দুধের বৃষ্টি
একবার বাবার পিঠে খুব ঘামাচি হলো, মা বললেন দুধ দিয়ে গোসল
করলেই ঠিক হয়ে যাবে। আমার বাবার জন্ম হয়েছিল আমাদের লালনের জন্য। মা’র সাহস আছে
বটে, এতো বড়ো মানুষটাকে তিনি দুধে ভেজানোর হিম্মত করেছিলেন।
বাবা মিনমিন করলেন, কাগজ কলম নিয়ে হিসাব করলেন একটা মানুষকে
গোসল করাতে কী পরিমান দুধ লাগতে পারে। টাকার অংকে তিনি আর সাহস করলেন না।
ছোটবোন সারাক্ষণ হাতে ফোন নিয়ে ঘোরে, গরমে বাবা ঘেমে এসে
শার্ট খুললেই সে পিঠের একটা ছবি তুলবে, সে কখনো ঘামাচি পিঠ দেখেনি। এ ছবি ফেসবুকে
কী রকম আলোড়ন করবে, ভাবতে পুলক বোধ করল।
আমি দেরি করে ভাত খাই, ভাত খেতে খেতে বাম হাতের বুড়ো আঙ্গুল
দিয়ে গুগল করি। কেন ঘামাচি, তার প্রতিকার কী?
মুশকিলটা বাঁধল আমি ঘামাচির ইংরেজী জানি না।
মুশকিলটা বাঁধল আমি ঘামাচির ইংরেজী জানি না।
ছোট ভাইটা ইংরেজী সাহিত্যে পড়ে মিরপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে। ওকে
ফোন করাতে বিরক্ত হলো;
: তোর খেয়েদেয়ে কাজ নেই? সুপ্রীম কোর্টের সামনের ভাস্কর্য
যদি ‘প্রতিমা’ বানিয়ে ইস্যু করা যায়, বল তো তখন কী হবে আমাদের?
মুহূর্তে ফোনটা কেটে দিল।
পাশের বাসার ভাড়াটে এক দরবেশ, তিনি সম্প্রতি সংবাদে শিরোনাম
হয়েছেন, আবার মিনমিন করে বলছেন যে, পত্রিকা যতোটা লিখেছে ততোটা সম্পত্তি আমার নেই।
একটা ছাত্র সংগঠন বিবৃতি পাঠালো পত্রিকায় ঋণ টিন খেলাপি
নিয়ে।
মা’র কাছে যখন আমার জন্মসাল বা তারিখ জানতে চাই, মা হাসতে
থাকেন। বৃষ্টির এক শ্রাবণ দিনে আমি
পৃথিবীতে ঢুকে পড়ি। জন্মের অব্যবহিত পরেই আবিস্কৃত হই: আমার চক্ষু নাই রে।
বাবার কাজই হলো উপার্জন আর আমাকে আলো দেয়া।
এই আলোদান কর্মসূচিতেই একদিন ছোটবোন কোথায় যেন শুনে এলো,
বৃষ্টিতে ঝুপঝুপ ভিজলে ঘামাচি থাকবে না।
আমার জন্ম মাসেই আবার বাবা বৃষ্টিতে ক্ষুধার্ত বালক হয়ে ভিজলেন। ছোট বোনটার
একটু মন খারাপ হলো, সে ঘামাচির ছবি তুলে রাখতে পারেনি।
আজকাল খুব বৃষ্টি হলে মা’কে দেখি বিছানায় শুয়ে শুয়ে দুধের স্বপ্ন
দেখেন।
চোখে দুধস্বপ্ন নিয়েই আমাদের শুধু বৃষ্টিতে ভিজতে হয়।
উত্তরমুছুনঅধরা অনেক ছবি শুধু ছবিই থেকে যায়..
নিজের অন্ধকার ঘুচে না;
বাবাদের শুধু আলোই ছড়িয়ে যেতে হয় তবুও...