পেতলের
ঘড়া
গাড়ির চাবিটার সঙ্গে একটা
প্লাসটিকের হাঁস লাগানো, সেটা লিপিকার হাতের মুঠোয়। অন্যদিকটা ধরে আছে অমিতেশ।
লিপিকা বলল – আমি বেরোবো।
-তুমি এই সন্ধ্যের পরে কোথায় যাবে? ছাড়ো, আমার এক জায়গায়
যাবার আছে।
-কোথায় যাবার আছে জানি, অফিসের সেক্রটারি এরিকার কাছে।
-কী আজেবাজে বলছ, তুমি নয় আজ কিংশুকের বাড়ি না-ই বা গেলে...
-কে বলেছে তোমায় আমি কিংশুকের বাড়ি যাই? নিজের দোষ ঢাকতে
মিথ্যে গল্প বানাচ্ছ।
এদের সম্পর্কটা মাস কয়েক হল
একদম ভাল যাচ্ছে না। দুজনের মনে সন্দেহ, সব কাজে এ ওর ভুল ধরছে। ব্যাপারটা কোথায়
গিয়ে দাঁড়াবে বলা শক্ত। গাড়ির চাবি নিয়ে আরও দু-একটা চোখাচোখা বাক্যবাণের পর
চাবিটা পড়ে গেল। ঠং...
পড়েছে একটা উপুড় করে রাখা
পেতলের ঘড়ার ওপর। আওয়াজটা ওইরকম ধরনের কিছু একটা হল,
কারণ ওটার ওপর একটা সুন্দর লেসের কাজ করা ঢাকা ছিল। লিপিকা যত্ন করে সাজিয়ে রেখেছিল।
দুজনের মনে একসঙ্গে কি একই স্মৃতি ভেসে আসতে পারে? হয়ত পারে। দুজনেরই এক লহমায়
ঠাকুমার মুখটা মনে পড়ল। লিপিকার ঠাকুমা। তিনি চলে গেছেন অনেক দিন হয়ে গেল। এই
বিয়েতে লিপিকার বাবার একটুও মত ছিল না। ঠাকুমার চেষ্টাতেই বাবাকে একটু নরম করা
গিয়েছিল। নয়ত সামাজিক বিয়ে কিছুতেই হত না।
লিপিকার মন চলে গিয়েছিল সেই
ওদের বিয়ের সময়টায়। লিপিকা ঠাকুমাকে বলেছিল, এই দ্যাখো, তুমি এতগুলো
টাকা খরচ করে এই পেতলের ঘড়াটা পালিশ করিয়ে আনলে! আচ্ছা, আজকাল কে এসব বাড়িতে রাখে
বল... অমিতেশের ফ্ল্যাটটা ছোট, কোথায় রাখব জিনিসটা...
-তরা সব ছোট তো, কিছু বুঝস্ না, জানস্ না। পিতলের কলস বড়
শুভ হয়, রাইখ্যা দিস কোথাও...
বসার ঘরেই এটার স্থান হয়েছে।
রাখার কায়দায় একরকম মানিয়েও গেছে।
অমিতেশ যাচ্ছিল একঢোঁক বিয়ার
খেতে, এক বন্ধুও যাবে বলেছিল। ফোন করে বলল আজ আর হবে না। লিপিকা যাচ্ছিল ওর
ইস্কুলের বন্ধু মালিনীর কাছে, একলা হস্টেলে থেকে চাকরি করে। কথা বলে হালকা হবার
জন্য। ফোনে কথা শুনে লিপিকা বুঝল অমিতেশ তেমন কিছু উল্টোপাল্টা জায়গায় যাচ্ছিল না।
যাই হোক সেদিন কারুরই কোথাও আর যাওয়া হল না।
ছোট হলেও লিপিকা-অমিতশের
বসার ঘরটা বেশ সাজানো। থাইল্যান্ডের কাঠের হাতি, রাজস্থানের ছবি, কেরলের সরু লম্বা
নৌকো, আরও অনেক কিছু সুন্দর করে রাখা। তবে এরা সকলে যেন বাইরের অতিথি – চুপচাপ
তাকিয়ে আছে, ব্যাস্। শুধু ওই ঠাকুমার ভালবাসার মায়া জড়ানো পেতলের ঘড়াটার আজ খুব
ইচ্ছে করছে, এদের ঝগড়াটা যদি কোনোরকমে
মিটে যায়...
0 কমেন্টস্:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন