এক কাপ চা আর দুটো বিস্কুট
পাপিয়াপাখি আর শুভ্রবাবুর বাস্তবও অনেকটা স্বপ্নের মত। যে স্বপ্নটা
আমি দেখেছিলাম আমার ষোল বছর বয়সে এবং যেহেতু সে বয়সে মানুষ যে স্বপ্ন দেখে সেটা
চিরদিনই স্বপ্নের আকারে থেকে যায় বলে, যখন বিপর্যয়ের পর বিপর্যয় এসে আমাকে জীবনের যে চারটি এলাকা থেকে উৎখাত করে
দিতে দিতেও স্বপ্নকে স্বপ্নের পুরনো বাসা বাড়িতেই রেখে ছাপ্পান্নো হাজার আটশত
বর্গমাইলের অনুসন্ধানী দেশটিকে চতুর্থ পরমাণুশক্তিধর কেন্দ্রে রূপান্তরিত করছিল,
সেই চারটি এলাকা হল ১ ) চমৎকার বাক্য ২) স্নিগ্ধ
প্রতারণা ৩) দৈনন্দিন জীবন ৪) মাঝে মাঝে রিক্তর স্কেল অনুযায়ী ৭.৮ তীব্রতার ভূমিকম্প।
ঘোরতর বিপদেও মানুষ বাঁচে। এমনকি প্রত্যেক মুহূর্তে মৃত্যুর সম্ভাবনা থাকলেও।
তো যতটুকু বলা যায়, কোনো এক সন্ধ্যায় পথ চলতে চলতে হঠাৎ কোনো এক জানালা দিয়ে আলো ঝলমল ঘরের অভ্যন্তরে
তাকালে, দেখা গেল চব্বিশখানা ঝুরোগল্প লিখে ফেলার পরও আরও
একটি ঝুরো কিছুতেই কীভাবে লিখব বুঝে উঠতে পারছি না, অথচ পরিষ্কার গল্পটা দেখতে
পাচ্ছি। বুঝতে
পারছি না কী কী ও কেমন ধরনের শব্দ জুড়ে জুড়ে একটি পূর্ণাঙ্গ গল্পের আকার দিলে যেটা
স্বাদে ও গন্ধে বেশ ঝুরঝুরে!
গোর্কি কিন্তু আমার ভাষায় আঞ্চলিক গল্পটি লেখেন নি। নাগিব মাহফুজ
ইজিপ্টের বাইরে কোনো ল্যাটিন গল্প শোনান নি। এমন কী চিনয়া অ্যাচেবে যতগুলি গল্প লিখেছেন সবই আফ্রিকার দেশজ গল্প। এই মুহূর্তে আমি কোনো ঝুরো কোনো পুনরাধুনিক
কোনো উত্তরাধুনিক গল্প কিছুই খুঁজে পাচ্ছি না।
জুলে ভার্ন সেই কবে আশি দিনে চাঁদ থেকে ঘুরে এসেছেন। বিভূতিভূষণ
কবেই পাহাড় পর্বত গিরি কন্দর গহীন অরণ্যে ঘুরে বেড়িয়েছেন। কতই লিখলাম
তবু এসবকে ছাপিয়ে উঠে আরও লিখতে পারছি কই!
মেহেগনি কাঠের একটি সুন্দর আরামকেদারা। মেয়েটি তার
পছন্দের পুরুষটিকে এটি দিতে চায়। ভদ্রলোক কিন্তু উপহার গ্রহণে অতটা ইচ্ছুক নন। তবু
ঊনত্রিশ বছরের সুন্দরী তরুণীটি প্রায় জোর করেই...
প্লাজা হোটেলে প্রথমবার মুখোমুখি হয়েছিলেন তরুণী, কিন্তু
লোক সমক্ষে কিছুতেই ভদ্রলোকের সঙ্গে কথা
বলে উঠতে পারেন নি। তারপর সান ইদ্রিসোর বাগানে, তিপা গাছের তলে, মিলালরিওর
বাড়ির দোতলার কক্ষ থেকে দৃশ্যমান লা প্লাটা নদীর জলস্রোতের আবহে যেভাবে পাখা
মেলেছিল ছোট্ট গল্পটা... সেই নির্মিতি আমাদের সামনে কতটা উন্মুক্ত?
এ গল্পের শেষটুকু রয়েছে শান্তিনিকেতনে। জীবনের পড়ন্তবেলায়
বিজয়ার দেওয়া ঐ মেহেগনি চেয়ারটিই হয়েছিল কবির বিশ্রাম ও ভাবনার প্রিয় অবলম্বন।
১৯৭১এ বাংলাদেশের মুক্তিসংগ্রামে শামিল হয়েছিলেন অশীতিপর
ভিক্টোরিয়া। বাংলাভাষা নিশ্চইই তাঁর কাছে তৃতীয় বিশ্বের ভাষা ছিল না। এ গল্প আজ যদি
তিনি বেঁচে থাকতেন তো বলে যেতে পারতেন।
২০১৫ সালে আমেরিকা প্রবাসী এক লেখক গল্পটি লিখতে চেষ্টা
করলেন, ভিক্টোরিয়া ওকাম্পো; এক রবি বিদেশীনির খোঁজে। প্রায় দুশো পাতার মত বই। অবসর
প্রকাশনা থেকে বইটি বেরোলো ফেব্রুয়ারীর বইমেলায়। তারপর মাত্র
এক সপ্তাহ। ধর্মান্ধ
ঘাতকদল বইমেলার সামনেই রাজপথে নির্মমভাবে হত্যা করল অভিজিৎ রায়কে।
চমৎকার বাক্য স্নিগ্ধ প্রতারণা ভূমিকম্প ইত্যাদি একে একে
পার হয়ে এক সকালে পাপিয়ার দরজায় কলিং টিপলাম। স্নান সেরে
শুভ্রবাবু তখন অফিস যাওয়ার জন্য রেডি। বাগানের গাছগুলিতে সদ্য জল দেওয়া শেষ... গ্যাসে সস্প্যান
চড়ানো, ঘড়িতে সাত সাড়েসাত... ডাইনীং টেবিলে পরিষ্কার কাঁটাচামচ।
এককাপ ধুমন্ত চা আর দুটো ব্রিটানিয়া
মারী এগিয়ে দিয়ে পাপিয়া বলল, বলো...
ফাটাফাটি...
উত্তরমুছুন