ঢাকায় এলো, সূর্যাস্তের সঙ্গদোষ, ব্যাগের মধ্যে নির্জনতাপ্রথম যেটা হয়, কয়েকদিন বইটার গন্ধ   শোকা, কবিতাকে অনুভব করা সুব্রত চৌধুরীর প্রচ্ছদে চোখ আটকে গেল ব্যাগের   মধ্যে ঢোকবার নিরন্তর ইচ্ছা যে ব্যক্তি নির্জনতা খোঁজে তার অবয়বহীন অবয়ব   বইয়ের গন্ধ শোকা, গরম তেলে চিকেন ফ্রাই সব চলছিল। সময় মতো এর মধ্যে  অন্য সব ঘড়িও চলছিল ঠিক ঠিকবইয়ের পাতা ওল্টাতেই অভ্যুত্থান, শিলাবৃষ্টিএকটা ক্রুসেড হতে হলে অনুসরণকারীরা নিজেকে উৎসর্গ করে, আর অগ্নি রায়ের  অভ্যুত্থান ঘটে মগজের ভেতরে, একদম অষ্টমেরক্তের শেলগুলো ভেঙে ভেঙে দ্বিগুন,  চতুর্গুন হয়অগ্নির অভ্যুত্থানে পাত্র উপচে পড়ছে, তাকে ধার করার মতো লোক এ তল্লাটে কমপ্রবল শিলাবৃষ্টিতে চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়ে যায় পালাবার সব পথপোড়া কাকের  মতো বুকে হেঁটে কতদূর আর যাওয়া যায়? গ্ল্যাসিয়ার, প্রধান বরফ বুকে হেঁটে  কতটা পথ যেতে পারে? হয়তো কোনো সূর্যাস্ত পর্যন্ত, নয়তো কোনো কোরকের জেগে ওঠবার কাল পর্যন্তবরফ কাটতে কাটতে একসময় জলও ভেঙে যায়চোখে-মুখে এসে লাগে টুকরো টুকরো জলকণাএই জল নোনা, এই জল কেদাক্ত, এই জল সিঁদুররাঙাএই জল তোটক, এই জল লুব্ধকজল তরঙ্গ শুনতে শুনতে গওহরজান, মালকাজানদের নাচের মুদ্রা রক্তে শিরশিরে অনুভূতি জাগায়অগ্নির ভাষায় একটা ভাষা ভাঙার অস্ত্র আছেএজন্য মিসাইল, বুলডোজার, হামাম দিস্তা কোনো কিছুরই প্রয়োজন হয় নাসুররিয়াল ঘরানার ভেতরে থেকে তার বাইরে, ছন্দের ভেতরে থেকে তার বাইরে, দৃশ্যের ভেতরে থেকে তার বাইরেভাইস-ভার্সাএই হচ্ছে ব্যাগের মধ্যে নির্জনতার লেখক, কবিতার করাতকলে কাটা পড়েছে শরণার্থী শেষ মেলট্রেন, বাসি  বিবাহের ক্লান্ত হুলুধ্বনি, নৈশ ক্যালেন্ডার আরও অনেক অনেক প্রত্নতত্ত্বত্বকের বিপ্লব ঘটাতে কবি ছুঁচ বৃষ্টির আবহ তৈরি করেনঅগ্নি তার কবিতায় এমন একরকম দৃশ্যের অবতারণা করেন, যেখানে সন্ধ্যাবেলায় কবরের ফুল সব লুট হয়ে যায় চিরন্তনতা কবি জানেন, আর তা যত ক্লিশেই হোক তা অবধারিত - এই যে অমোঘ  বোঝাপড়া, একে কোনো কিছুর সাথে তুলনা করা যায় নাসময়, হ্যাঁ একমাত্র  সময়ের চোখ দেখতে পায় এই অশান্ত অথচ নিবিড় বাস্তবতাকেসময়েরও দাঁত আছে, শিং আছে; খুঁড়ে নেয় আরও আরও নিবিড় সময়কে 

মৃত্যু অগ্নির কাছে একটি মজ শব্দ, যেমন জীবনএই যে দেখতে পারার মন-মগজ  এটা বাংলা কবিতার ভাষা এবং চিন্তার যে সঞ্চালন সেখানে ভীষণ আলাদা এবং একামৃত্যুকে জীবনের সমার্থক করে দেখতে পারাটা পশ্চিমা সাহিত্য ও জীবনে এক স্বাভাবিক ঘটনা, কিন্তু বাঙালির যে সংস্কৃতি সেখানে এ ধরনের মেন্টোফ্যাক্ট কবিতায়  ভিন্ন ধরনের চিন্তার ইঙ্গিত দেয়বর্তমান এবং পরবর্তী প্রজন্মের কবিতায় এ ধরনের গতি বাস্তবতা গতিজাড্যতাকে ভেঙে তৈরি করতে পারবে নতুন কোনো বাস্তবতাকেযা তলিয়ে গেছে আটলান্টিক, ভারত, বঙ্গোপসাগরের অতল গভীরে বা যার হয়তো এখনও জন্ম হয়নিতাকে, সেই প্রত্নকে বা নতুনকে প্রাণ আর শব্দ দিয়ে অগ্নির মতো তৈরি করতে পারবে এক সমান্তরাল পৃথিবীরএক মহা মহা পৃথিবীরআমেন!

ব্যাগের মধ্যে নির্জনতা : অগ্নি রায়
প্রকাশক: গাঙচিল
প্রচ্ছদ : সুব্রত চৌধুরী
মূল্য : ৭৫ টাকা (ভারতীয়)

 

0 কমেন্টস্:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন