কালিমাটি অনলাইন

দ্বাদশ বর্ষ / পঞ্চম সংখ্যা / ১২৫

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

দ্বাদশ বর্ষ / পঞ্চম সংখ্যা / ১২৫

বুধবার, ১১ এপ্রিল, ২০১৮

অলোকপর্ণা




ধারাবাহিক উপন্যাস



তাহার নামটি





(সতেরো) 
  

পিমকে কোলে করে দরজা খোলে রঞ্জনা। পোস্টম্যান তিন চারটে চিঠি ধরিয়ে দিয়ে যায়। অনেক দিন বাদে এতগুলো চিঠি একসাথে পেল সে। পিমকে কোলে করেই ছাদে এসে পা ক্রস করে দাঁড়ালো সে চিঠি সমেত। কাবেরী বলে উঠলেন, “আর কত বেলা করবি, যা চানে!
চুপ করো তো!রঞ্জনা সবচেয়ে বড় খামটা খোলে- কাচপোকা ফাল্গুন সংখ্যা। পাতা ওল্টাতেই দেখে লেখা - সৌজন্য সংখ্যা। দ্রুত সূচিপত্র খুঁজতে খুঁজতে  একসময় রঞ্জনা দেখে তার নাম। নির্দিষ্ট পাতায় যেতে দেখতে পায়-

ওড টু মাই মোস্ট রোম্যান্টিক লাভার
ওদিকে কুড়োবার শব্দ হল-
ফুল ঝরে পড়তে যে শব্দ
              তার থেকে একটু বেশি।
শূন্যস্থানে এতবড় ড্যাশ ছিল
সে তো দেখলই না ফাঁকা থাকার আহীর ভৈরব
সে তো দেখলই না
                     সূর্যমুখী ফুল অন্ধকারেও কতটা রোম্যান্টিক!

                                                    অনীতা কাকিমা!

হাসিমুখে সামনে তাকাতে রঞ্জনা দেখে অঞ্জন নিজের ছাদে দাঁড়িয়ে তাকে দেখছে। পাঁচিলের কাছে গিয়ে সে অঞ্জনকে বলে, “পিমকে নিবি? সব সময়ের জন্য?”
অল্প অবাক দেখায় অঞ্জনকে, তারপর তার মুখে হাল্কা হাসি ফুটে ওঠে। রঞ্জনা এক  ছাদ থেকে অন্য ছাদে অঞ্জনের কোলে পিমকে পাচার করে দিয়ে আবার রোদে এসে পা ক্রস করে দাঁড়িয়ে পরের খামটা দেখে। সেই ইন্দিরা বলে ভদ্রমহিলা তাকে আবার চিঠি পাঠিয়েছেন-

আপনার কবিতা পড়লাম কাচপোকায়। কেমন লাগল তা কি বলতে পারবো? নাহ্‌। কবিতা কেমন লাগে তা বলা হয়তো যায় না। কবিতা কেমন লাগায়, কেমন যেন লাগিয়ে চলে যায়।
আপনাকে আমি এই নিয়ে বোধহয় এগারো নম্বর চিঠিটা লিখছি। এইবার কি একটু  ভরসা করে দেখা করে ফেলা যায়? অবশ্য যদি আপনার স্বচ্ছন্দ্য বোধ হয়, তবেই।  খামের উপর আমার মোবাইল নম্বরটা লেখা আছে, যদি সেই নম্বরে যোগাযোগ করেন, খুব খুশি হই।
ভালো থাকবেন,
- ইন্দিরা

ইন্দির ঠাকরুণ দেখা করতে চেয়েছেন! হাসি চেপে রঞ্জনা পরের খামটা খুলেই চমকে ওঠে-

প্রিয় রঞ্জনা,
তিনি বললেন, “Love is a smoke made with the fumes of sighs.”

আমি চেয়েছিলাম দীর্ঘশ্বাসে ধরে রাখবো তোকে, যদি সেটা সম্ভব হয়। ক্ষমা করবি কখনো? মা আমায় বলেছে মায়ের কথাতেই তুই আমাদের বাড়ি ছেড়ে চলে গিয়েছিলি। ক্ষমা করবি আমাদের রঞ্জনা?
এই যে তোকে ভালোবেসে ফেলেছি, ভালোবেসে চলেছি, ক্ষমা করবি আমায় তার জন্য? জানি তোকে বাঁধা যায় না, উচিতও নয়। আমি অপেক্ষাও করবো না কোনোদিন তোর জন্য। কিন্তু যদি রাস্তায় কোনোদিন, বা ধর স্টেশনে হঠাৎ করে দেখা হয়ে গেল... ক্ষমা করে দিবি তো? যদি দেখিস আমি তোকে না দেখার ভান করে ট্রেনে উঠে গেলাম, বা তুই ডাকলি আমায়, আমি শুনেও শুনলাম না। ক্ষমা করে দিস।
আমি সাব্বির নই। হয়তো সাব্বির বলে কেউ নেই, কেউ নেই এই পৃথিবীতে। কিন্তু যদি কোনোদিন আমার মনে হয় আমার মধ্যে এক শতাংশ হলেও সাব্বির জন্মিয়েছে, আমি আসবো তোর কাছে। তোকে ডাকতে হবে না আমাকে। কিন্তু তার আগে যদি কখনো আমায় দেখিস তোদের বাড়ির সামনে দিয়ে যাচ্ছি, বা ধর গাড়ি সারাতে তোর জ্যেঠুর দোকানে এসেছি। যদি শুনিস তোর সাথে দেখা না করেই চলে গেছি, ক্ষমা করে দিস।   
ইতি
- সাব্বির নয়, সাব্বির হয়ে উঠতে চাওয়া ঋতম


পুনশ্চঃ

তিনি এও বললেন,
আমরা দুজন একটি গাঁয়ে থাকি
সেই আমাদের একটিমাত্র সুখ”।



ঋণঃ

রঞ্জনা”- অঞ্জন দত্ত, “ক্ষণিকা”- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, “হুলোর গান”- সুকুমার রায়,  
পিম- শ্রাবণী সেন দাশগুপ্তের পিমসোনা


উদ্ধৃতিঃ

শেক্সপিয়র
উইলিয়াম ফকনার
গান্ধী
নিকোলো মেকিয়াভেলি
জন লেনন
কনফুসিয়াস
মারিও পুজো
আইজ্যাক অ্যাসিমভ
নরম্যান কাসিন্স
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

রঞ্জনার কবিতাঃ
সাঁঝবাতি     


0 কমেন্টস্:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন