কালিমাটি অনলাইন

দ্বাদশ বর্ষ / পঞ্চম সংখ্যা / ১২৫

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

দ্বাদশ বর্ষ / পঞ্চম সংখ্যা / ১২৫

শুক্রবার, ১ নভেম্বর, ২০১৯

বিমলেশ ত্রিপাঠী




প্রতিবেশী সাহিত্য


বিমলেশ ত্রিপাঠী’কবিতা     

(অনুবাদ : মিতা দাশ) 




কবি পরিচিতি : কবি বিমলেশ ত্রিপাঠী জন্মগ্রহণ করেন বিহারের বক্সার জেলার হরনাথপুর গ্রামে। গ্রামের স্কুলে পড়াশোনা শুরু করে পরবর্তীকালে তিনি বি এড পাশ করেন কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে এবং হিন্দি সাহিত্যে স্নাতকোত্তর করেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। এছাড়া হিন্দি সাহিত্যের বিখ্যাত কবি কেদারনাথ সিং-এর কবিতা ওপর গবেষণা করে পি এইচ ডি ডিগ্রি অর্জন করেন। তিনি একইসঙ্গে কবি, গল্পকার, ঔপন্যাসিক এবং প্রাবন্ধিক। তাঁর লেখা অনেকগুলি গ্রন্থ ভারতের বিভিন্ন প্রকাশনা থেকে প্রকাশিত হয়েছে। এছাড়া তিনি হিন্দি কবিতার অনুবাদ সংকলন প্রকাশ করেছেন বাংলা ও ইংরেজিতে।



তুমি শুনছো কি আলিয়া পারভীন খাতুন

এই কালো ঘন নিস্তব্ধ রাতে আজ তোমায় 
আমি স্মরণ করছি আলিয়া পারভীন খাতুন 

সেই তোমায় প্রথম ও শেষ বারের মত লেখা  চিঠি 
তা পড়ার পর যদি তুমি উদাস ও চুপ মেরে না থাকতে 
তাহলে একটি বাসা বাঁধা যেত 

ওই যে গোলাপ আমি কচলে ছিলাম হাতের মুঠিতে 
ওই চকোলেট সেই দিন নর্দমায় ফেলে দিয়েছিলাম 
ওই চোখের জল সেই অন্ধকারে গড়িয়ে পড়েছিল 
সেগুলি যদি থামিয়ে ফেলতে তুমি 
তাহলেই আমি নিশ্চিন্ত মনে ঘুমিয়ে পড়তে পারতাম 

তুমি এখন কোথায় আলিয়া পারভীন খাতুন 
কাশ্মীরে, বালুচিস্তানে নাকি সিরিয়ায় 
তুমি যখনই গাও গুলজারের লেখা গান 
হেসে উঠো কৃষ্ণচূড়ার মতই 
তুমি কি জানো 
তোমার গানের খাতা 
এখনো রয়েছে আমার কাছে সুরক্ষিত 
সেই খাতা আমি চুরি করেছিলাম তোমার ব্যাগ থেকে 

তুমি কি শুনছো আলিয়া পারভীন খাতুন 
এই দেশ এখন থাকার মত নয় 
প্রেমকে কিনে নিয়েছে বাজার 
কবিতাগুলি এখন শুধু মিথ্যে সামান্য মানুষের ভাষায় 

একটি নামী পার্শ্ব গায়কের টুইটারে  
তর্কে মেতেছে গোটা ভারতবর্ষ 
কারুর কানে যায় না বুদ্ধিজীবী, শিল্পীদের কথা 
এখন এই দেশটাই অভিনেতা ও নেতাদের আমার বন্ধু 

তুমি শুনছো কি আলিয়া পারভীন খাতুন 
আমি প্রত্যেক কবির মতই 
নিজের কবিতার ভেতর হারিয়ে গিয়েছি 

কারা খুন করেছে তোমায় 
হিন্দুৱা, মুসলমানেরা, শিখরা, খ্রীষ্টানেরা 
কি রাজনীতির ছুরি বসিয়ে খুন করা হয়েছে তোমায় 

কিছু তো বল আলিয়া পারভীন খাতুন 
চুপ করে আছো কেন 

সত্যি কি তুমি নেই এই পৃথিবীতে ...


সেই দিনে

কিছু কিছু মানুষ ছিল যারা বেশ তীব্র গতিতে
পরিবর্তিত হয়ে চলেছিল একটি হিংস্র পশুতে
আমি কিন্তু চেয়েছিলাম যেন মানুষ হয়ে থাকি
কিন্তু অতি মুস্কিল আমার মানুষ হয়ে থাকা
একটি অদ্ভূত ধরনের দুঃখ আমায় ঘিরে ধরেছিল
নিঃশ্বাস নিতে বেশ কষ্ট পেতাম

তখন আমার মনে হত যে এই দেশে বেঁচে থাকার জন্য
আমাকে একটি পশুর রূপে পরিবর্তিত হয়ে যেতে হবে
আমার সব প্রতিরোধ এক জায়গায় পড়ে থাকবে

সেইদিনও এলো যখন আমি পশুর রূপে পরিবর্তিত হয়ে গেলাম
তখন আমার কাছে পৃথিবীর সব কিছুই ছিল, যে সব না থাকায় আমায়
পাড়া, গ্রাম সব জায়গায় অকার্যকর মনে করে গণ্য গালমন্দ করা হত

যখন সেইদিন এলো তখন সব কিছু ছিল আমার কাছে
শুধু কবিতা ছিল না

             
নারীরা হাসছে খিলখিল করে

যে নারীরা হাসছে খিলখিল করে সেই নারীদের ভালো লাগে
ভালো লাগে তাদের হলুদ দাঁতগুলিও
মোচড়ানো সুতির পরনের শাড়িও
হাতওলা ঢিলে কুর্তিও ভালো লাগে
সুন্দর দেখায় খিলখিল করে হাসলে নারীদের
ওরা হাসলেই পৃথিবীর নিজের অক্ষে কিছুক্ষণের জন্য যায় থেমে
ওদের দেখে আকাশও জানায় সেলাম

হে পৃথিবীর নারীরা
তোমরা এমনি করে খিলখিল করে হাস
তোমাদের হাসিতে সভ্যতার কালো অন্ধকার
ধীরে ধীরে যাক কেটে

      
খ্যাতি

যার কাছে এই জিনিস একটুও ছিলো না
তাদের একটু চাহিদা ছিলো, আর যাদের কাছে প্রথমেই একটু ছিলো
তাদের এর চেয়ে বেশির চাহিদা জন্মালো, আর যাদের কাছে অনেক বেশি ছিলো
তারা অমরত্ব পাবার জন্য প্রাণ দিয়ে চেষ্টায় মেতেছে  

সেই সংসারে ভুল করে বা জেনে বুঝেই হয়ে উঠেছিলাম বাসিন্দা
এমন কেউ ছিলো না যার এই এই জিনিসের দরকার ছিলো না
এমনও লোক আছে যারা মাথা উঁচু করে আর বুক ফুলিয়ে বলে বেড়াতো
আমি তো শুধু সেবা করার জন্যই আছি, আমার এই বিষাক্ত জিনিস
কিন্তু ওরাই ছিলো আসলে খ্যাতির লোভী

মিথ্যে বলব না, আমারও সেই চাহিদাই ছিলো
কিন্তু কখন বন্ধুত্বের খাতির, কখন প্রেমের খাতির আর কখনো কর্তব্যে জড়িয়ে
আমি তা পাবার থেকে বঞ্চিত থেকে যাই 

শুধু এই বলে মনকে বুঝিয়ে নিতাম যদিও নাই বা পেলাম এই জীবনে
মরার পর হয়তো পেয়ে যাবো

সত্যি যেনো এই একটি ছোট্ট শিশু মনের মত প্রত্যাশা নিয়ে
আমি নিজের কবিতাকে কখনই মরতেই দিইনি
                

 প্রত্যাশা

রাতকে প্রশ্ন করি
নিজের বুকে কী করে সহ্য করো
এই একাকিত্ব

রাত হেসে বলে
আমার দেহে সে একটি শব্দ লেখে
‘সকাল’  


0 কমেন্টস্:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন