কালিমাটি অনলাইন

দ্বাদশ বর্ষ / পঞ্চম সংখ্যা / ১২৫

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

দ্বাদশ বর্ষ / পঞ্চম সংখ্যা / ১২৫

শনিবার, ১৪ মে, ২০২২

নিমাই জানা

 

কবিতার কালিমাটি ১১৭


চিরহরিৎ ও নীল রঙের প্রোতাশ্রয়

 

চিরহরিৎ ছায়ার নিচে দাঁড়িয়ে আমি প্রতিদিন ৪৯জন বাবাকে হত্যা করে নেমে আসি একটা মরুদ্যানের নিচে

জলঘরের ভেতর কেউ একজন নীল রঙের পোশাক পরে একটি পুংলিঙ্গের মতো অজস্র ক্ষত মুখওয়ালা পোতাশ্রয় মুখে নিয়ে নেমে যাচ্ছে প্রাচীন কশেরুকার দিকে

আমি কিছু বৈবর্ত আগুন নিয়ে পুরোহিতের জপমালা স্তব করছি প্রতিদিন সন্ধ্যাবেলায়, অথচ চোখের তলা দিয়ে অসংখ্য কদাকার মুখগুলো আমার দিকে অট্টহাসিতে তেড়ে আসছে, আমি বিশাখা অরণ্যের দিকে চলে গেলাম

গোপন স্থানে গিয়ে কৃষ্ণের আরাধনা পর্ব রেখে আসি ছদ্মবেশ পুরুষের মতো, আমাদের দাঁত নেই বলেই আমি গলা ছেড়ে অসংখ্য মৃত্যুকে আহ্বান জানাই ধ্বজভঙ্গ পুরুষের শিরার উপর বসে

একটি অপরাজিতার ঠোঁটে অজস্র হরপ্পা আমাকে জড়িয়ে ধরেছে তুতেনখামেনের জন্য

ক্ষয়জাত অসুখের ও ব্যবচ্ছেদ করে চলি, জমাট রক্তগোলা নিয়ে আমি প্রতিদিন  ধারাপাত পড়ে ফেলি নৈর্ব্যক্তিক প্রশ্নমালা দিয়ে ফিউচার ইন্ডিফিনিটের কোকিলগুলো আজ একসাথে ক্ষয়জাত ভূমির দিকে নেমে যাচ্ছে ৩৩ ডিগ্রি বরফ নিয়ে

চন্ডীক্ষেত্রের নিচে দাঁড়ালে ৯জন মায়েরা সবাই জীবাশ্মওয়ালা কাচের পাখি হয়ে ধীরে ধীরে জড়িয়ে ধরছে রাতের নীলক্ষত অপরাজিতার চারাগাছ আমি জামরুলের ব্যাবিলন কথার সাথে সেলসিয়াস পাঠে ভরে রেখেছি, ভয়ার্ত কামুক সিংহের মতো

 

সপ্তম প্রজন্ম ও ইন্ট্রাভেনাস সেবিকা নারী

 

সপ্তম পরজন্মের পর হঠাৎ করেই আমার বাবা প্রাচীন ভূগোলবিদ হয়ে গেল

আমি বিষধর খোলসের নিচে মহাজীবনের ধারাপাত রেখে আসি মহাপ্রস্থানের অতীত সাংখ্যমান পদচিহ্ন জড়ুল জলে ডুবিয়ে

রাতের গর্ভবতী সেবিকাটি লিউকোপ্লাস্টিড মাখানো নীলের ব্রাকিয়াল শিরাপথের ওপরে দাঁড়িয়ে আমার ইন্ট্রাভেনাস বীজগুলোকে টেনে বের করছে একটি নৈপুণ্য ফরসেপ কামড় দিয়ে, হলুদ নারীটি ঠিক প্রজাপতির মত দংশন জানতো

বাদামী সেবাসদনের ভেতর পাতাবাহার গাছের ডগায় অজস্র রাধিকা গাছ নুয়ে আছে পরকীয়া অসুখ নিয়ে, আমি সেবিকার বোতাম চিহ্নকে বড় ভয় পাই, মৃত জিরাফের মতো আহত হওয়ার পর

ডায়াস্টোলিক চিহ্নগুলো ঠিক মৃত মানুষের ডান পা, যারা কংক্রিটময় কালো রাস্তার কাছে নিজেদের অসুখগুলো ঝুলিয়ে রাখে ঋষি জটা ফুলের মতো, আমি কিছু কালো রঙের সরীসৃপদের দেখি যারা নিজেদের প্রতিরাতে সাজিয়ে শুদ্ধ করে অগণিত অযুত নারীদের মতো ঠোঁট দিয়ে 

যাদের মুখমন্ডলে কোন নয়নের চিহ্ন থাকে না, আমি বড়ো কম্পাসকে ভয় করি যে আমাকে এক গভীর গর্তের ভেতর ঢুকিয়ে কবরস্থ করে যাবে প্রাচীন জীবাশ্ম দানার সাথে মিশিয়ে

হঠাৎ করে কেউ একজন রাতের অন্ধকারে আমার সুষুম্না কান্ডকে অজস্র খণ্ড-খণ্ড করে যাবে, আমি মৃতপ্রায় কাঁকড়াবিছা

ক্রমশ নিম্নাঙ্গ শিথিল হয়ে যাওয়ার অসুস্থতার ভান করবে নিরাকার আত্মীয়দের কাছে, আর সবাই রাতের অন্ধকারে সাদা কাগজের ফুল হয়ে ভেসে বেড়াবে আমার অখন্ড দ্রাঘিমা জুড়ে

আমি স্থানু আকার হয়ে যাওয়ার পর সুষুপ্তি চিহ্ন নিয়ে ঘুমোতে যাবো কারণ শরীরের জন্য, অব্যক্ত কথা ধীরে ধীরে সমর্পিত হচ্ছে

 

তিন বর্ণের আততায়ী ও জলচর অভিসারিকা

 

আততায়ী ঠিক এভাবে আমাকে হত্যা করলেই বাকলহীন সাপগুলো আবহবিকার লজ্জাবতীর নিচে একপ্রস্থ আয়তক্ষেত্র রেখে যাবে নিম্ন স্থিরাঙ্ক জলে ডুবিয়ে

৯০ ডিগ্রির অসুখ ধরা পড়েছে রাতের কোনো ধ্যানস্থ মন্ত্রপূতঃ মুনি পুরের কাছে, আমি নিশাচরের মতো সরু সরু দাঁতালো ধনুক নিয়ে ক্ষত করি আমার চৌকাঠের নীল দরজার সুড়ঙ্গ পথগুলো

দেয়ালে ঝুলে থাকা কালো কালো শরীরকে কঙ্কাল ভেবে রোপন করে আমার নামে, বৃক্ষেরা গোরা জাত অভিসারিকার মৈথুনকাল

আমি শুধু আমার মায়ের মৃত্যুকে ভয় পাই বলেই কোন জলচর হয়ে উঠেনি নীল রঙের পোশাক পরে, রাতের সব পরিযায়ীরা জমাট হিমোগ্লোবিন মুখে নিয়েই বরফের দেশ থেকে ফিরে আসে আলখাল্লা গায়ে

শরীরে অসংখ্য স্নেহ পদার্থের স্ফোটক ছিদ্রের ভেতর আমি সংক্রমণ পাখিটির কথা ভাবছি, যে নীল মাধ্যাকর্ষণ অসুস্থ কথা মুখে নিয়ে ছুঁয়ে দেখে জ্বরের প্রকারভেদ ও সেবিকা অন্ধকার

একটি প্রলয় ঝড়ের পর সব বীজপত্রেরা মুখে অঙ্কুরিত ক্ষণপদ নিয়ে শুয়ে আছে নীলক্ষেতের সমাঙ্গ দেহের গোখরো

আকাশে উড়ে বেড়ায় আকাশগঙ্গার সহস্র ভ্রুণ, ফ্যালোপিয়ানের ভেতর বসে বসে দেখেছি অপুষ্টি মানুষগুলোই  কীভাবে প্রতিদিন শ্মশানের জীবাশ্ম মুখে নিয়ে হেঁটে  যায় আরেকটা গোলক ব্রম্ভান্ডের দিকে

 

আর্যভট্ট  ও হোমোইরেক্টাস চাষাবাদ

 

তাদের ঠোঁটগুলো বেশ চওড়া কালো রঙের পাথরের মতো

আমার ভেতর একটা সিমেট্রিক্যাল ফার্ণময় বিন্দু নিয়ে অশৌচ গণিত কথা লিখে গেছে আর্যভট্ট অথবা হোমো ইরেকটাস

আমি কেবল একটা বটগাছের নিচে বসে থাকা উলঙ্গ পাগলকে দেখেছি তার স্তনে কোনো পাপ কথা নেই, গদ্যাংশের কোন ভূখণ্ড নেই বলে আমি নিশাচরের মতো একটি সেবক হয়ে ব্রাকিয়াল খুঁজে চলেছি বগলের তলায়, যোনির চিহ্ন নেই

কিছু বিনাইন অশোক ফুলের চাষাবাদ শিখছি অজগরের পিঠে দাঁড়িয়ে

একটা বর্ণহীন অসুখের নাম কখনোই চন্দ্রবোড়া হতে পারে না

আমি কিছু রক্ত রঙের উপনদীতে লিঙ্গ ক্ষেত্রের জীবনচক্র পাঠ উড়িয়ে দিতে পারি মৃৎশিল্পীর মতো

তাদের সাথে আমিও কিছু নীল রঙের অ্যামিট্রিপটিলিন খাচ্ছি সাদা ভ্যাজাইনাল পালক মিশিয়ে

মেগাস্থিনিসের সাথে পাথরকথা পড়েছিলাম শ্রীখন্ড পুরাণে, ঈশ্বরী আমাকে কখনো ইচ্ছামতীর রক্তস্রাব দেখিয়ে যায় না বলে আমি ক্রমশ ঈশ্বর চিহ্নের ভেতর মমি কথা পড়ে ফেলেছি আজন্মকাল নিরালম্ব সুখ নিয়ে

সৈন্যদের হাতের মুঠোয় থাকা কালো বরফগুলো আমাকে ভাসিয়ে নিয়ে যাচ্ছে পুষ্কর হ্রদের দিকে, সমিধ ছায়া করে

আমাদের ভেতর কোন একদিন মাধ্যাকর্ষণহীন সম্প্রদান কথাগুলো দাহ করে যাচ্ছে আমাদের

আমার বাবা ভেজা ভেজা মৃত্যুগুলোকে ডানহাতে চেপে রেখেছে পিচ্ছিল ঘটের মতো

 

চাঁদের জীবাশ্ম ও মহাচৈতন্য ঘোর

 

একটি চাঁদ আমার সাথে মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত হয়েছিল পাথরের পরাগ মুখে নিয়ে, আমার ভ্যাজাইনাহীন নারীটি কোনদিন আমার সাথে যাজন ক্ষেত্রে যায়নি

আমি শুধু পাখিদের ৩৭ জোড়া অসম ডানা নিয়ে বাকল খসিয়ে যাচ্ছে পৌনঃপুনিকের যত দৈহিক সম্পর্ক ফেলে

আমাদের ঘুম ঘোরের মহা চৈতন্যের আদিম নৌকাটি ভীষ্ম লিঙ্গের ঘোড়ায় চেপে যজ্ঞস্থলে উপস্থিত হবে এবার

আসলে আমি নীল করিডোরে বসে তুলসী বৃক্ষের শঙ্খচূড় জনন দেখছি আর হঠাৎ করেই অজগরটি জীবাশ্ম হয়ে উঠছে

ফারেনহাইটের অসুখগুলো কীভাবে নিঃশব্দ ঘাতক হয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে আমার  লিঙ্গমুণ্ডের  চারপাশে

নরম দৈর্ঘ্যের মৎস্যগন্ধা আঁশফল খাচ্ছি আজকাল

আমাদের আর কোন খান্ডবদহন থাকবে না বলেই অযুত কাল অব্দি আমার ১৮০ ডিগ্রি সরলরেখাগুলো আমার সাথে রণাঙ্গনে মেতে উঠেছে

উলঙ্গ শরীরে যারা রাতের বেলায় ব্লাউজ খোলা মরুভূমির নিচে ঘুমায় তারা সকলেই মৃত্যু পোশাক গায়ে দিয়ে মাথা নেড়ে বলেছিল জামরুল ডগার মতো আর কোন অশৌচ কথা থাকতে নাই

আজ কিছু নিম ফলের অশৌচ কথা পড়ে ফেলি ল্যাটেরাইট আগুন দিয়ে

রাত্রি হলে আমাদের আর কোন স্বমেহন ইচ্ছা জেগে ওঠে না, নিরাকার ছায়াটি আমার সন্তানের মতো সারা ঘরময় উড়ে বেড়ায়, আর আমার পা-জামাটি দক্ষিণ বাতাসে ভেসে নগ্ন প্রদেশের দিকে উড়ে যায়, আমি একটি উল্টানো মাটির কলসির নিচে ডিম্বকরন্ধ্র রোপণ করেছি, আমি আসলে জলচর সৈনিক ছিলাম

 


0 কমেন্টস্:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন