কালিমাটির ঝুরোগল্প ১১৬ |
পাসপোর্ট
কাগজটা বার করতেই হলুদ দাগ চোখে পড়ল। তরকারির গন্ধও। মা যদি একটু গুছিয়ে দেয় সবটা! বীথির বিরক্ত লাগছে। পাসপোর্ট অফিসে এমনি এতক্ষণ দাঁড়াতে হয়। তার মধ্যে এসব হাস্যকর ব্যাপার হলে বাড়তি অস্বস্তি। ক্লাস টেনের সার্টিফিকেটের জেরক্স সকালে মাকে ব্যাগে দিতে বলেছিল বীথি। মা টিফিনবক্সের সঙ্গে একসঙ্গে ভরেছে। কাগজটায় হলুদ দাগ লেগে একসা। আবার জেরক্স করাতে ছুটতে হচ্ছে।
বীথির অবস্থা দেখে সিকিউরিটি মেয়েটাও হাসছিল। দৌড়ে গিয়ে পাশের দোকান থেকে ক্লাস টেনের সার্টিফিকেটটা জেরক্স করিয়ে আনে বীথি। মনে মনে গজগজ করছে। সমীরণ প্রথম ধাপের লাইন শেষ করে ভেতরের দিকে এগিয়ে গেছে। জেরক্সটা হাতে নিয়ে বীথি একেবারে নাজেহাল।
সমীরণ বেশ চিৎকার করে ডাকে বীথিকে।
-"আরে দেখো না মাকে বলেছিলাম ডকুমেন্টসগুলো ঠিকঠাক দিতে, একটা সার্টিফিকেটের জেরক্স জাস্ট নষ্ট হয়ে গেছে। ওটাই আবার করাতে গিয়েছিলাম"
-" তুমি এত ইন্ডিপেন্ডেন্সের কথা বল, নিজের প্রয়োজনীয় জিনিস গুছিয়ে রাখতে পারো না!"
সমীরণ কথাগুলো ছুঁড়ে দিয়েই এগিয়ে যায়। বীথির মনটা তেতো হয়ে যায় হঠাৎ করে। নতুন বিয়ে, কয়েকদিন পরেই দেশ ছেড়ে চলে যেতে হবে। তার জন্য কিছুদিন ধরে নানা ঝক্কি চলছে। নীড় ভেঙে উড়ে যাওয়ার কথা ভাবলেই একটা কষাটে অনুভূতি হচ্ছে।
গতকাল রাতে তাই মায়ের কাছে এসেছে বীথি। এ বাড়িতেই ডকুমেন্টসগুলো ছিল। পাসপোর্টের কাজ সেরে কাল আবার শ্বশুরবাড়ি ফিরে যাওয়া। তার আগে সমীরণের ছোট্ট উত্তপ্ত ব্যবহারে মনের কাটাকুটি চলছে বীথির।
মাকে ছোটবেলা থেকেই একটু অগোছালো দেখেছে বীথি। অন্যের মায়েরা যেমন সাজিয়ে-গুছিয়ে কাজ করে, বীথির মা এলোমেলো। তবুও মায়ের উপর নির্ভর করতে ইচ্ছে করে। একটা আলোর মতো নরম অনুভূতি ঘিরে থাকে মায়ের কথা ভাবলে।
-"চলো চলো, এটাই লাস্ট স্টেপ।"
তিথির
চোখে জমে থাকা বাষ্প উপেক্ষা করেই পাসপোর্ট তৈরির যাবতীয় কাজকর্ম এগিয়ে নেয় সমীরণ।
নির্বিঘ্নেই
মিটে যায় সবটা।
-"এরপর
পাসপোর্ট হাতে পেলেই ভিসা অ্যাপ্লাই করব। আমাদের নিউ ওয়ার্ল্ড। তুমি খুশি তো বীথি?"
কথাগুলো
বলার সময় সমীরণ লক্ষ্য করে না একটু আগের সামান্য উত্তপ্ত কথার ভারে বীথির চোখ এখনো
ছলছল।
-"চলো,
একটু কফি খাই। এমন চুপ করে আছো কেন! লেটস এনজয়।"
সমীরণের
ফুরফুরে মেজাজ।
বীথির মনের ভার নামে না। সমীরণের কফির ইচ্ছেকে উপেক্ষা করে ও গাড়ির দিকে এগিয়ে যায়। গাড়িতে উঠে মায়ের দেওয়া টিফিনবক্সটা খুলে বসে। রুটি-তরকারি। তরকারিটা চলকে বীথির জামায় পড়ে। ওর ভ্রুক্ষেপ নেই। হঠাৎ ওর চোখ বেয়ে বৃষ্টি নামে। সমীরণের অলক্ষ্যেই হয় সবটা।
0 কমেন্টস্:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন