কালিমাটির ঝুরোগল্প ১১৬ |
প্রতিশব্দের শব্দ এবং
অর্থাৎ
ঢালাও বাসা কি আমাদের ফ্ল্যাটের প্রতিশব্দ হতে পারে অর্থাৎ ঝূট-ঝামেলাহীন একটা আস্তানা, যখন খুশি আসা-যাওয়ার রাস্তা খোলা অর্থাৎ মাটিতে পুঁতে দেওয়া কোন খুঁটি নয়, তার চেয়ে বলা যাক, আন্তর্জাতিকতার স্বপক্ষে একটি বুর্জ খলিফা এবং মানুষের ব্যক্তিগত বর্গক্ষেত্রটির জন্য ঢালাও সুখের ব্যবস্থা অর্থাৎ সমস্ত সম্পর্কের জন্য পাখির অবাধ নীল অন্তহীনতা।
--অর্থাৎ, 'শেষে দুজনেই আলাদা; যার যার ঢালাও বাসায়, আলাদা ফ্রিজ, ওয়াশিংমেশিন, আলাদা টিভি, এয়ার কন্ডিশনার এবং আলাদা একাকীত্ব। এই তো বলতে চাইছো? অর্থাৎ আলাদা থাকাটাই স্বাধীনতার সবচেয়ে বড় সুলূক।' কথা হচ্ছিল বাংলা ভাষার প্রতিশব্দ নিয়ে, গাড়িটা সেখান থেকে এভাবে কর্ড লাইনে ঢুকে গেল; ব্যাপারটা শাশ্বতীর ভালো লাগলো না।
অসমঞ্জ বলে যায়-- দূরপাল্লার বোঝা নিয়ে কোন গাড়ি কি সারাজীবন চলে? আমাদের রাজস্থানে বেড়ানোর কথা মনে করো। কখন যেন জংশন থেকে একেকবার লাইন বদলে নেয় গাড়ি, বদলে যায় স্টেশনের নাম- তুমি তো জানলার ধারে বসেই রাত কাটালে, মনে পড়ে?
-এখন ছাড়ো ওসব, গল্পটা কেমন হচ্ছে বলো। একে বলে ঝুরোগল্প। আ নেভার এন্ডিং স্টোরি। কখন কোন ঘটনা, কাকে, কোথায় নিঃশব্দে ছোবল মারবে, কেউ জানে না। শাশ্বতী বুঝলো, তার মাথার সিঁদুরটি আজ কিছু বেশি মাত্রায় লেখক হয়ে গেছে। গেলা-পেটা তাহলে ভালোই করে এসেছে। তবে সিঁদুর কথাটা ভেবে হাসিও পেল। বললো ঝু্রো, হ্যাঁ ঠিকই আছে অর্থাৎ আচমকা ঝরে যাবার গল্প। 'নিঃশব্দ' ও 'ছোবল' শব্দ দুটো যেন বরফের টুকরো। কদিন ধরেই কে যেন শাশ্বতীর পিঠে একটা তর্জনী দিয়ে কিছু কথা লিখে ওর সাথে লেখাচুরি খেলছে।
উঠে পড়েছিল অসমঞ্জ। সে, করিডোরের দেয়াল ধরে টলতে টলতে এগিয়ে চলল। শাশ্বতী উঠে গিয়ে হাতটা ধরার চেষ্টা করল, কিন্তু অসমঞ্জ সরিয়ে নিল।
সরিয়ে
নিচ্ছো কেন, এত গিলেছো যে হাঁটতেই তো পারছো না! সো হোয়াট? একটা সোফাসেট একটা আলমারি
একটা আলাদা...
কেউ নেই শুধু আমি আর তুমি, দুটি বেডরুম দুটি লোক, একটি লোক, তারপর শাশ্বত শূন্যতা।
শাশ্বতীও যেন আর এগোতে চাইছিল না। মদ আর ধোঁয়ার রিং-টোনকে অস্পষ্ট সাপ মনে হচ্ছিল। সে আবার সোফায় গিয়ে বসল। কানে একটা কথাই শুধু ভেসে আসছে, ... কাকে, কোথায় নিঃশব্দে ছোবল...
কলিং বেল বেজে উঠলো। দরজা খুলে দেখে এক মহিলা, সাথে দশ এগারোর দুটি ছেলে। বাইরের হলুদ কুয়াশা। আলো কম থাকায় বুঝতে পারলো না। তাকিয়ে রইল মুখের দিকে। কিছু হাওয়ায় ভাসমান, অর্থাৎ যেন জলের পাখিরা আকাশ থেকে নানা বর্ণের পালক খুলে দিচ্ছে। মহিলা একটি চিরকুট হাতে দিয়ে বলল, দেখুন তো, এই বাড়িটা কোথায়? কাগজ হাতে নিয়ে শাশ্বতী কিছুক্ষণ মহিলা এবং ছেলে দুটোর দিকে তাকিয়ে রইল।
0 কমেন্টস্:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন