কালিমাটি অনলাইন

দ্বাদশ বর্ষ / পঞ্চম সংখ্যা / ১২৫

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

দ্বাদশ বর্ষ / পঞ্চম সংখ্যা / ১২৫

শনিবার, ৬ জানুয়ারী, ২০১৮

কাজী জহিরুল ইসলাম


উৎসবনগর

হোমলেস যুবতীর ওমলেস বসে থাকা
ফুটপাতে
শীতের রাতে;
স্বপ্নহীন চোখ তার শূন্যার্ত।

শূন্য থেকে মাঝরাতে
বের হয় অলৌকিক আগুন;
সন্ত্রস্ত পর্যটকেরা ছুটতে ছুটতে
উদযাপন করে অগ্নি উৎসব, মধ্য-ম্যানহাটনে।

কষ্টেরও উৎসব হয়, মৃত্যুরও;
পার্থক্যহীন দিন ও রাত্রির মতো দুঃখগুলোও
এখানে উৎসবমুখর রাতের অপরিহার্য উপকরণ।

নামহীন হাঁটাগুলো কলম্বাস ডে'র উচ্চাকাঙ্ক্ষায় উৎফুল্ল
ফুটপাতে কালো কিংবা মেহিকান ভেন্ডরের কার্টে সাজানো
হ্যাটগুলো শ্বেতাঙ্গ নারীর রঙমাখা নগ্ন স্তনের মতো হাসছে
চিৎকার কিংবা পুলিশের ঝাঁঝালো সাইরেন সময়হীন উৎসবের জৌলুস।
ব্রডওয়ে শো'য়েরা স্প্রিংকলার খুলে যাওয়া স্রোতধারা, অনবরত
উপচে পড়ছে এভেন্যু এবং স্ট্রিটগুলোতে বহুবিধ গল্পের রঙে।

হেমন্তের ঝরাপাতারা যোগ করে বাড়তি রঙ,
বৃক্ষদের আর্তনাদও এই শহরে আনন্দধ্বনি।


কী নেবে

হাত পেতেছো? পাতো।
কী দিয়েছি? কষ্ট।
কষ্ট পেলে না-তো?

এবার আমি। পেতেছি করতল।
দাও। যা ইচ্ছে তা।
এ-কী, নুনের খরজল?

নুনমাখা জল। হোক না।
আবাদ করবো বুকে।
কাঁদবো? আমি এমন লোক না।

নুনের আবাদ। বৃক্ষ হবে।
ভালোবাসার ডাল।
আসবে তুমি? পাখিদের উৎসবে?

আবার পেতো নতুন দুটি হাত।
এবার দেবো শীতের আদর।
পাখির চোখে রাত।

নেবে তো? সত্যি করে বলো।
কী দেখছো, অবাক দুটি চোখে?
এই, কী হলো?

রাত, নেবে না বুঝি?
অন্ধকারে ভয়?
দাঁড়াও তবে। অন্য কিছু খুঁজি।

ভোর? শিউলি ফোটা দিনই?
না, না, রাতই দেব।
অন্ধকারে তোমায় ভালো চিনি।


ধর্মগ্রন্থ

আপনারা যেসব ধর্মগ্রন্থের কথা বলেন,
যেসব ধর্মগ্রন্থ অনুসরণ করেন, এর কোনোটিই মূল ধর্মগ্রন্থ নয়,
যেমন কোরআন, ত্বোরা, বাইবেল, গীতা, গ্রন্থসাহিব
এগুলো সবই উপধর্মগ্রন্থ, এক মহান ধর্মগ্রন্থের খন্ডিত অংশ।
যেটি মূল ধর্মগ্রন্থ, যা আমাদের সকলেরই অনুসরণ করার কথা,
তা এখনও রচিত হয়নি;
সেই গ্রন্থটি আকাশ থেকে নয়, আসবে মাটি থেকে, মানুষের হৃদয় থেকে;
আসমানি গ্রন্থেরা আগমন প্রতীক্ষায় জপ করছে সেই গ্রন্থের ধ্বনি
যা মানুষের ক্কালবে উৎপাদিত হয়;
সেই গ্রন্থের প্রতিটি পৃষ্ঠায় লেখা থাকবে একটিই শব্দ, মানবতা;
আর পৃথিবীর সকল মানুষ মিলেই
একদিন রচনা করবে সেই মহান ধর্মগ্রন্থ।


বালিকাবেলা

পাড়ার ছেলের তাড়া খেয়ে  তারা আমাকে
একতাড়া নোটের বুড়ো শকুনের ঠোঁটের
কাছে রেখে এলো; শকুণটা রোজ
আনন্দের ভোজ সারে আমার বালিকাবেলায়।

পাড়ার কাটা গাল বখাটে লম্বা চুল
খ্যাপাটে পিছু পিছু স্কুলপথ সিগারেট ধোয়া ছোড়া,
একদিন পরিপাটি গোলাপের এক তোড়া হয়তো বা
দুমড়ানো খামে মোড়া মলিন বুকের ঘামে
কিছু অস্পস্ট কথা; এখন হঠাৎ নামে
এক পশলা উজ্জ্বল বৃষ্টি এই এঁটো-বালিকাবেলায়।

হায়, সে-ই তো ভালো ছিল, না হয় কালো ছিল
রঙ তার, আলো ছিল দুচোখের গহ্বরে, এই হীরের কবরে
আছে এক অজগর সাপ আমার সকল পাপ
গিলে খায়, কচলায় সারারত মৃত কৈশোর।






 



0 কমেন্টস্:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন