কালিমাটি অনলাইন

দ্বাদশ বর্ষ / পঞ্চম সংখ্যা / ১২৫

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

দ্বাদশ বর্ষ / পঞ্চম সংখ্যা / ১২৫

শনিবার, ২ সেপ্টেম্বর, ২০১৭

শুক্তি ঘোষ

প্রজ্ঞাহীন

তেমন অলোকদৃষ্টি নেই আমার
যে তোমাকে পড়ে ফেলব জলের মতো,
কটাক্ষে আকাশে তাকিয়ে
জেনে যাব নৈঋতে কখন উঠবে ঝড় --
বাতাস ছুঁলেই বলে দেব
কোন্‌ দেশে বৃষ্টি নামল

তেমন অলোকদৃষ্টি নেই আমার --
খুলে যাবে অদৃষ্টের সিংদরজা,
ফুটে উঠবে জয়-পরাজয়ের চড়াই-উৎরাই;
পথের কোন্‌ বাঁকে রয়েছে মৃত্যু,
আর কোথায়ই বা ধনবর্ষা --
স্পষ্ট হবে ছবির মতো

তেমন অলোকদৃষ্টি নেই আমার
চিনে নেব ভিড়ের মধ্যে সেই মুখ --
খুলে যাবে চোখের তারার অর্গল,
শরীরী বিভঙ্গের লুকানো সংকেত
পড়ে নেব সহজ ছন্দে
কবিতার মতো

তুমি জানো, তুমি পারো;
উত্তুঙ্গ তোমার আত্মবিশ্বাস
দেখে দেখে চোখে ধাঁধাঁ লাগে --
মনে হয় বুঝি আমার সবটুকুই তোমার জানা,
পড়ে ফেলেছ শেষ পর্যন্ত
অনায়াস সহজ পাঠ
অথচ এতদিনেও
তোমার চোখের তারায়
আমি শুধু অন্ধকারই দেখতে পাই,
যতই হাতড়াই
নাগাল পাই না কিছুরই!

তেমন অলোকদৃষ্টি নেই আমার;
না জানার পাতলা চাদর
কুহেলিকা হয়ে সামনে দুলতে থাকে,
বেপথু পায়ে পথ হাঁটি --
হেমন্তের সন্ধ্যা
তার ধূসর অনিশ্চিতি দিয়ে
আমাকে দু’হাতে জড়িয়ে ধরে,
বিন্দু বিন্দু শিশিরে
ভিজে যায় পায়ের পাতা,
গোড়ালি,
গুল্‌ফ,
আমার সবটুকু

আমার ভুরুর ভাঁজে
বিস্ময়ের কস্তুরিতিলক,
চিবুকে স্মৃতিমেদুর চন্দনচূর্ণ;
প্রজনাহীন আমার দৃষ্টির সামনে
চলতে থাকে ভানুমতীর খেলা,
ঝুলি উপুড় করে বেরিয়ে আসে
এক একটি চমক,
অপ্রত্যাশিত --
ফেলে আসা বয়ঃসন্ধি
আবছা আতর হয়ে লেগে থাকে
আমার চুলে
তেমন অলোকদৃষ্টি নেই আমার --
নাছোড়বান্দা অবাক হওয়ার পালা
তাই আমার শেষ হয় না,
মোক্ষলাভ
সুদূরপরাহত!
হে ঈশ্বর,
এ জন্মের ধারাপাতে
আমি যেন প্রজ্ঞাহীন রই


আধুনিক কবিতা

আধুনিক কবিতা লিখব বলে
কলমের পিছনটা
চিবিয়ে ছিবড়ে করে ফেলেছি,
অভিধান খুলে
লাল কালিতে পর পর কেটে দিচ্ছি
পুরনো সব শব্দ,
দু’ ছত্তর লিখতে না লিখতেই
খর চোখে দেখে নিচ্ছি
ঠিকঠাক সুগার-ফ্রি হলো কি না --
স্মার্ট ফোনে ফোর জি স্পীডে উইকিপিডিয়া,
আর চট জলদি কাজে লাগবে বলে
হাতের কাছে জমিয়ে রেখেছি
তাবৎ ব্রেকিং নিউজের হেডলাইন

...লেখাটা পড়তে পড়তে
নিজেকেই বাহবা দিতে ইচ্ছে করছিল --
নিরাবেগ তন্বী আমার কবিতা
যেন ফ্যাশন র‍্যাম্পের ‘দিভা’,
তিলে তিলে ঠিক ঠিক তিলোত্তমা!
মুগ্ধ চোখে একবার তাকালাম
আমার স্বপ্ন সুন্দরীর দিকে --
তারপর সদর্পে কলার তুলে দাঁড়ালাম
সম্পাদকের টেবিলের সামনে,
দুরুদুরু বুকে বেপথু হাতে
বাড়িয়ে দিলাম
আমার সদ্যোজাত প্রোজ্জ্বল কীর্তি

অপাঙ্গে আমার দিকে একবার তাকিয়ে
সম্পাদকমশাই আলগোছে
দু’ আঙুলে তুলে ধরলেন লেখাটা
চোখের সামনে;
আমাদের দু’জনের মধ্যে দেড় মিনিটের নীরবতা --
আশা ও আকাঙ্ক্ষায় টিকটিক
ঘুরে যাচ্ছে সেকেণ্ডের কাঁটা!

তারপর
তিনি চোখ তুলে তাকালেন --
ধীরে সুস্থে, নাকের ওপর থেকে চশমাটা
ঠেলে তুলতে তুলতে বললেন
“দূর্দান্ত আধুনিক হয়েছে সন্দেহ নেই,
কিন্তু
কবিতাটা কোথায়?”
















0 কমেন্টস্:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন