কবিতার কালিমাটি ১০৪ |
নাটকের মতো
ঘরে অ্যাতো ক্যামেরা বসালো কে?
কে? কে? গমগমে শব্দের ঝাঁঝে
আধবোজা চোখ খুলে গেল বুদ্ধ’র—
শান্ত অথচ দৃঢ় কণ্ঠে— আমি একটা লাগিয়েছি, প্রিয়,
কোনও অসুবিধা হচ্ছে!
দিগম্বর মহাবীর একটু হাসলেন, বললেন না কিছুই
হাসিতেই
স্পষ্ট, তিনিও একটা—
ঈশান
কোণে আলো হলো, মহম্মদ ধীরে হাত তুললেন—
বরাভয় না উপস্থিতির স্বীকৃতি বোঝার আগেই
বললেন— বেটা! কয়ি দিক্কত!
দীর্ঘ
কাঠ-টা কাঁধ থেকে নামাতে নামাতে
জেসাস্ আমার দিকে তাকিয়েই রইলেন
একটা প্রেম-প্রেম হাসি উপহারে—
এনি প্রব? ব্রাদার!
শংকরাচার্যকে
একবার উঁকি দিয়েই সরে যেতে দেখলাম—
বুঝলাম, চেষ্টা করেও উনি গুঁজে দিতে ব্যর্থ হয়েছেন।
দাঁড়ান,
দাঁড়ান! যাবেন না প্লিজ!
বহুদিন খুঁজছি আপনাকে, বহুদিন—
আপনিও একটা বসিয়ে দিন, কিন্তু সট্কে পড়বেন
না, প্লিজ।
‘ব্রহ্ম
সত্য, জগত নাকি সত্য নয়?’, বলুন, বলুন—
সত্য নয়? বলুন মহর্ষি—
বলুন, এই যে অ্যাতো মৃত্যু— সত্য নয়?
এই যে
অ্যাতো ক্যামেরা— সত্য নয়?
অ্যাতো গর্ভভ্রূণ— সত্য
নয়?
দেহযন্ত্র— সত্য নয়?
নাগাড়ে প্রশ্নেও দাঁড়িয়েই ছিলেন তিনি, মায়াহাসি মুখে মেখে
অগত্যা উলঙ্গ
হলাম, সত্য নয় এই চোখ আর শিশ্ন?
সবকটা ক্যামেরা (বলা-হয়নি এমন কিছুও ছিল) আমাকে তাকিয়ে
আমি তাঁর দিকে—
আপাদমস্তক দেখলেন
একবার, হাসি খানিকটা চল্কে পড়ল,
ঝোলা থেকে
ক্যামেরাটা বের করলেন,
আমার হাতে
দিয়ে বললেন— কোথাও একটা বসিয়ে নিও!
নিঃশব্দে উধাও। কে শোনে, ‘শুনুন, শুনুন’—
খেয়াল নেই, এই ক্যামেরাই কি টেলিকাস্ট করে চলেছে
আমার উলঙ্গ!
আমার ধাঁধসে ওঁরা
সবাই চিন্তিত, মনে হলো
বুদ্ধ’র নয়ন
বুজে এল
খ্রাইস্ট কাঠ-টা
আবার তুলে নিচ্ছেন কাঁধে
মহাবীর ভাবছেন মুখের
কাপড়-টা সরাবেন কিনা!
আলোবৃত্তে
মহম্মদ আরও আরও ধীরে নামাচ্ছেন হাত—
অ্যাতোজন মহাযন্ত্রীর
কনসার্টে আমি
অজ্ঞান হয়ে যেতে
পারতাম,
যাইনি।
অ্যাতোজন মহাপ্রেমিকের
একত্রে উপস্থিতি,
প্রিয়, বেটা বা
ব্রাদার সম্বোধন,
অসুবিধা কিছু
হচ্ছে কিনা
আন্তরিক
জানতে চাওয়া,
আমি
উন্মাদ হয়ে
যেতে
পারতাম,
হইনি।
হইনি-ই বা বলছি কী করে?
উলঙ্গ হলাম
কেন?
ক্যামেরা
চলছে—
অন্ধকার ঘর থেকে সবাই চলে গেলেন
ক্যামেরাগুলো
রইল
রাত-মোষের
চোখ হয়ে
সব
চোখ আমারই দিকে
কিছু কি খুঁজছে!
দেখুক-গে, খুঁজুক-গে, কীই বা আছে আমার, লুকোবার!
পায়জামা আগেই
খুলেছি
একটা আংটি
এই খুলে রাখছি--
কেউ যেন এলেন। আহা! ঘরটা আমার রঙ্গমঞ্চ,
আসছেন, যাচ্ছেন, উঁকি দিচ্ছেন,
ওই, আবার
কেউ এসে পড়লেন,
আরে! এ-যে চৈতন্য!
দু-হাত তুলে নাচতে-নাচতেই প্রবেশ তাঁর
কিন্তু হাতে সেই
দু-দুটো ক্যামেরা
প্রেমানন্দে
বলো, হরি-হরি বলো!
আমি এ-সি’র রিমোট-টা তাঁর কপালে ছুঁড়ে মারলাম
রক্ত ঝরছে,
তবু ক্যামেরা বসালেন
জড়িয়ে
ধরলেন, চোখে জল
রক্তে-জলে ভেজালেন
ফিরে গেলেন
কীর্তনসহ পুরো
একদল
আবেশে আমার চোখেও,
পড়ল শিশ্নের
ডগায়
মোছাতে এলেন রামকৃষ্ণ
‘তোর চৈতন্য
হোক’।
ক্যানসারে
গলা ফ্যাসফ্যাসে—
বলেই সমাধিস্ত
হলেন আমাকে খানিকটা ছুঁয়ে।
আমার কি তবে চৈতন্য ছিল না এতকাল?
শুধুশুধুই ক্যাচাল
করছি ক্যামেরা নিয়ে?
জগতটা তবে কী,
জানতে
চাইছি শংকরাচার্যের কাছে?
ক্যামেরা আর কতটা দেখাতে পারে
কতটা উলঙ্গ
করতে পারে ভেতরের রক্ত-রস-মজ্জা!
দরজা খুললাম, জানালা খুললাম, ঘুলঘুলির কাগজগুলো সরালাম,
হাওয়া এলো, গ্যালোও,
ক্যামেরা
মুখ ঘোরাচ্ছে দরজার দিকে
আমি তখনও উলঙ্গ—
উমাপদ দার লেখা ঠিক যেমন হয়ে থাকে সর্বদা। খুব ভালো লাগলো।
উত্তরমুছুন