কালিমাটি অনলাইন

দ্বাদশ বর্ষ / পঞ্চম সংখ্যা / ১২৫

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

দ্বাদশ বর্ষ / পঞ্চম সংখ্যা / ১২৫

বুধবার, ১১ এপ্রিল, ২০১৮

পিয়াল রায়




রতন মাঝির এস টি ডি বুথ


মূল ডাকঘরের পাশেই রতন মাঝির এস টি ডি বুথ। রতন মাঝির পৈতৃক পেশা কী ছিল, তা আর জানা যায় না। রতনকে এ ব্যাপারে প্রশ্ন করেও কোনো উত্তর মেলে  না। তবে রতন যে এই এলাকার লোক নয়, তা তাকে দেখলেই বোঝা যায়। তার   গায়ের রঙ কোনো অজানা সামুদ্রিক শ্যাওলার কথা মনে পড়িয়ে দেয়। লোকেরা  অনেক ভেবেও ঠিক করতে পারে না, এমন শ্যাওলা তারা শেষবার কোথায় দেখেছে! কোনো সুদূর অতীতে নৌকো নিয়ে সমুদ্রে ভেসে পড়া এক  যুবকের ছবিই আবছা ভাবে মনের মধ্যে বুড়বুড়ি কাটে। তবে ভাগ্য ভালো বলতে হবে রতনের, এ নিয়ে লোকে খুব বেশি জ্বালাতন তাকে করে না। সেও কাউকে জ্বালায় না। আপন মনে এস ডি টি বুথে পড়ে থাকে সারাদিন। আজকাল স্মার্টফোনের যুগ। মেয়েমদ্দা সবার হাতে হাতে মোবাইল ফোন। যখন ইচ্ছে যত প্রাণ চায় কথা বলতে পারে। কেউ আর আগের মতো এস টি ডি বুথে আসে না। তবুও দু'একটা লোক যে আলটপকা ছিটকে চলে আসে না, তা তো নয়, আর তাদের জন্যই রতনের বুথ  আগলে বসে থাকা। এভাবে বসে থাকতে থাকতে একেকদিন অনেক রাতে রতন দেখেছে তার এস টি ডি বুথটা কখন যেন একটা তিন মঞ্জিল ইমারত হয়ে গেছে। কোথা থেকে এসেছে হুরিপরীর দল। তাদের হাতে মোবাইল ফোন। ফোনে তারা গল্প করে বয়ফ্রেন্ডের সাথে। আর তারা এলেই পৃথিবীতে যেন জ্যোৎস্নার বান ডাকে। মিষ্টি সৌরভে ভেসে যায় চারদিক।ধবধবে জ্যোৎস্নায় তাদের মাখনরঙা শরীর থেকে চাঁদনী চুঁইয়ে পড়ে। রতন অবাক হয়। পরীরা নিজেদের মতোই আসে, বয়ফ্রেন্ডের সাথে হাসতে হাসতে গল্পগুজব করে, তারপর চলে যায়। রতনকে ওরা দেখতে পায়  না, যদিও রতন ওদের সামনেই বসে থাকে। ব্যাপারটা প্রথম সে বলেছিল সুলেখাকে। সুলেখা ওর হবু বউ। প্রথম প্রথম সুলেখা শুনে হাসতো, আজকাল  সন্দেহের চোখে তাকায় রতনের দিকে। রতনের ভালো লাগে না। রতন সতর্ক হয়। আর কাউকে এ কথা বলে না। অনেক ভেবে শেষপর্যন্ত কথাটা রতন বেণুধর দত্তকে জানায়। বেণুধর এলাকায় একসময়ের ত্রাস ছিল। আগামী বছর ইলেকশনে লড়বে বলে জনগণের কাছের মানুষ হওয়ার চেষ্টায় আছে। সবটা শুনে বেণুধর গম্ভীর হয়।   রাতের দিকে রতনের এস টি ডি বুথে চলে আসে একাই। নানা রকম গল্প করে। যাবার সময় রতনকে বলে যায়, রাতবিরেতে হুরিপরী দেখা ভালো নয়। যেদিন পরীরা রতনকে দেখতে পাবে সেদিন থেকে ওরা আর রতনকে বাঁচতে দেবে না। রতন যেন সাবধানে থাকে। বেণুধর দত্ত চলে যাবার পর থেকেই রতন ভেবে চলেছে। পরীরা সত্যিই কি তাকে দেখতে পাবে কোনোদিন? দেখতে পেলে সত্যিই কি তারা রতনকে মেরে ফেলতে চাইবে?  তার মতো গরীবকে মেরে পরীদের কী লাভ? মেরে ফেলার আগে তারা রতনের কথা কি একবারের জন্যও শুনবে না?  রতন তাদের দেখে ফেলেছে বলে দিনরাত জোড়হাতে বিড়বিড় করে ক্ষমা চায়। সে ঠিক করে, যতদিন না পরীরা তাকে দেখতে পাবে, ততদিন সে ক্ষমা চাওয়া থামাবে না।


0 কমেন্টস্:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন