প্রতিবেশী সাহিত্য
গাব্রিয়েলা মিস্ত্রাল-এর কবিতা
(অনুবাদ : জয়া চৌধুরী)
কবি
পরিচিতি :
লুসিলা
গোদোই আলকাইয়েগা ওরফে গাব্রিয়েলা মিস্ত্রাল হিস্পানিক সাহিত্য জগতের এগারোজন নোবেল
পদক জয়ী সাহিত্যিকদের মধ্যে একমাত্র মহিলা কবি
ছিলেন। ১৮৮৯ সালে চিলের ভিক্যুনিয়া শহরে জন্মগ্রহণ করেন। বাল্যকালে
অর্থাভাবে লেখাপড়া অর্ধসমাপ্ত রেখে ছেড়ে দিতে হলেও পরবর্তী কালে সম্পূর্ণ লাতিন
আমেরিকা জুড়ে তিনি সর্বজন শ্রদ্ধেয় শিক্ষাবিদ হিসাবে পরিচিত হন। ১৯৪৫ সালে ‘তাঁর শক্তিশালী আবেগ সমৃদ্ধ লাতিন আমেরিকার আদর্শগত উচ্চাশার প্রতিরূপ লিরিক্যাল পদ্যের জন্য’ সুইডিশ অকাদেমি নোবেল পুরস্কার প্রদান করে।
এরপর তিনি আমেরিকান চিলের কনসাল নিযুক্ত হন। সেখানেই ১৯৫৭ সালে প্রয়াত হন
তিনি। তাঁর অসংখ্য কাব্যগ্রন্থের মধ্যে কয়েকটি হল ‘নির্জনতা’, ‘নারীদের জন্য পাঠ’, ‘মায়া’ ইত্যাদি।
Desveleda (জেগে থাকা)
এই যে আমি রানী এবং সে আমিই ছিলাম
ভিখারিনী, এখন
বিশুদ্ধ কাঁপুনির ভেতর বেঁচে থাকি
ভেবে আমায় ফেলে গেছ তুমি,
আর তোমাকে জিজ্ঞেস করছি, রক্তশূন্য, প্রতি মুহূর্তে-
“এখনও কি সঙ্গে রয়েছ তুমি?” ওহ্ আমার কাছ থেকে দূরে যেও না তুমি!
চেয়েছিলাম হাসতে হাসতে সব চলাটুকু
চালিয়ে যাব
আর এখন বিশ্বাস করছি তুমি এসে রয়েছ;
তবু ঘুমোনোর আগ মুহূর্ত পর্যন্ত ভয়
পেতে থাকি
আর স্বপ্নের ভেতরেও প্রশ্ন করতে
থাকি “ওগো, যাও নি তো তুমি?”
La cuenta –
mundo (বিশ্ব-কাহিনী)
ছোট্ট ছেলে, আবির্ভূত,
যেন তুমি আসো নি যেন তুমি পৌঁছেছিলে,
আমাদের যা আছে তোমায় তা জানাবো
আর তুমি নেবে আমাদের অংশভাগ।
Todo es ronda (সব কিছু গোল)
তারা শিশুদের কাছে গোল,
খেলতে থাকে দুনিয়াকে নজর রাখার
জন্য...
গমেরা হল কর্মশালা খুকীদের
দোলে খেলাচ্ছলে... দুলতে থাকে...
নদীরা শিশুর কাছে গোল
সমুদ্র সাথে করে দেখা খেলতে
খেলতে...
ঢেউয়েরা খুকীদের কাছে গোল
খেলতে থাকে দুনিয়া আপন করে নিতে...
মায়া এঞ্জেলো’র কবিতা
(অনুবাদ : ইন্দ্রাণী সরকার)
কবি
পরিচিতি :
মায়া এঞ্জেলো। মূলতই একজন বিপ্লবী নারী। সাহসী মানুষ।
বর্ণবাদের বিপক্ষে জাগিয়ে তুলেছিলেন কালোদেরকে। নারীর অধিকারের প্রশ্নে ছিলেন
মিছিলের সম্মুখে। জন্ম থেকে মৃত্য, পুরো জীবনটাই মায়া এঞ্জেলো কাটিয়েছেন সংগ্রামে। কবিতা
লিখেছেন, আত্মজীবনী
প্রকাশ করেছেন, সবখানেই
তুমুলভাবে কথা বলেছেন সত্যের পক্ষে। মায়া এঞ্জেলো জন্মেছিলেন এপ্রিলের চারে।
উনিশশো আটাশ। ছিয়াশি বছর বয়সে দুই হাজার চৌদ্দতে তিনি প্রয়াত হলেন। আমরা তাকে
ভুলিনি। আমরা এখনো তার বই পড়ি। তার কবিতা আবৃত্তি করি। মায়া এঞ্জেলো হারাবেন না।
সকলেই হারিয়ে যান না। কারো কারো মৃত্যুই নেই।
ডায়ানার দিনগুলি
রাতের
আলোয় পৃথিবীর স্তব্ধতা মাটিতে ছড়িয়ে পড়েছে।
আমাদের
দু:খে ভারাক্রান্ত পায়ের ওপর আমরা ক্রমশ: নুয়ে পড়ি।
মন
অজানাকে জানতে চায়
সূর্য্যকুমারী
ছাড়াই আমাদের হৃদয় আগামীকে মাপতে চায়।
যে হাত
দুটি দিয়ে সূর্য্যকুমারী তার উজ্জ্বল টায়ারা আর রত্নখচিত মুকুট ধরে থাকে,
সেই
হাতেই এ্যাঙ্গোলার ধুলাময় রাস্তার ব্যাথাময় মুখগুলি স্পর্শ করে।
যদিও
তার জন্ম আতিশর্য্যের মধ্যে
তবুও সে
কোনো সবজান্তার ভাব না দেখিয়েই দরিদ্রদের সাথে মিশে যায়।
বসনিয়ার
ঝলমলে আর চনমনে সুন্দর মেয়েটিকে তার সৌন্দর্য্য ও সহজলভ্যতার জন্য
আমরা
তাকে সর্বদা ভালোবাসি ও ধরে রাখতে চাই।
আমাদের
ভালো লাগে মেয়েটি যখন নিজের খুশিতে নিজেই হাসতে থাকে।
পৃথিবী
এখন আর আগের মতো নেই।
অনেক
ছোট, সংকুচিত
আর বর্ণহীন হয়ে গেছে।
তবুও
মেয়েটি বেঁচে ছিল কারণ সে পরিবর্তনের সাথে
খাপ খাইয়ে চলত।
সে
ইতিহাসে তার পদক্ষেপ রেখে গেছে।
আমরাও
নিজেদের ছেড়ে অন্যের জন্য চিন্তা ভাবনা করতে পারি।
তার
জীবন থেকে শিক্ষা নিয়ে মমতা, কৌতুক, সৌন্দর্য ও উৎসাহ দিয়ে নিজেদের
জীবন গড়তে পারি।
সূর্যকুমারী
বিদায়।
আমি জানি খাঁচার পাখি কেন গায়
ওই চেয়ে
দ্যাখো আকাশে উড়ে যাওয়া
পাখিটি
কেমন সূর্যের কমলা রঙে
গা
ভিজিয়ে আকাশকে আপন করে নেয়!
কিন্তু
খাঁচার মাঝে আবদ্ধ যে পাখিটির
ডানা আর
পা বেঁধে রাখা হয়েছে,
সে শুধু
তার দৃষ্টির সীমাবদ্ধতায়
আপন মনে
গান গেয়ে যায়।
তার গান
দূরে বহুদূরে পাহাড়ে ছড়িয়ে পড়ে
সে
কেঁদে কেঁদে তার মুক্তির গান গেয়ে যায়।
মুক্ত
পাখীটি খোলা হাওয়ায় সকালের আলোয়
উজ্জ্বল
ঘাসের ফাঁকে তার খাদ্য খুঁজে নেয়।
কিন্তু
খাঁচার পাখিটি আতঙ্কগ্রস্তের ন্যায়
তার
ছায়ার দিকে তাকিয়ে রাতের আঁধারে
শুধু
মুক্তির গান গেয়ে যায়।
0 কমেন্টস্:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন