বাড়ি
জমিটা ছিলই কিন্তু বাড়ি করতে যে এত খরচ তা বারীন জানত না। প্রভিডেন্ট ফাণ্ড প্রায় শেষ, গিন্নীর সীতাহার বন্ধক রাখতে হয়েছে। বন্ধু কানাই বলত, এত যে করছিস, ছেলেরা পুণে, বেঙ্গালুরু ছেড়ে আসবে কি?
আসবে রে আসবে! বাড়ির টান বলে কথা। বাড়ি নেই তাই দূরে আছে। বাড়ি হলে ঠিক চাকরি খুঁজে চলে আসবে।
তা এত বড় গেট না করলেই নয়?
ওটা তো লাগবেই। গ্রানাইট ফলকে বাড়ির নাম লেখা থাকবে। ‘মধুরালয়’, অনেকদিন ঠিক করে রেখেছি।
এত খরচা করছিস, জীবনটা তো চালাতে হবে!
ছেলেদের জন্যই থাকবে সব। দুজনের আলাদা ঘর, নাতি-নাতনিদের খেলার জন্য উঠোন ছেড়েছি অনেকটা.... আমাদের আর ক’দিন!
এই এত কথার মধ্যে ওই শেষেরটা পট করে ফলে গেল। মাত্র কয়েক মাসের ভেতর দুজনেই স্বর্গবাসী।
ছেলেরা দেরি করল না। এখানে থাকার প্রশ্নই নেই, বাড়ি বিক্রি করে পয়সা জমা করে দিল মিউচুয়াল ফাণ্ডে, ভালো রিটার্ন। বাড়ি কিনল বিক্রম সাঁতরা। আখের গুড়ের ব্যবসা, সেদিক দিয়ে ‘মধুরালয়’ নামের মানেটা অন্তত রইল। গ্রানাইট ফলক শুদ্ধু গেটটা অবশ্য ভেঙ্গে দিয়েছে, গুদাম করেছে যে! ট্রাক ঢোকার জায়গা চাই তো!
কানাই একদিন ওই রাস্তা দিয়ে যেতে যেতে বাড়িটার সামনে দাঁড়িয়ে পড়েছিল। ভ্যাঁক ভ্যাঁক করে হর্ন বাজতে সরে এল কানাই। চটচটে গুড়ের বস্তা নিয়ে ট্রাক বেরোচ্ছে। ছোট ছেলে বড় ছেলের আর কোনো ব্যাপার নেই, ভেতরের দেওয়াল সব ভেঙ্গে দিয়ে হলঘরের মত করে সারি সারি থাক থাক গুড়ের বস্তা রাখা হয়েছে।
কানাই রাস্তার ধারে একটু ফাঁকা একটা জায়গায় এসে আকশের দিকে তাকালো। বিড়বিড় করে বলল, ভগবান, তোমার স্বর্গের জমিটা কাচের যেন না হয়, ওপর থেকে বাড়িটা ওরা দেখতে পাচ্ছে না তো...
0 কমেন্টস্:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন