আলো আঁধারি ও আমি
শ্রাবণী দাশগুপ্ত
চুপচাপ ঢুকে শেষ চেয়ারে বসে পা নাচানোটা ভদ্রতা নয়। এখানে ভয়ানক বিনবিনে মশা। সবকিছুই কি ইচ্ছানুগ? পাপীতাপীদের ভাগবতপাঠ শুনতে আসা স্রেফ উপরোধে। প্লাস্টারখসা পুরনো হল্টা ফুলপাতায় খানিকটা বাহারি। আসুন বসুন করার কেউ নেই, বাঁচা গেল। ঢোকো, বসে পড়ো। বিছানো সতরঞ্চিতে ডেকোরেটরের ময়লা থান। চেয়ারগুলো আর্থরাইটিসওয়ালাদের জন্যে নাকি?
নিমাই আবার শিবেশকেও নিয়ে এসেছে! সাহেব কবে এল? এদিকে? ধপধপে পাঞ্জাবি পরে মক্কেল মাটিতে। ভক্তিতে ডগমগ। ভড়ং! তাকালো, হাসলো, ডাকলো, নিরাশ হলো। বাইরে আপাতত জেনারেটর বোবা। ফ্যানগুলোর বিট্কেল সরবতায় শুরুতেই মোহান্তজীর জ্ঞানদানে বিপত্তি। যাচ্চলে! আদেশানুসারে বন্ধ হলো। আপাতত এখানে পুরোপুরি সুরেলা রক্তদান শিবির। মধ্যবয়সিনীকুলে প্রায় সকলেই বাতসোহাগিনী। চমৎকার!
বৃষ্টি সকাল থেকে সারাদিন চলে একটু মিইয়ে এসেছে। রথ বলে কথা! মস্ত পটে জগড়নাথ ভাইবোনকে নিয়ে। মোহান্ত দৌড়াচ্ছে বিষ্ণুপুরাণ থেকে ভাগবতপুরাণ। নেতা নেতা ভাব। হাতে ছাপা কাগজ দিয়ে গেল এক চেলা। চশমা ফেলে এসেছি। এখানে লোকজনেরা নিয়মনিষ্ঠ, উপোসকাপাস, পুজোআচ্চা...। মোহান্তজীর পাশে টেবিলফ্যানে স্বাস্থ্যবান্ মৃদু শন্শন্। শিক্ষা, কল্প, নিয়ম, ছন্দ, ব্যাকরণ... নিরুক্তটা ভুলে মেরে দিয়েছে? খুঁজেই চলেছে। হাঃ! কর্কশ আওয়াজ মাইরি! এই হল্-এ মহাপুরুষ ছবিটা দেখিয়েছে একমাস আগে। গলার ভেতরটায় কুলকুল চুলকোচ্ছে।
সতরঞ্চিতে দেবেশ পণ্ডা, পরমানন্দ পাণিগ্রাহী, সতীশ জেনা, মুকুন্দ্ গুপ্তা। আর দু’চার জন চেনা, বাকি অচেনা। খবর ততটা ছড়ায়নি, কাল ভিড় হতেও পারে। লোড্শেডিং। সঙ্গে সঙ্গে রামরতনের জেনারেটর-বাদ্য। তা ওই চলে সব অনুষ্ঠানে... সস্তা পড়ে। দু’কোণে দুখানা আলো, কানে সুরে-বেসুরে সমস্বরে গীতার পঞ্চম না দশমাধ্যায়। কির্র্র পোকা একটানা। মিশিরজী লোক ভালো। ওঁদের আজ আরতি করার পালা।
হলের ভেতরে একসঙ্গে নামছে নীলাচল-দেবতা-দেবলোক। অবিশ্বাসী দুবৃর্ত্তের কপালে কিস্যু নাই! দরজার বাইরের শিউলি গন্ধ নাক ভরেছে। ঘরের আলো ধার নিয়েছে গাছটা। চকচক পাতায় গুঁড়িগুঁড়ি। বাইরে তাকিয়ে থেকে থেকে স্মৃতির নেশা। ষাটে এসে কৈশোরের হামাগুড়ি... জয় জগন্নাথ! “লুট পড়েছে লুটের বাহার...” জিভে বাতাসার স্বাদ। উঠোনের গাছটা হাসছে। জবুথবু বৃদ্ধা সাষ্টাঙ্গ... ঊর্দ্ধবাহু বরাভয় গেরুয়া মোহান্ত। ভজনটাও নাকি স্বরচিত! নাকিসুরে অসভ্য বাচ্চা... ‘পেসাব জিব’।
চিট ময়লা মশারির চালে নিষ্কম্মা অলম্বুষা মাঝরাত। মঞ্জুলা কত বছর হলো অমিয়র সাথে? ভুবনেশ্বরে দেখে এসে কতবার জানিয়ে গেছে কতজন। ভালোই করেছিল বোধহয়। শুধু টুটুলটার খবরের হানটান কত রাত। উলঙ্গ টেবিলের ভারতীয় দর্শনে, হাট্কানো বেতো আলনায়, ব্যভিচারী চাঁদ। হাতের মুঠোয়, কপালে অস্বস্তির খাঁজখোঁজ। কে হঠকারী? কতটা? সেই গাছ মায়াবিলাস, টাকে, কপালে, দেড়োগালে, পায়ের ফাঁকে, নিজের হাত বুলিয়ে বুলিয়ে... আয় ঘুম। টুটুলটা হঠাৎ কাল কত বছর পরে...? জয় জগড়নাথ তোমার মহিমে!
শ্রাবণী দাশগুপ্ত
চুপচাপ ঢুকে শেষ চেয়ারে বসে পা নাচানোটা ভদ্রতা নয়। এখানে ভয়ানক বিনবিনে মশা। সবকিছুই কি ইচ্ছানুগ? পাপীতাপীদের ভাগবতপাঠ শুনতে আসা স্রেফ উপরোধে। প্লাস্টারখসা পুরনো হল্টা ফুলপাতায় খানিকটা বাহারি। আসুন বসুন করার কেউ নেই, বাঁচা গেল। ঢোকো, বসে পড়ো। বিছানো সতরঞ্চিতে ডেকোরেটরের ময়লা থান। চেয়ারগুলো আর্থরাইটিসওয়ালাদের জন্যে নাকি?
নিমাই আবার শিবেশকেও নিয়ে এসেছে! সাহেব কবে এল? এদিকে? ধপধপে পাঞ্জাবি পরে মক্কেল মাটিতে। ভক্তিতে ডগমগ। ভড়ং! তাকালো, হাসলো, ডাকলো, নিরাশ হলো। বাইরে আপাতত জেনারেটর বোবা। ফ্যানগুলোর বিট্কেল সরবতায় শুরুতেই মোহান্তজীর জ্ঞানদানে বিপত্তি। যাচ্চলে! আদেশানুসারে বন্ধ হলো। আপাতত এখানে পুরোপুরি সুরেলা রক্তদান শিবির। মধ্যবয়সিনীকুলে প্রায় সকলেই বাতসোহাগিনী। চমৎকার!
বৃষ্টি সকাল থেকে সারাদিন চলে একটু মিইয়ে এসেছে। রথ বলে কথা! মস্ত পটে জগড়নাথ ভাইবোনকে নিয়ে। মোহান্ত দৌড়াচ্ছে বিষ্ণুপুরাণ থেকে ভাগবতপুরাণ। নেতা নেতা ভাব। হাতে ছাপা কাগজ দিয়ে গেল এক চেলা। চশমা ফেলে এসেছি। এখানে লোকজনেরা নিয়মনিষ্ঠ, উপোসকাপাস, পুজোআচ্চা...। মোহান্তজীর পাশে টেবিলফ্যানে স্বাস্থ্যবান্ মৃদু শন্শন্। শিক্ষা, কল্প, নিয়ম, ছন্দ, ব্যাকরণ... নিরুক্তটা ভুলে মেরে দিয়েছে? খুঁজেই চলেছে। হাঃ! কর্কশ আওয়াজ মাইরি! এই হল্-এ মহাপুরুষ ছবিটা দেখিয়েছে একমাস আগে। গলার ভেতরটায় কুলকুল চুলকোচ্ছে।
সতরঞ্চিতে দেবেশ পণ্ডা, পরমানন্দ পাণিগ্রাহী, সতীশ জেনা, মুকুন্দ্ গুপ্তা। আর দু’চার জন চেনা, বাকি অচেনা। খবর ততটা ছড়ায়নি, কাল ভিড় হতেও পারে। লোড্শেডিং। সঙ্গে সঙ্গে রামরতনের জেনারেটর-বাদ্য। তা ওই চলে সব অনুষ্ঠানে... সস্তা পড়ে। দু’কোণে দুখানা আলো, কানে সুরে-বেসুরে সমস্বরে গীতার পঞ্চম না দশমাধ্যায়। কির্র্র পোকা একটানা। মিশিরজী লোক ভালো। ওঁদের আজ আরতি করার পালা।
হলের ভেতরে একসঙ্গে নামছে নীলাচল-দেবতা-দেবলোক। অবিশ্বাসী দুবৃর্ত্তের কপালে কিস্যু নাই! দরজার বাইরের শিউলি গন্ধ নাক ভরেছে। ঘরের আলো ধার নিয়েছে গাছটা। চকচক পাতায় গুঁড়িগুঁড়ি। বাইরে তাকিয়ে থেকে থেকে স্মৃতির নেশা। ষাটে এসে কৈশোরের হামাগুড়ি... জয় জগন্নাথ! “লুট পড়েছে লুটের বাহার...” জিভে বাতাসার স্বাদ। উঠোনের গাছটা হাসছে। জবুথবু বৃদ্ধা সাষ্টাঙ্গ... ঊর্দ্ধবাহু বরাভয় গেরুয়া মোহান্ত। ভজনটাও নাকি স্বরচিত! নাকিসুরে অসভ্য বাচ্চা... ‘পেসাব জিব’।
চিট ময়লা মশারির চালে নিষ্কম্মা অলম্বুষা মাঝরাত। মঞ্জুলা কত বছর হলো অমিয়র সাথে? ভুবনেশ্বরে দেখে এসে কতবার জানিয়ে গেছে কতজন। ভালোই করেছিল বোধহয়। শুধু টুটুলটার খবরের হানটান কত রাত। উলঙ্গ টেবিলের ভারতীয় দর্শনে, হাট্কানো বেতো আলনায়, ব্যভিচারী চাঁদ। হাতের মুঠোয়, কপালে অস্বস্তির খাঁজখোঁজ। কে হঠকারী? কতটা? সেই গাছ মায়াবিলাস, টাকে, কপালে, দেড়োগালে, পায়ের ফাঁকে, নিজের হাত বুলিয়ে বুলিয়ে... আয় ঘুম। টুটুলটা হঠাৎ কাল কত বছর পরে...? জয় জগড়নাথ তোমার মহিমে!
0 কমেন্টস্:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন