কালিমাটি অনলাইন

দ্বাদশ বর্ষ / পঞ্চম সংখ্যা / ১২৫

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

দ্বাদশ বর্ষ / পঞ্চম সংখ্যা / ১২৫

শনিবার, ১২ সেপ্টেম্বর, ২০২০

অপরাহ্ণ সুসমিতো

 

কালিমাটির ঝুরোগল্প ৮৮


বাউল ও বাউলিনী

এই জীবন তো শূন্য না

ঘরের মইধ্যে ঘর বসত করে

পিরিতি বান্ধে দয়াল, এই তো সান্ত্বনা

বাউল গান বাঁধে। পথের পাশে বটগাছ, ছায়ায় বসে চোখ বন্ধ করে রাখে। বাম হাতের তালুতে অল্প পরিমানে গাঁজা, ডান হাতের বুড়ো আঙ্গুলে ঘষে ঘষে মিহি করে। পুরিয়া বানাবে। তার এখন অনিত্যতায় পেয়েছে। একটা গান মাথায় ঘুণ পোকার মতো ঘুরঘুর করে। গানটা না বাঁধা পর্যন্ত শান্তি নাই।

অন্য পাশে পা ছড়িয়ে বসে আছে বাউলের সঙ্গিনী বাউলিনী।
বাউলের জন্য নারকেলের আঁশ ছিঁড়ে ছিঁড়ে ছোবড়ার পুঁটলি বানায়, কল্কিতে গাঁজার উপর রেখে আগুন ধরাবে। পুঁটলি বানানো শেষ হলে একটা ছোট দড়ি পায়ের বুড়ো আঙ্গুলে  বেঁধে ওর ভিতর দিয়ে কল্কিটা টেনে টেনে পরিস্কার করে।
খুব অভিজ্ঞতায় এই ছিলিম প্রস্তুতি। মিনিট দশে
কের মধ্যে কল্কি রেডি। রেডি করে  বাউল কল্কিটা করজোরে বাউলিনীর কাছে মাথা নিচু করে এগিয়ে দেয়।

: তুই হইলি পবিত্র জননীর ছবি,
আমার প্রেমের আরশ। তুই শুরু কর।
বাউলিনী হেসে কল্কিটা আবার বাউলের কাছে ফিরিয়ে দেয়।
:
গুরু আপনি ভব তরণী। পার করেন আমারে
বাউল জোর করে কল্কি আবার বাউলিনীকে দেয়। পথের ধারে বটের ছায়ায় গাঁজার ধোঁয়ায় মৌ মৌ করে ওঠে। দুপুরের আধো রোদে নেশা লাটিমের মতো ঘুরপাক খেতে থাকে। সংসারের অনিত্যতায় পেয়ে বসে দুজনকে
  গুনগুন করে ওঠে।
দুই কূল দিয়ে নদী বাঁধে ঘর
আলো বাঁধে ঘর অন্ধকারে

বাউল ডাক দেয় সঙ্গিনীকে;

: সোনা পাখি
: বলেন গুরুজি
: কাছে আয়
: আরো
: ভয় করে
: কিসের?
: ঘরের

বাউলের ভিতরে খলবল কৈ বর্ষার গতরে ঘা্ঁই মারে। সঙ্গিনীকে একটানে বুকে টেনে আনে। উম গতরে মনে হয় মিশে যাবে দুইজন। হাতের বিকশিত আঙ্গুল,
ঠোঁটের মোহনা পরষ্পর শিউলি ফোটায়। দুপরের রোদ ছায়া দিতে থাকে আচানক।  
বাউলিনী ফিসফিস করে বলে;
: বাচ্চা চান গুরুজী?
: চল ঘর বাঁধি

গুরুজির ওম ওংকার মেঘ গলা।
কী যেন পাখি উড়ে যায়,
কী যেন পাতা ঝরে পড়ে।
প্রার্থনা জানি না মিনতি জানি বাসনা জানি

ও বাউল বাউলিনী


1 কমেন্টস্: