কালিমাটি অনলাইন / ৫৪
গত ১৭ ও ১৮ মার্চ ২০১৮
জামশেদপুরের ৪৫ বছরের প্রবীণ সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান ‘সৌরভ’এর ৪৩তম বাৎসরিক
অনুষ্ঠান সম্পন্ন হলো সম্প্রতি নির্মিত সৌরভের নিজস্ব প্রেক্ষাগৃহে। অনুষ্ঠানের
প্রথম দিন ছিল সাহিত্য অধিবেশন ও দ্বিতীয় দিন সৌরভের ছাত্র-ছাত্রীদের পরিবেশিত
সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। প্রতি বছরের মতো এবছরও সাহিত্য অধিবেশনে আমন্ত্রিত
অতিথি-বক্তা একটি নির্দিষ্ট সাহিত্য বিষয়ের ওপর দীর্ঘ বক্তব্য রেখেছিলেন এবং
পরবর্তী পর্যায়ে ছিল উপস্থিত দর্শক-শ্রোতাদের সঙ্গে অতিথি-বক্তার অভিমত বিনিময়।
এবছর সৌরভের অতিথি-বক্তা ছিলেন বিশিষ্ট অধ্যাপক ও প্রাবন্ধিক ড. অমর্ত্য মুখোপাধ্যায়। তাঁর
বক্তব্য বিষয় ছিল ‘ভারতীয় সাহিত্যে রাষ্ট্র ও রাজনীতির প্রতিফলন’। তাঁর সুদীর্ঘ
বক্তৃতা একইসঙ্গে ছিল প্রাঞ্জল ও তথ্যসম্ভারে সমৃদ্ধ। বিশেষত তাঁর বক্তব্যে যে
কথাটা আমাকে তাড়িত করল, আমরা যারা সাহিত্যচর্চা করি, ভালোবাসি, সমাদর করি, তারা
নিজের মাতৃভাষায় লিখিত সাহিত্যের বাইরে কতটা ওয়াকিবহাল আমাদের প্রতিবেশী ভাষায়
লিখিত সাহিত্য সম্পর্কে? আমরা নিজেদের ভারতীয় পরিচিতি পর্যায়ে সচেতন এবং সেজন্য
গর্ব বোধ করি, অথচ একই দেশের বিভিন্ন ভাষার লেখকদের নাম ও তাদের সাহিত্যসৃষ্টি
সম্পর্কে আদৌ কোনো খোঁজখবর রাখি না। এবং এটা শুধুমাত্র সাহিত্যের ক্ষেত্রেই নয়,
সাংস্কৃতিক যে কোনো ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। এটা তো আমাদের অসম্পূর্ণতা! ব্যর্থতাও বলা
যেতে পারে। আসলে আমরা নিজেদের ভারতীয় বা আরও সাহসী হয়ে নিজেদের আন্তর্জাতিক মনে
করলেও প্রতিবেশী ভাষাভাষী মানুষদের হাল হকিকত জানি না। জানার আগ্রহ বোধ করি না।
বিশেষত সাহিত্য ও সংস্কৃতি প্রসঙ্গে। অধ্যাপক
অমর্ত্য মুখোপাধ্যায়কে ধন্যবাদ জানাই, সেদিনের বক্তৃতায় তিনি আমাদের এই অনাগ্রহের
প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিলেন।
বিগত ১৭ মার্চ ২০১৮ তারিখে
‘সৌরভ’এর সাহিত্য অধিবেশনে আরও একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিল, যা বিশেষ
কারণবশত স্থগিত রাখতে হয়েছিল। এবছর ভারত সরকার সাহিত্য ও শিক্ষাক্ষেত্রে
গুরুত্বপূর্ণ অবদানের জন্য অধ্যাপক ড. দিগম্বর
হাঁসদাকে পদ্মশ্রী সম্মানে সম্মানিত করেছেন। তাঁর এই সম্মান প্রাপ্তিতে ‘সৌরভ’এর
পক্ষ থেকে তাঁকে সংবর্ধনা জানানোর আয়োজন করা হয়েছিল। কিন্তু অধ্যাপক
হাঁসদা সেদিন জামশেদপুরে উপস্থিত না থাকায় অনুষ্ঠান স্থগিত রাখতে হয়েছিল। প্রসঙ্গত
জানাই, অধ্যাপক হাঁসদা রাজনীতি বিজ্ঞানে সর্বোচ্চ ডিগ্রি অর্জন করে দীর্ঘদিন
জামশেদপুরে একটি কলেজে অধ্যাপনা করে অবসর গ্রহণ করেছেন। সেইসঙ্গে সাঁওতালী ভাষা ও
সাহিত্যের সৃজনশীল কাজে তিনি নিজেকে সম্পূর্ণভাবে নিয়োজিত রেখেছেন। সাঁওতালী
সাহিত্যে তাঁর অবদান ‘সরনা গদ্যপদ্য সংগ্রহ’, ‘সাঁওতালী লোককথা সংগ্রহ’, ‘ভারতীয়
লৌকিক দেবদেবী’, ‘গঙ্গমালা’ ইত্যাদি অমূল্য গ্রন্থরচনা। এছাড়া সাঁওতালী ভাষায়
ভারতীয় সংবিধানের অনুবাদ তাঁর একটি অনন্যকর্ম। অধ্যাপক হাঁসদা জন্মগ্রহণ করেছিলেন
বিহার রাজ্যের (বর্তমানে ঝাড়খন্ড রাজ্য) সিংভূম জেলার জামশেদপুর মানগো স্থিত বেকো
অঞ্চলের ডোবাপানি গ্রামে ১৬ অক্টোবর ১৯৩৯ সালে। বর্তমানে তিনি জামশেদপুরে করণডি
অঞ্চলে বসবাস করেন এবং কেন্দ্রীয় সরকারের আদিবাসী অনুসন্ধান সংস্থার সক্রিয় সদস্য।
‘কালিমাটি’ পত্রিকার পক্ষ থেকে অধ্যাপক হাঁসদাকে জানাই শুভেচ্ছা শ্রদ্ধা ও
অভিনন্দন। কামনা করি তাঁর নীরোগ ও সুস্থ জীবন।
বাংলা নতুন বছর শুরু হবার প্রাক্কালে
প্রকাশিত হলো ‘কালিমাটি অনলাইন’এর ৫৪তম সংখ্যা। সবাইকে জানাই নতুন বছরের শুভেচ্ছা
ও ভালোবাসা।
আমাদের সঙ্গে যোগাযোগের ই-মেল ঠিকানা :
kajalsen1952@gmail.com /
kalimationline100@gmail.com
দূরভাষ যোগাযোগ :
08789040217 / 09835544675
অথবা সরাসরি ডাকযোগে যোগাযোগ :
Kajal
Sen, Flat 301,
Phase 2,
Parvati Condominium, 50 Pramathanagar Main Road, Pramathanagar,
Jamshedpur 831002,
Jharkhand, India
0 কমেন্টস্:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন