কালিমাটি অনলাইন

দ্বাদশ বর্ষ / পঞ্চম সংখ্যা / ১২৫

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

দ্বাদশ বর্ষ / পঞ্চম সংখ্যা / ১২৫

বৃহস্পতিবার, ২৪ এপ্রিল, ২০১৪

০৪) দেবতোষ দাস

মুখোশ



ঘুম নেই। বিছানায় এপাশ-ওপাশ। বারবার চোখ চলে যায় দেওয়ালের দিকে। পেরেকে ঝুলছে মুখোশটা। হিম নেমে আসে আমার বুকে। ভয় আমাকে গ্রহণ করে।

মুখোশটা আনার পর থেকেই বিপত্তি। অফিস থেকে বেরোতেই একটা মিছিল। ভোটবাজারে সন্ধের পর রাস্তায় এখন এই চলছে। মিছিলে প্রত্যেকের মুখে মুখোশ। একই মুখোশ। একটাই মানুষ কিন্তু অনেক। হঠাৎ দেখেই বুকের ভেতর ছ্যাঁৎ করে উঠেছিল। আমি দাঁড়িয়ে পড়ি। মিছিল দাঁড়ায় না।

আকাশের বুকে একই পাখির ঝাঁক দেখলে বুকে মাদল বাজে। বা পাহাড়ের ঢালে ভেড়ার পাল। দ্রিমি দ্রিমি দ্রিম। তারা একরকম হলেও আতঙ্ক তো আসে না। কিন্তু একই রকম একপাল মানুষ! জীবনে কোনো মিছিল দেখে প্রথম ভয় পেলাম।

মুখোশধারীদের একজন আমার হাতে ধরিয়ে দেয় একটা মুখোশ। ফেলে দেব ভেবেছিলাম। পারিনি। বাড়ি অবধি বয়ে এনেছি। ক্লাস সেভেনের ছেলে হাত থেকে কেড়ে নিয়ে পরেছে। আমি চমকেছি। বস্তুত ছেলে মুখোশটা পরতেই চারোতরফ আতঙ্ক আমায় ছায়। মুহূর্তের মধ্যে হারিয়ে গেল যেন ছেলেটা। সেই মিছিলের এক মুখ হয়ে গেল। আমার ছেলে কই? আমার একমাত্র সন্তান। হাহাকার। শূন্য ঠেকেছিল আমার পায়ের তলা। মাথাও। একটানে খুলে নিয়েছি মুখোশটা। আছড়ে ফেলেছি মেঝেয়। ছেলে অবাক।

মেঝে থেকে তুলে বউ মুখোশটা ঝুলিয়ে রাখে আমাদের শোওয়ার ঘরের দেওয়ালে।

রাতের খাওয়া সারি। টিভি দেখি। ভোট আসছে। নেতাদের বক্তৃতা শুনি। প্রতিশ্রুতি। যথাসময়ে ঘুমোতে যাই। কিন্তু কোথায় ঘুম! দেওয়ালে ঝুলছে সে। হলো-ম্যানের শূন্য দৃষ্টি নিয়ে আমার দিকে স্থির। চোখ সরাতে পারি না। ঘামি। মুখোশটা আমার ঘুম ছিনিয়েছে। নাইট ল্যাম্প নিভিয়ে দিই। তবুও কিছু আলো থেকে যায়। মুখোশটা চোখ সরায় না। আমিও।

আস্তে আস্তে অন্ধকারের নদী পাড় ভাঙে। আমার ভয়।

উঠে পড়ি। আলো জ্বালাই। বউ ঘুমে হাঁ। মুখোশটা দেওয়াল থেকে পাড়ি। উল্টে-পাল্টে দেখি। সবটা। ফাঁকা চোখ দুটো। আঙুল ঢুকিয়ে দিই।

তারপর মুখোশটা পরে আলো নিভিয়ে শুয়ে পড়ি।

দেওয়ালের দিকে তাকাই। শূন্য। আর ভয় নেই। আমার দৃষ্টিপথে আর কোনো মুখোশ নেই। অতঃপর ঘুম মায়াময়। বুকে মাদল। দ্রিমি দ্রিমি দ্রিম।

1 কমেন্টস্: