মণিমাসি ও ফ্রিজ
দু’দিনের না খাওয়া ডাল, তিনটে টিফিন বক্সে একটু একটু মিষ্টি। পাঁচ দিন আগের পায়েস। স্যালাড যেটা এখন মৃত, জীবাশ্ম। ফল, ফলের ট্রেতে শুকিয়ে আসছে। মাছ মাংস চাঁই বরফ। অনেকদিন ডিফ্রস্ট করা হয়নি। মণিমাসির ফ্রিজের অবস্থা দেখলে মণিমাসির মনের অবস্থা বোঝা যায়। মণিমাসির ফ্রিজ নতুন নয়, ফ্রস্টফ্রি সিস্টেম নেই, তাই বরফ জমেই চলেছে।
--হ্যালো, মণিমাসি, কী করছ?
--কী আর করব, এইই, কাগজ পড়লাম, এবার রান্না করব।
--কী রাঁধবে?
--ওই, কিছু একটা। মাছ আনেনি তোর মেশো, তাই তরকারি আর ডাল করেই চালিয়ে দেব।
--কেন গো, তুমি তো রোববার করে বাজার করে ফ্রিজে রেখে দাও, তাই না?
--সে এখন বের করা মহা হ্যাপা। কাল হবে খন। তা ছাড়া আজ তো রান্না করার তেমন দরকার নেই, মেশো অফিস যায়নি তো আজ!
--মেশো আজও অফিস গেল না? কেন গো? শরীর খারাপ?
--ধুৎ, তোফা আছে, এই তো সারা সকাল কাগজ পড়ল, এখন টিভি দেখছে। ওর নাকি আজকাল অফিস যেতে ভাল্লাগে না। আচ্ছা কোনোদিন শুনেছিস এমন, বুট্টি? --অফিস যেতে আবার ভালো লাগা না লাগা কি? কেউ বলছে না কিছু? ছুটি পাচ্ছে?
--নাঃ ছুটি সব শেষ। মাইনে কেটে নিচ্ছে।
--সে কি গো? এ তো মহা মুশকিল হলো। বোঝাও মেশোকে, শরীর খারাপ বলছে না তো? তাহলে তো ডাক্তার দেখাতে হবে।
--ওরে শরীরের ডাক্তার দেখানোর কিছু নেই। তোর মেশোকে বোধহয় এবার মনের ডাক্তারই দেখাতে হবে।
চুপ হয়ে যাই, তারপর বলি, তা, কী সবজি রাঁধবে গো?
--পটল আছে, দই পটল করব ভাবছি। আর সব আগের রান্না গরম করে নেব। অনেক কিছু পড়ে আছে।
--বুলটন কেমন আছে মণিমাসি? কথা ঘোরাই।
--ও ভালো আছে রে। ব্যাঙ্গালোর থেকে ফোন করে মাঝে মাঝে। রাখছি বুঝলি, আমার আবার ওদিকে একটু কাজ আছে।
কারোর সঙ্গেই মণিমাসির কোনো ঝগড়াঝাটি কোনোদিন ছিল না। ফর্সা, রোগা, ভীষণ মিষ্টি আমার মণিমাসি। সাত চড়েও মুখে রা না কাড়া স্বভাব। এইরকম ভালো বউ কজনের হয়! মেশো যে কোম্পানিতে কাজ করত, ওদের অড আওয়ারস। মাঝে মাঝে অনেক রাত অব্দি থাকতে হতো অফিসে। তা নিয়েও মাসিকে কোনোদিন আপত্তি করতে দেখা যায়নি। শুধু খাবার পচে যায় মণিমাসির ফ্রিজে, আর বাড়িতে লোক এলে ঠান্ডা, জমাট বাঁধা রসগোল্লা আর অনেকদিন আগেকার সন্দেশ খেতে হয় তাদের।
আমি তাই আর মণিমাসির বাড়িতে যাই না, শুধু ফোনে খোঁজ নিই। সেদিন মণিমাসিকে আবার ফোন করলাম। অনেক দেরি করে ধরল। বললাম, কী হলো তোমার?
--আরে আর বলিস না। ডিফ্রস্ট করতে দিয়েছি ফ্রিজ। সারাঘর জলে ভেসে যাচ্ছে। চাদর, পর্দা, কত কিছু ঠুসে দিচ্ছি তো ফ্রিজের তলায়, তাও। আমার শাড়ি সায়ার তলাটাও জবজব করছে, কাজ করি কী করে বল তো!
--হবে না, এতদিনের বরফ গলছে! বললাম আমি। তমাল মেশো কেমন আছে গো? --ও তোকে তো বলাই হয়নি, ও চাকরিটা আলটিমেটলি ছেড়ে দিয়েছে। মণিমাসি বলল, একটু হেসে। তারপর বলল, একটা বড় টাকা পাবে রে ও, ভি আর এস প্যাকেজ। তাই দিয়ে একটা ফ্রস্ট ফ্রি সিস্টেমের ফ্রিজই এবার কিনে নেব।
দু’দিনের না খাওয়া ডাল, তিনটে টিফিন বক্সে একটু একটু মিষ্টি। পাঁচ দিন আগের পায়েস। স্যালাড যেটা এখন মৃত, জীবাশ্ম। ফল, ফলের ট্রেতে শুকিয়ে আসছে। মাছ মাংস চাঁই বরফ। অনেকদিন ডিফ্রস্ট করা হয়নি। মণিমাসির ফ্রিজের অবস্থা দেখলে মণিমাসির মনের অবস্থা বোঝা যায়। মণিমাসির ফ্রিজ নতুন নয়, ফ্রস্টফ্রি সিস্টেম নেই, তাই বরফ জমেই চলেছে।
--হ্যালো, মণিমাসি, কী করছ?
--কী আর করব, এইই, কাগজ পড়লাম, এবার রান্না করব।
--কী রাঁধবে?
--ওই, কিছু একটা। মাছ আনেনি তোর মেশো, তাই তরকারি আর ডাল করেই চালিয়ে দেব।
--কেন গো, তুমি তো রোববার করে বাজার করে ফ্রিজে রেখে দাও, তাই না?
--সে এখন বের করা মহা হ্যাপা। কাল হবে খন। তা ছাড়া আজ তো রান্না করার তেমন দরকার নেই, মেশো অফিস যায়নি তো আজ!
--মেশো আজও অফিস গেল না? কেন গো? শরীর খারাপ?
--ধুৎ, তোফা আছে, এই তো সারা সকাল কাগজ পড়ল, এখন টিভি দেখছে। ওর নাকি আজকাল অফিস যেতে ভাল্লাগে না। আচ্ছা কোনোদিন শুনেছিস এমন, বুট্টি? --অফিস যেতে আবার ভালো লাগা না লাগা কি? কেউ বলছে না কিছু? ছুটি পাচ্ছে?
--নাঃ ছুটি সব শেষ। মাইনে কেটে নিচ্ছে।
--সে কি গো? এ তো মহা মুশকিল হলো। বোঝাও মেশোকে, শরীর খারাপ বলছে না তো? তাহলে তো ডাক্তার দেখাতে হবে।
--ওরে শরীরের ডাক্তার দেখানোর কিছু নেই। তোর মেশোকে বোধহয় এবার মনের ডাক্তারই দেখাতে হবে।
চুপ হয়ে যাই, তারপর বলি, তা, কী সবজি রাঁধবে গো?
--পটল আছে, দই পটল করব ভাবছি। আর সব আগের রান্না গরম করে নেব। অনেক কিছু পড়ে আছে।
--বুলটন কেমন আছে মণিমাসি? কথা ঘোরাই।
--ও ভালো আছে রে। ব্যাঙ্গালোর থেকে ফোন করে মাঝে মাঝে। রাখছি বুঝলি, আমার আবার ওদিকে একটু কাজ আছে।
কারোর সঙ্গেই মণিমাসির কোনো ঝগড়াঝাটি কোনোদিন ছিল না। ফর্সা, রোগা, ভীষণ মিষ্টি আমার মণিমাসি। সাত চড়েও মুখে রা না কাড়া স্বভাব। এইরকম ভালো বউ কজনের হয়! মেশো যে কোম্পানিতে কাজ করত, ওদের অড আওয়ারস। মাঝে মাঝে অনেক রাত অব্দি থাকতে হতো অফিসে। তা নিয়েও মাসিকে কোনোদিন আপত্তি করতে দেখা যায়নি। শুধু খাবার পচে যায় মণিমাসির ফ্রিজে, আর বাড়িতে লোক এলে ঠান্ডা, জমাট বাঁধা রসগোল্লা আর অনেকদিন আগেকার সন্দেশ খেতে হয় তাদের।
আমি তাই আর মণিমাসির বাড়িতে যাই না, শুধু ফোনে খোঁজ নিই। সেদিন মণিমাসিকে আবার ফোন করলাম। অনেক দেরি করে ধরল। বললাম, কী হলো তোমার?
--আরে আর বলিস না। ডিফ্রস্ট করতে দিয়েছি ফ্রিজ। সারাঘর জলে ভেসে যাচ্ছে। চাদর, পর্দা, কত কিছু ঠুসে দিচ্ছি তো ফ্রিজের তলায়, তাও। আমার শাড়ি সায়ার তলাটাও জবজব করছে, কাজ করি কী করে বল তো!
--হবে না, এতদিনের বরফ গলছে! বললাম আমি। তমাল মেশো কেমন আছে গো? --ও তোকে তো বলাই হয়নি, ও চাকরিটা আলটিমেটলি ছেড়ে দিয়েছে। মণিমাসি বলল, একটু হেসে। তারপর বলল, একটা বড় টাকা পাবে রে ও, ভি আর এস প্যাকেজ। তাই দিয়ে একটা ফ্রস্ট ফ্রি সিস্টেমের ফ্রিজই এবার কিনে নেব।
0 কমেন্টস্:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন