কালিমাটি অনলাইন

দ্বাদশ বর্ষ / পঞ্চম সংখ্যা / ১২৫

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

দ্বাদশ বর্ষ / পঞ্চম সংখ্যা / ১২৫

বুধবার, ২৭ আগস্ট, ২০১৪

০৪) রুণা বন্দ্যোপাধ্যায়


গরীবের সংজ্ঞা

-জানো সমুদা, ডেভিড শিরো নামে আমেরিকায় একজন আর্টিস্ট আছেন!
-আর্টিস্ট তো সব দেশেই আছে, তাতে হয়েছেটা কি?
-না তেমন আর্টিস্ট না, এক্কেবারে নতুন ধরনে
-নতুন রকম ছবি আঁকেন নাকি রে ঋতু?
-ছবিই, কিন্তু আবার ছবিও নয়
-তুই যে দেখি কবিদের মতো কথা বলছিস! সোজা কথাটায় ওমন কাব্যি কেন  বাছা?

ঋতুর নাকের ডগা লাল হয়ে ওঠেঠোঁটটা ফোলাতে গিয়েও সামলে নেয়বড় হচ্ছে না! ঋতুর বাঁহাতটা নিজের মুঠিতে ধরে একটু চাপ দেয় সমুবলে,
-আজকাল তুই কবিতা লিখছিস, না রে?
-যাঃ, মোটেই না!
-আচ্ছা না হয় না লিখিস, আজকে তোর একটা কবিতা আমায় শোনা না ঋতু!
-না, কিছুতেই না, কক্‌খনো না
-আচ্ছা না হয় না শোনাস, লিখিস কিন্তু!
-লিখবই তো, বেশ করব, তোমার তাতে কী!

না, সমুর আর তাতে কী! সেও তো খুব বড় সড় নয়সদ্য স্কুলের গণ্ডি পেরোনো  যৌবনে জেদখানাই কী কম! প্রমাণ করেই ছাড়লে যে ঋতু কবিতা লেখে, কিন্তু গোপনে গোপনে

সমু আবার শুরু করে প্রবল বিক্রমে,
-আচ্ছা ঠিক আছে, কবিতার কথা ছাড় তো, যত সব বাজে জঞ্জাল! তোর সেই আর্টিস্টের কী হলো শুনি বরংকেমন রে সে ছবি?
-শিল্পী তার নাম দিয়েছেন রাব আর্ট
-সেটা আবার কী বস্তু? রাবিং করে নাকি রে?
-হ্যাঁ তো! যার ছবি তার ওপর কাগজ রেখে পেনসিল দিয়ে ঘষে ঘষে ছবি তৈরি  করাঅনেকটা ছাঁচ শিল্পের মতো
-ছাঁচের সন্দেশ, আহা কতদিন খাইনি!
-পেটুক কোথাকার! জানো তো সমুদা, সেদিন একটা লিটল ম্যাগাজিনে পড়লাম,  একজন কবি ওই শিল্পের নাম দিয়েছেন ঘর্ষকলাকেমন না!
-বেশ ভালোই তো
-হুঁ!

ঋতুর কথার তোড়ে হঠাৎ অবরোধ বসে। নিঝুম হয়ে কী যেন ভাবেতারপর  উদাসীন গলায় একটা অদ্ভুত প্রশ্ন করে,
-গরীব মানে তুমি কী বোঝ সমুদা?
প্রশ্ন শুনে থমকে যায় সমুঋতুটা কি কবিতার ফাঁকে ফাঁকে সমাজতন্ত্র পড়তে শুরু করেছে নাকি? কী উত্তর দেবে বুঝে উঠতে পারে না যেনখানিকটা সময়  নেয়তারপর, এড়িয়ে যাওয়ার ভঙ্গিতে বলে,
-ওই যারা খেতে টেতে পায় না, থাকার ভালো ঘর নেই, তাদেরকেই গরীব বলে আর কী!
ঋতুর বুকটা মুচড়ে ওঠেএই সহজ সংজ্ঞাটা সে কেন মেনে নিতে পারছে না? ঝকঝকে মুখে শ্রাবণ ঘনায়বলে,
-জানো তো সমুদা, শিরোও না খুব গরীবমানে ওই তোমার সংজ্ঞা অনুযায়ী
সমু একটু ধন্দে পড়ে,
-গরীব যে, সে গরীবইতার আবার আমার সংজ্ঞা তোমার সংজ্ঞা কী?
চুপ করে যায় ঋতুকিসের ভারে যেন মাথাটা ভার হয়ে আসেআচ্ছন্নের মতো বলে ওঠে,
-কিন্তু সমুদা, যিনি এমন একটা নতুন কলার সৃষ্টি করেছেন, তিনি তো একজন স্রষ্টাতিনি গরীব হতে যাবেন কোন্‌ দুঃখে?

হতবাক সমু ঋতুকে দেখে। এই ঋতুরই নাকি মনের জানালা খুলে দেবার জন্য সে  কলেজ লাইব্রেরি থেকে পত্রপত্রিকা এনে দেয়! ঋতুর শরীর থেকে উঠে আসা অচেনা ঘ্রাণ ক্রমশ বিবশ করে সমুকে। তবু মন খারাপের জানালাটাকে খুলে দেওয়ার জন্য  সে কবিতার দোহাই দিয়ে বলে ওঠে,
-ঋতু রে... কবিতা লিখে লিখে তোর মাথাটা বিগড়েছে দেখছি!

এতক্ষণে বয়সের বেড়া ডিঙিয়ে যায় ঋতুসমুর চুলের মুঠি ধরে টান দেয় সজোরেসমুই বা কম যায় কিসে? ঋতুর লম্বা বেণীতে টান দেয় কষেচুলোচুলি লেগে যায় দারুণ রোষে


0 কমেন্টস্:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন