কালিমাটি অনলাইন

দ্বাদশ বর্ষ / পঞ্চম সংখ্যা / ১২৫

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

দ্বাদশ বর্ষ / পঞ্চম সংখ্যা / ১২৫

রবিবার, ১৫ সেপ্টেম্বর, ২০১৩

১১ অভিষেক ঝা

যে গল্পগুলোর কোনোদিনই দেখা হবে না
অভিষেক ঝা



হিলসামারিকে যখন খেয়ে নিল গঙ্গা, বদ-খোয়াব দেখাও ছেড়ে দিল তৈমুর। পুরো এলাহীটোলার জান আর মন জুড়ে ঘূর্ণি মারে নদী। কাদা-সোনা রঙের জল। আর নদী জুড়ে কেবলই ভুটভুট-ভুটভুট। কেউ শালা সাহেবগঞ্জের কাছে জমি কিনেছে, কোনো শালার ব্যাটা স-আ-লা চোপড়ার কাছে। বাটি-কুটি, বউ, ছাগল, অ্যান্ডা- গ্যানডা যা কিছু নেওয়া যায় নিয়ে... মাটিতে গড় হয়ে মাথা ঠুকে... ভুটভুট-ভুটভুট। “ইহার মাঝেও ঠিয়া পাটি আসি হে হেনসার!” তৈমুরের গলায় বিস্ময়। “কাজকাম করি খেতি হইবে নাকি তৈমুরঅ্যা... ইয়ায় নিয়ম...”! হেনসার বিস্ময়হীন। তা ঠিক... তৈমুর ভাবে... মনে মনে। বড়কা জোলার মাঠে কলাইয়ের বীজ সে ছড়িয়েছে... নিয়ম মেনে... গঙ্গা নিশ্চিত খেয়ে নিতে পারে। নিয়ম মেনেই লুঠতে আসে ঠিয়া পার্টি। নিয়ম মেনেই গঙ্গার বিহানের চিকচিক সাঁঝ লাগতে না লাগতে বাগান কে বাগান, ক্ষেত কে ক্ষেত খেয়ে নেয়।

সে তবু পড়ে থাকে। প্রায় একা-ই। চড়া রোদে পলিতে ঘুটটি অবধি গেঁথে যত্ন নেয় কলাইয়ের বীজের। ঘাম মিশে জমিতে। পায়ের তলা কেটে রক্তও এক-আধ দিন। সেদিন নছুবনের কথা শরীরে এসেছিল তার। লুঙ্গির ভেতর হাত ঢুকিয়েছিল। নছুবন গোসলে। নছুবন কুশিয়ার খাচ্ছে। তরমুজ কোলে নছুবন। হাত ভিজে গিয়েছিল তার। চ্যাটচ্যাটে অস্বস্তি ঘষেছিল পলিতে। এভাবেই ক্ষেত ভরে যায় কলাইয়ে একদিন। নিয়ম মেনে যায় পেষাই-এ। তৈরি হয় ডাল , আটা, বড়ি।

নানা কিসিমের লোক আসে এই সদর শহরে। ফিকিরও নানা। কেউ মুঙ্গেরি বন্দুক বেচতে। কেউ গতর খাটাতে। কেউ এজলাসে ঝুটা সাক্ষী দিতে। কোনো ব্যাটা বাপের খুনির জামিন করাতে। কারো পকেটে ফুটা কড়িও নাই... বস্তা কাঁধে... একশো বান্ডিল জালি-গান্ধী। দিনটা হরেক ভাবে কাটে এদের। রকম বা ফেরে। ফিরতি পথে খিদের চোটে হয়তো বা দেখা হয় এদের। স্টেশনের কাছের বটতলায়। সার সার মাটির লাল সরা’তে তাপ নিচ্ছে কলাইয়ের রুটি। কালচে লাল ভাবে ফুলে উঠছে। খিদে জাগায় চিরকাল। সিকি’টা মুখে চালান করে গুরগা ওঁরাও লঙ্কায় কুচ কামড় দিল -- লক্ষ্মী হেমব্রমের বিটি’টা বেশ ডাগর হয়ে উঠেছে! “মা-স-হি ধনিয়ার চাটনি’টা ফিক্কা...”, আধেক-রুটি মুখে ঢোকালো রসিদুল...

এরপর তুমি লিখবে, রুটিগুলোতে এখন মেখে যাচ্ছে গুরগা, লক্ষ্মীর বিটি, রসিদুলদের গন্ধ, স্বাদ, ইচ্ছা, মাড়ির যন্ত্রণা, আঙুলে ছ্যাঁক... তুমি লিখেছিলে, বন্যার জল সরে যাওয়া পচা গন্ধ সত্যি-ই নেই রুটিতে... তুমি লিখছ, নেই ঘূর্ণি মারা কাদা-সোনা রঙ... আমি জানতে চাইলাম... তৈমুর?...

হিলসামারি নেই জেনেও জায়গা আন্দাজে জাল ফেলে যায় কেউ। উঠেও তো আসতে পারে ইলিশের স্মৃতি নিয়ে কোনো রূপোলি অতীত। নিয়ম মেনে।




2 কমেন্টস্: