আই. সি. ইউ. - বেড নং ১২২৬
এখানে দিন নেই
এখানে রাত নেই
নিরবয়ব সময়
একা একা ঝুলে থাকে --
গতিহীন;
টিপ টিপ, টুপ টুপ,
নীল আলোর রেখায়
ফুটে ওঠে জীবনের মাপ।
সংখ্যাগুলো নড়ে চড়ে
ফিরে ফিরে আসে --
এত যন্ত্রের ভিড়ে
মানুষটাকে
বড় অকিঞ্চিৎকর মনে হয়!
তুমুল প্রযুক্তি
দেহযন্ত্রটাকে নজরবন্দী করে রেখেছে।
নিখুঁত অভ্যাসে
নিরন্তর মাপজোক চলে,
নীল সবুজ পোশাকে
নার্সরা সবাই ব্যস্ত
সংখ্যার হিসেব নিয়ে।
আর কিছু দিন --
আরও নিখুঁত হবে চিকিৎসা,
গোছা গোছা রোবট তখন
সঠিক সময়ে সঠিক ইঞ্জেকশনটা
দিয়ে যাবে।
আর কোন প্রশ্ন থাকবে না,
থাকবে না উত্তর দেওয়ার দায়।
বুঝি সেই স্বপ্নে বিভোর
মানুষটা
কাচের মত স্থির!
দিন নেই -- রাত নেই -- সময় নেই
জীবন নেই -- মৃত্যু নেই --
শুধু একটা সংখ্যা,
আর মনিটরে
জীবন স্পন্দন।
মানুষী
নারীর শরীর বেতসলতা, মোমের পুতুল,
আদর পেলে অমনি গলে,
তাকে নিয়ে গান্রচেছি, কাব্য কত, গল্পগাথা --
রাংতা কথার ঝালর দিয়ে
সাজিয়েছি চাঁদমালাতে!
মানুষ নারী গুমরে কাঁদে।
তার শরীরের বাঁকে বাঁকে,
হায়না কুকুর ছাপ রেখে যায় --
মেদ, মাংস, মজ্জা ছেনে,
হাত রেখেছি হৃদয়পুরে;
তপ্ত আবেগ, সুরার মত
উথলে ওঠে, এই মুঠিতে
ওম নিয়েছি মধ্যরাতে!
মানুষ নারী গুমরে কাঁদে।
অজগরের মতন আমার
ভালোবাসা পাকে পাকে,
নিচ্ছে শুষে স্নায়ুর থেকে
আত্মা এবং মনন তাহার,
দিচ্ছি ঢেলে মধুর আগুন --
মোমের পুতুল,
পুড়ছে আমার মিথ্যে কথার
ফুলকারিতে,
ভবের হাটে বিকিয়ে যেতে।
মানুষ নারী গুমরে কাঁদে,
তবুও কেন গুমরে কাঁদে --
অপমানে?
ফেরা
সময়,
যেন দমকা হাওয়ার
মত,
হু হু করে ছুটে গেল।
সঙ্গে করে নিয়ে
গেল,
কিছু কাঠকুটো,
কিছু চোখের জল ।
মরণপণ ঘূর্ণি
হাওয়ায়
পাক খেতে খেতে ছুটে
গেল
কিছু জীবন,
কিছু মৃত্যু!
আমার উথাল পাথাল
মুহূর্তগুলো,
জলপ্রপাতের মত
ঝাঁপ দিল অতল
গহ্বরে।
তীব্র আকাঙ্ক্ষার বিদ্যুৎ
তখন চিরে ফেলছিল
আকাশ,
আক্রোশে মাথা
ঝাঁকাচ্ছিল
বনস্পতি --
যুদ্ধের দামামা
বাজছিল
মেঘেদের কন্দরে।
এখন সব শান্ত --
দাঁড়িয়ে আছি নদীর
কূলে
একা।
অনেক দূরে,
জল যেখানে আকাশ
ছুঁয়েছে,
ধূসর রেখার মত নদীর
ওই পার --
বোঝা যায়, দেখা যায়
না।
সময় বয়ে চলেছে কুলুকুলু,
নিরালা অভ্যাসে।
ছায়া পড়েছে নদীর
জলে --
মরে আলোর কুচি,
ছড়িয়ে পড়ছে ঢেউয়ের
মাথায়।
আমিও এবার,
কিছু নুড়িপাথর
কুড়িয়ে
ঘরে ফিরব,
সন্ধে হলে।
0 কমেন্টস্:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন