রানা থারুদের
জঙ্গলে
হিমালয়ের পাদদেশে তরাই অঞ্চল। ভারত এবং নেপাল কত কাছাকাছি! উত্তর প্রদেশের লখীমপুর-খীরীর অরণ্য ঘুরে ঘুরে ক্লান্ত
হয়ে সবুজ ঘাসের চাদরে ঘুমিয়ে পড়েছে গৌতম।
‘তুম্ কৌন হো?’ গাঢ় হলুদ রঙের ওড়নায় অলংকার পরিহিত পাহাড়ি মেয়ের হাসির শব্দ
শোনা গেল।
গৌতম ঘুম ভেঙে অবাক বিস্ময়ে সেই বনদেবীকে স্বাগত জানালো।
‘আমি গাজিয়াবাদ থেকে ঘুরতে এসেছি। তুমি কোথা থেকে এসেছো?’
‘এই জঙ্গলে থাকি। আমাদের বাদাঘর থেকে পালিয়ে এসেছি’
গৌতম বুঝল, মেয়েটি বাংলা জানে না। হিন্দি-ই ওর মাতৃভাষা।
‘বাদাঘর?’
‘আমরা রানা থারু। চল্লিশ-পঞ্চাশ জনের মস্ত পরিবার আমাদের। বড় বড় ঘর নিয়ে এক-একটা
বাদাঘর। অনেকগুলি বাদাঘর নিয়ে
আমাদের গ্রাম।’
‘ও, তাই বুঝি’
‘জমিতে ধান, সর্ষে, ভূট্টা-র চাষ হয়’
‘বাঃ’
‘বনের ফলমূল, সবুজ শাকসবজি সংগ্রহ করি’
‘আচ্ছা’
‘কেউ হরিণ, বন্য শূকর শিকার করে, আবার কেউ মাছ ধরে’
‘তোমাদের ঘরে নিয়ে চলো আমাকে’
‘আমাদের ঘর মানে মাটি, গোবর, ঘাস দিয়ে নিজের হাতে সাজানো কুঁড়েঘর’
‘খুব আকর্ষণীয়!’
নাম না-জানা কয়েকটা ফল এগিয়ে দিল সেই বনদেবী। গৌতম সুস্বাদু মিষ্টি ফল খেতে থাকল।
‘শুনেছি, রানা থারু উপজাতি নেপালের পশ্চিম তরাই অঞ্চল, ভারতের নৈনিতাল,
উত্তরাঞ্চল, উত্তরপ্রদেশের লখীমপুর-খীরী অঞ্চলে বসবাস করে’
‘তুমি অনেক খবর জানো’
‘মাঘ মাসে তোমরা মাঘি উৎসব করো, তাই না?’
‘হ্যাঁ এরপরেই বাদঘর ইলেক্ট হয়। সঙ্গে এক বছরের জন্য গ্রামের প্রধান।
‘এক-একটা বাদাঘর একটি করে ভোট দেয়।’
‘প্রত্যেক মানুষের ভোট দেবার অধিকার নেই!’ গৌতম বিস্ময় প্রকাশ করল
‘আমরা থারু মহিলারা হলাম মহারানা প্রতাপের বংশধর’
‘রাজস্থান!’
অলংকৃত বনদেবীর উজ্জ্বল চোখের তারায় প্রতিবিম্বিত চাঁদ। চারদিকে ঝিঁঝিঁর গান, রাতপাখির ডাক,
কাছেপিঠে কোথাও খাদ্য-খাদক বন্য জন্তুর বোঝাপড়া শোনা যায়।
‘সেই যে হল্দীঘাটীর যুদ্ধ হলো, তখন থারু উপজাতি রাজস্থান থেকে পালিয়ে ঘুরতে
ঘুরতে নেপাল, কেউ কেউ উত্তরপ্রদেশের
লখীমপুর-খীরী-তে বসবাস করতে থাকল। বিধবা রানীরা এবং তাদের মেয়েরা স্থানীয় সৈনিক বা
সেবকদের বিবাহ করে গৃহী হলো।’
ওরা হাঁটতে হাঁটতে ঝর্ণার কাছে পৌঁছে যায়। বিশাল পাথরের উপর বসে ওরা।
‘ম্যায় ভাগতি হুয়ি ইহাঁ আ গয়ী’
‘তুমি ঘর ছেড়ে পালাচ্ছ কেন?’
‘আমাদের মহিলারা রাজশাহী পরিবারের অহংকারে ভোজনের থালায় পদাঘাত করে পতিকে
ভোজন পরিবেশন করে’, বনদেবী বেশ উত্তেজিত হয়ে পড়ে।
‘তুমি বিবাহিতা?’
‘হ্যাঁ।’
‘তোমার নাম সুজাতা দিলাম। জল দেবে?’
কুয়াশা ঢাকা পাহাড়ের হাতছানি আর ঝর্নার জলে দুটি মানব-মানবী অরণ্য আবিষ্কারে
জেগে থাকল।
তুমি কেমন করে গান কর করবে গুনি গুনি অবাক হয়ে শুনি। অসম্ভব ভালো লাগলো তোমার লেখা আমাকে মুগ্ধ করেছে।
উত্তরমুছুনতুমি কেমন করে গান কর করবে গুনি গুনি অবাক হয়ে শুনি। অসম্ভব ভালো লাগলো তোমার লেখা আমাকে মুগ্ধ করেছে।
উত্তরমুছুন