কালিমাটি অনলাইন

দ্বাদশ বর্ষ / পঞ্চম সংখ্যা / ১২৫

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

দ্বাদশ বর্ষ / পঞ্চম সংখ্যা / ১২৫

বুধবার, ২৭ আগস্ট, ২০১৪

০২) সোনালি বেগম


মিজরাব্‌

মানবিক  আবেদন অনুভুতির স্পর্শে রঞ্জিত মন্তব্যের ঝড় কখনও কখনও আছড়ে পড়ে । মন-মন্দিরে আকর্ষ-অপকর্ষ প্রহার চলতে থাকে ।
ইমন-এর বন্ধুরা প্রিয়ভাষ্যে মাঝে মাঝেই কল্ করে তাকে । কিন্তু ইদানিং অজানা ফোন কলে অস্থির সে এবং তার পরিবার ।
‘হ্যালো’ ইমন মোবাইল তোলে
‘আপনার মিসড্ কল্ ছিল’   
‘রং নাম্বার’ 
‘রং নাম্বার নয় । আপনার নাম কি, ম্যাম?’
‘রং নাম্বার’ ইমন ফোন কেটে দেয় ।
ইমন সেতারের নায়কীর তারে মিজরাব্ দিয়ে একটি আঘাতে বাঁহাত দিয়ে চারটি স্বরকে একই সঙ্গে বাজাবার চেষ্টা করে । এই গিটকিরি-র আনন্দই তাকে জারিত করে । কখনও মিজরাব্-এর সাহয্যে সেতারের চিকারীর তারে ছন্দবদ্ধ এবং দ্রুত আঘাত করে ‘ঝালা’ দিতে থাকে সে ।
অবিরাম মোবাইল রিং হচ্ছে ।
‘হ্যালো, কে বলছেন ?’ ইমনের মা অন্তরা-র গর্জিত কণ্ঠস্বর
‘ম্যাম্ আপনার নাম কি ?’
‘মানে ? ফোন করেছেন আপনি, আপনার নাম বলুন’
‘কবে ডাকছেন, কবে দেখা হবে আমাদের ?’
 ‘ননসেন্স, প্লিজ স্টপ ইট’
 অন্তরা মোবাইল বন্ধ করে দেয় । 
 ‘আচ্ছা আপদ’ ইমন সেতার রেখে উঠে আসে
‘এই সংসারে এমন কিছু আছে বা হয় যা সজ্ঞানে বিচার করা চলে না’
‘যুক্তিতর্কের ঊর্ধে, তাই না মম্মি’   
মোবাইল রিং হচ্ছে
‘হ্যালো’ ইমনের এক হাতে মোবাইল
‘ইয়ার কথা বলো । মুভি দেখবে আমার সঙ্গে ?’
‘ড্যাম্ ইট । ননসেন্স । পুলিশ কেস করব’  ইমন ফোন কেটে দিলো । 
‘মম্মি, পুলিশ কমিশনারকাকু মানে হিমাদ্রীকাকুকে ইনফর্ম করি’
‘অবশ্যই । চল, কাল বিকেলে দিল্লির পটপরগঞ্জ, হিমাদ্রিদার বাড়ি চলে যাই ।
সমস্ত খুলে বলব ওনাকে । চিন্তার কিছু নেই । নো প্রবলেম অ্যট্অল ।’
‘মম্মি, দেখেছো, আজ গাজিয়াবাদ টাইম্‌সে কতকগুলো রোমিওর ছবি  বেরিয়েছে । এরা লেডি পুলিশদের ফোনে বিরক্ত করে, কবিনগর থানায় অ্যারেস্ট হয়েছে ।’
মা ও মেয়ে নিউজপেপার দেখতে দেখতে গল্প করতে থাকে ।
‘তুই তো রামনিধি গুপ্ত মানে নিধুবাবু-র টপ্পা শুনতে ভালোবাসিস’
‘দেখো মম্মি, সুরশিল্পী নিধুবাবু ১৭৪১ সালে হুগলী জেলা চাঁপতা গ্রামে আবির্ভূত হন । উনি নতুন ধারার টপ্পাশৈলীর সংগীত রচনা করেছিলেন ।’
‘জানিস তো, কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ, অতুলপ্রসাদ, রজনীকান্ত, দ্বিজেন্দ্রলাল প্রমূখ
নিধুবাবুর টপ্পার প্রশংসায় পঞ্চমুখ ছিলেন ।’
‘আত্মনিবেদনের সুর, যে কোনো ভক্তমনকে সাড়া জাগাতে সক্ষম’ অন্তরা জানলার পর্দা সরিয়ে  ঝলমল পূর্ণিমার চাঁদ দেখে ।
‘ঠিক বলেছো, মম্মি । মীরাবাঈ, সুরদাস, তুলসীদাস, কবীর ইত্যাদির নাম চির ভাস্বর হয়ে থাকবে ।’
‘আচ্ছা, এখন সেতারে কোন রাগ বাজাবি ?’
‘ভীমপলশ্রী নাকি বাগেশ্রী শুনবে ?’
‘দিনের বেলা ভীমপলশ্রী, রাত্রে বাগেশ্রী’
‘তবে বাগেশ্রী বাজাই’    
অন্তরা ও ইমন-এর ভাবের ঘরের দরজা খুলে, রূঢ় বাস্তব ও যান্ত্রিক সভ্যতা থেকে বহুদূর স্বতঃস্ফূর্ত সুখ ও দুঃখের সংগীত বাজতে থাকল ...

0 কমেন্টস্:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন