কালিমাটি অনলাইন

দ্বাদশ বর্ষ / পঞ্চম সংখ্যা / ১২৫

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

দ্বাদশ বর্ষ / পঞ্চম সংখ্যা / ১২৫

শুক্রবার, ১ নভেম্বর, ২০১৯

রঞ্জনা ব্যানার্জী




অন্তর্ধান


নয়নতারা দেবীকে আর পাওয়া যায়নি। গলির মোড়ের দোকানদার মোশাররফ মিয়াই শেষ দেখেছিল তাঁকেমোশাররফের দোকানের সামনে থেকে উনি রিক্সায় উঠেছিলেন। কটার দিকে? –এই ধরেন গিয়া যোহরের ওয়াক্তের পরেঠাঁঠাঁ রইদ তহন।’
সেদিন বেলা নটা নাগাদ আঁধার করে মেঘ করেছিল। ঘন্টা দু’য়েক ঝড়ের পূর্বাভাষের মতই থমথমে ছিল চারদিক।
বাড়ির লোকেরা ঠিক কবে টের পেলো? অনেক পরে। সাড়ে পাঁচটা হবেওঁর ছেলে অফিস থেকে ফেরার পরেনিম গাছটা তখন নেই
রাতদিনের কাজের মেয়ে স্বর্ণা দেখেছিল ভোরে। পুজোর ফুল তুলতে ছাদে গিয়েছিলেনদরোজা আঁটকাতে ডেকেছিলেন
স্বর্ণাকে। একাদশীর উপোস ছিল তাঁর, নির্জলা উপোস। এইদিনগুলোতে নিজের ঘরেই থাকেন তিনি, তাই স্বর্ণা খোঁজ
করেনি। তাছাড়া সুফিয়া বুয়া এলো। দরোজা খোলাই ছিল। বড়মা নিশ্চয় ফুল তুলে ফিরেছিলেন
একমাত্র নাতি কলেজ থেকে ফিরেই ফের কোচিঙে চলে গিয়েছিল। ঠাম্মাকে দেখেছিল কি? মনে নেই।
বউমাকে তো ছেলেই জানালোঅফিসে জরুরী মিটিং ছিল। ব্রেকফাস্ট করারই সময় ছিল না, তো শাশুড়িমা’র খোঁজ! সারাদিনের ধকল এড়াতে পার্লারে একটা  ফুটবাথ এ্যাপয়েন্টমেন্ট করেছিল। হাফডান করে আসা যায়?
ঠিকে বুয়া সুফিয়া বেগম? হ্যাঁ। সেদিন কেবল সুফিয়ার সঙ্গেই তাঁর কথা হয়েছিল। কী কথা?

বলা নেই কওয়া নেই ধুম করে আকাশ কালোঘণ্টাখানেক আগে ও একগাদা কাপড় ধুয়ে, মেলে এসেছিল তারে। তাই পড়িমরি ছুটেছিল ছাদে। কাপড়গুলো আধশুকনো হয়ে গিয়েছিল হাওয়ায়। নিজের মনে গজগজ করতে করতে দ্রুত কাপড়ের ক্লিপের কামড় ছাড়িয়ে টেনে নামাচ্ছিলো ও, ‘আবার ভিতরের বারান্দায়  টানা দ্যাও, এক কাম দুইবার!’ স্বর্ণাকে হাত লাগাতে বললেই শুনিয়ে দেবে, ‘তোমার কাজ তোমার, আমার কাজ আমার’

কাপড়গুলো বড় গামলাটায় ঠেসে ফেরার জন্যে পা বাড়াতেই দেখে কার্নিশ ঘেঁষে নুয়ে থাকা নিমগাছটার দিকে একমনে তাকিয়ে আছেন তিনিসুফিয়া চেঁচিয়েছিল, ‘নানি বৃষ্টি আইতাসে’ চমকে ফিরেছিলেনঅদ্ভুত ফাঁকা সেই দৃষ্টি! ‘এইসব গাছ, উঠোন কিছুই থাকবে না রে’! সুফিয়া জানে পুরনো এই বাড়ি ভেঙে উঁচু বিল্ডিং হবে। অনেক ফ্ল্যাট। গাড়ি-বারান্দা হবে। গাছ থাকলে ক্যামনে কি? কাপড়ভর্তি গামলাটা কোমরের কাছে সামলে বলেছিল, ‘সিঁড়ি ল্যাপা বাকি নানি। যাই কাপড়গুলান বারান্দায় টাঙান দি’সংবিৎ ফিরে পেয়েছিলেন যেন তিনি। চোখের সেই উদ্ভ্রান্ত দৃষ্টি উবে গিয়েছিল। আকাশের দিকে চোখ তুলে বলেছিলেন, ‘এই মেঘে ভার নাই রেবৃষ্টি হবে না’ সুফিয়াও ভ্রূ কুঁচকে জরিপ করেছিল আকাশ। বুড়ির আসলেই মাথার ঠিক নাই। এমন কালামেঘে বৃষ্টি নাই কইলেই হইলো!  ঠিক তখনই একটা একলা শুকনো পাতা হাওয়ার তোড়ে পাল্টি খেয়ে ঘূর্ণী তুলেছিল, ‘নাইমা পড়েন নানি’, বলেই ছুটে নেমে গিয়েছিল সুফিয়া বেগমবারান্দায় কাপড় মেলে, সিঁড়ি মুছে ছুট লাগিয়েছিল অন্য বাড়িতেনয়নতারা দেবী পরে ছাদ থেকে নেমেছিলেন কি? ও জানে না।
আশ্চর্য! সেদিন সত্যিই বৃষ্টি হয়নি। মেঘ কেটে শিমুল তুলোর মত রোদ ফেটেছিল উঠোন জুড়েএবং যোহরের ওয়াক্তেই রিয়েল্টরের লোকেরা নিমগাছে করাত টানছিল পাড়া কাঁপিয়ে


0 কমেন্টস্:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন