বরিশাল থেকে দই বিকেলের লঞ্চে ঢাকা আসবে বলে সকাল থেকেই
প্রস্তুতি নিচ্ছিল। দইয়ের মা ছানা ঘোষ দইয়ের ব্যাগ গুছিয়ে দিচ্ছিল। দই
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পেয়েছে,ওখানে ভর্তি হবে।
দইয়ের বাবা সন্দেশ ঘোষ বললেন; মা,বিশ্ববিদ্যালয়ে কইলাম রাজনীতি ফাজনীতি করবা না।
দই খুব বাঁধুক মেয়ে। কাজল পরে, দূরবীন দিয়ে সন্ধ্যার আকাশ দেখে, রাতের তারা দেখে। কবিতা পড়ে না, গান শোনে বটে, তবে একতারা বাজাতে পারে। জানকী সিংহ সড়কের এক
কবি দইকে উৎসর্গ করে একবার কবিতা লিখেছিল। দই কবিকে ডেকে বলল;
:
বলো তো ভর আর ওজনের মধ্যে পার্থক্য কী?
কবি খুব চালাক, সে গুগল করতে থাকল। দই বলল;
:
আমি কবিতায় দ্রবীভূত হই না, কবি।
সন্ধ্যায় সাগর লঞ্চ যখন ঢাকার পথে কীর্তনখোলায় জীবনানন্দীয়
ঢেউ তুলল, দই তার ব্যাগ
থেকে ছোট দূরবীনটা বের করে আকাশ দেখতে থাকলো। তারা খুঁজছে… কোথায়
মহাবিশ্বের সবচেয়ে উজ্জ্বল তারাটি যাকে লুব্ধক বলে ডাকে?
আচানক তার সামনে সেই দ্রবক কবিকে দেখতে পায় সে। কবি তবে সহযাত্রী আজ! কবি তার
হাতে একটা লিটল ম্যাগ ধরিয়ে অদৃশ্য হয়।
দই তাকিয়ে দেখল ম্যাগাজিনটার নাম লুব্ধক।
দই অবাক হলো না। মহাবিশ্বের কোনো কিছুই তাকে অবাক করে না। রাতের আলোতে পত্রিকা
ওল্টাতে গিয়ে চোখে পড়লো একটা বিশাল প্রবন্ধ। আসমা চৌধুরীর ‘মাঝরাতে জীবনানন্দ’। পড়তে শুরু করলো
*
মাঝে মাঝে মনে হয় কী খুঁজে বেরিয়েছেন কবি সারাজীবন?
কী তাকে তাড়া করেছিলো?
নৈঃশব্দ্যের গহ্বরে লুকিয়ে কী
দেখতে চেয়েছিলেন তিনি? কোন আলো মেখে নিতে চেয়েছিলেন কবি বোধের অন্ধকারে?
প্রকৃতির কোলে কেনই বা আশ্রয় খুঁজেছেন বারবার? কী হারিয়ে ছিলেন তিনি? সে কি প্রেম?
*
দই কী যেন ভাবল পড়া থামিয়ে। লঞ্চের সরীসৃপ গতিকে স্তব্ধ করে হঠাৎ শোরগোল শোনা গেল, কে যেন কীর্তনখোলায় ঝাঁপ দিয়েছে।
কী করে যেন দই জেনে গেল সেই কবি, সেই লুব্ধকের কবি… জলে ঝাঁপ
দিয়েছে।
রাতটা কালির দোয়াত থেকে টুপটাপ নামতে থাকে। দূরের আরো দূরের নদীকূল ভেসে থাকে ছোট্ট
দূরবীনে। রাতের অগণন নক্ষত্রও।
আলো জ্বলা বরিশাল বন্দর, কোলাহল মৌনী একটু আগে
দেখা সেই কবির জ্যামিতিক মুখ। রাতের ছায়া ওর অনিমেষ
মুখে পড়ে। চোখের জলে কী হৈ রৈ জোয়ার।
কী বলতে এসেছিল আবার লুব্ধক?
এক পশলা ম্যাজিক পেলাম
উত্তরমুছুন