কালিমাটি অনলাইন

দ্বাদশ বর্ষ / পঞ্চম সংখ্যা / ১২৫

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

দ্বাদশ বর্ষ / পঞ্চম সংখ্যা / ১২৫

বুধবার, ২৭ আগস্ট, ২০১৪

০৯) অচিন্ত্য দাশ


কৌটো

ছোট নাতনি শ্রীরূপা মানে টুনুর সেই ছোটবেলা থেকে ঠাকুমার দিকে কেমন যেন একটা টান আছে। ঠাকুমা নার্সিংহোমে ভর্তি হওয়ার পর থেকে শ্রীরূপা অনেকটাই সামলাচ্ছে। অফিসে যাবার পথে কিংবা  ফেরার সময় ঠাকুমাকে দেখে যায়। আজ এসেছে একটু তাড়াতাড়ি, ডাক্তারের সঙ্গে কথা বলার জন্য সময় নিয়েছে।
-   আমি পনেরো নম্বর কেবিনের সুহাসিনী ঘোষের বাড়ি থেকে... কাল ফোনে  সময় নিয়েছিলাম... জানতে চইছিলাম ওনার অবস্থা মানে মেডিকাল কন্ডিশন  এখন কেমন!
ডাক্তারমশায় একটা ফাইলে চোখ বুলিয়ে বললেন – আপনি ওনার কে হন?
-   নাতনি। ছেলের মেয়ে।
-   শুনুন, অবস্থা খুবই ক্রিটিকাল। আত্মীয়স্বজনদের খবর দিতে পারেন।
-   মানে... আশা নেই...
-   নেই বললেই চলে। কোনো মিরাকেল না হলে...
-   কতদিন বাঁচবেন বলে মনে হয়!
-   আমার ধারণা, খুব বেশি হলে দিন দশেক...
-   দেখে তো মনে হচ্ছে না, তেমন কোনো কষ্টও নেই! 
-   ওটা ওষুধের জন্য, তবে শেষ কটা দিন কীরকম যাবে, তা বলা যায় না।
-    
শ্রীরূপা ডাক্তারের ঘর থেকে বেরিয়ে এলোগলার ভেতরে, সুপুরি খাওয়ার পর যেমন  হয়, তেমন কী একটা আটকে আছে বলে মনে হচ্ছে। এতদিনের ঘরসংসার, পুজোআর্চা সব কিছুর মায়া কাটিয়ে ঠাকুমাকে চলে যেতে হবে!
কেবিনে ঢুকে টুনু ঠাকুমার কম্বলটা একটু ঝেরেঝুরে পরিপাটি করে গায়ে ঢাকা দিয়ে দিল।
-   ডাক্তার কী বলল রে?
-   বলল তুমি ভালো হয়ে যাবে
-   সত্যি বলছিস?
-   নয় তো কি মিথ্যে বলছি! তুমি ভালো হয়ে যাবেই যাবে।

একটু জল খাইয়ে, ভেজা তোয়ালে দিয়ে মুখটুখ পুঁছিয়ে দিয়ে শ্রীরূপা বলল – এবার যাই, এগারোটার মধ্যে আফিসে হাজিরা দিতে হবে। বিকেলে আসব। নিজে উঠতে যেও না, বেল দাবাবে। দুপুরে ঘুমোবে...
-   অ্যাই শোন্, এদিকে আয়!
টুনু বিছানার কাছে এলো
-   ওই দেরাজটা খোল্, হ্যাঁ, ওই বড় কৌটোটা রয়েছে না, ওটার ওষুধ শেষ হয়ে গেছেআমি রেখে দিয়েছি। বিকেলে আসবি তো তুই, তখন বাড়ি নিয়ে যাবি।  তেজপাতা রাখার ডাব্বাটায় মরচে ধরে গেছে, ওইটাতে তেজপাতা রাখব...কৌটোটা দেখতেও বেশ... ভালো হবে, না?



0 কমেন্টস্:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন