কালিমাটি অনলাইন

দ্বাদশ বর্ষ / পঞ্চম সংখ্যা / ১২৫

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

দ্বাদশ বর্ষ / পঞ্চম সংখ্যা / ১২৫

শনিবার, ২ সেপ্টেম্বর, ২০১৭

রিয়া চক্রবর্তী

অপেক্ষা

জন্মের পর থেকেই অপেক্ষা করেছি এতকাল,
দাঁড়িয়ে রয়েছি শুধু তোর জন্য, তোরই অপেক্ষায়।
তোর অদৃশ্য ছায়ায় সম্মোহিত আমি,
আয়, সাজিয়ে রেখেছি শুধু তোর জন্যই
স্বর্গের পারিজাতের সুরভিত মন, আর
আমার সব অধরা স্বপ্নদের শুধু তোর জন্য।

একবার এসে দেখ, বুকের নিচে গনগনে আগুন,
পুড়ে যাওয়া বিশ্বাসের পোড়া গন্ধ, যারা যাবার
তারা চলেই গেছে কবে। একা শুধুই একা
অপেক্ষায় আছি যুগযুগান্তর ধরে।
তুই হাত না বাড়ালে স্বপ্ন থেকে যাবে।
কখনোই আমার আর স্বপ্ন ভেলায় চড়া হবে না।


জীবন যেমন

হঠাৎ সেদিন পথের বাঁকে, কি জানি কার ডাকে, পেছনে ফিরে খুঁজে পেলাম নিজেকে। অনেক আলোর দিনেও, সেই বৃষ্টি ভেজা পাতার গন্ধ-ছায়ায় নিজেকেই খুঁজি। সেদিনেও গুঁড়ো গুঁড়ো বৃষ্টিরা এসে  জল-চোখে চোখ মিলিয়েছে। দৃষ্টির এতটুকু আকাশ, চাইতে গিয়ে গুটিয়ে গিয়েছি নিজের কোলের ভিতরে। রাতের পর রাত নিজের কোলে কোল পেতে ঘুম পাড়াই আমি। অগুন্তি তারার গাঢ় পর্দার ওদিকে আস্তে আস্তে বড় হয় রাত। একটু একটু করে নীল রঙা রাতভোর। আর একটু একটু করে রোদ পেয়ে মুছে যাস তুই। এখন আমি একাই চলি। নিজেই নিজেকে ভালোবাসি। এখনও আমি নদী খুঁজি রোজ। নদী খুঁজি রোজ, চুপি চুপি আনমনে, শহরের পথে পথে, মনে মনে, বিসর্জনের সময় এসেছে বোধে-অবোধে। তোকে কি চেয়েছে কেউ? বা আমি? পাঁজরের খাঁচার একটা একটা করে আগল উপড়ে নিচ্ছি রোজ। আর একটু একটু করে তোকে রোজ ভাসিয়ে দিচ্ছি জলে। জানি তোকে দু’হাত দিয়ে আগলে রেখেছে সকলে, জানি তোর অনেকেই আছে।  আমার কিন্তু শুধু ছিলিস তুই।

তবু কেউ জানবে না, এখন, ঠিক এই সব মুহূর্তেরা বড় বেশি নিঃসঙ্কোচে নিঃসঙ্গ। নিজেকেই বলি একলা হবি সই?” হাতের মুঠি খুলে গেলো হঠাৎ হাওয়ার টানে। এলোমেলো এক পলকে সব বোঝাবুঝি। আঙুলের আলগা হলো ফাঁক। একে একে  চলে গেলি তুই, এক পা এক পা করে; তোর শেষ আকারটুকু মিশে গেলো ছায়াপথে। অনেকক্ষণ তারপর থেকে, হঠাৎ একা হয়ে যাওয়া। হয়তো কিছুক্ষণ আগলে রেখেছিলি, কিছু মুহূর্ত দিয়ে ছিলিস উপহার। আমি যে মুহূর্তেই বাঁচি। এখন এই চাঁদ-রঙা সন্ধ্যেতে, প্রতিটা কোণে, মনের প্রতিটা আলপথে, ছাদের সেই সব কার্ণিশের আনাচে কানাচে, ছলছলে আর্শীতে, অপলকে চেয়ে থেকেছি, যদি পাই তোকে। তুই নেই। এখন অনেকখানি কাজ জড়ো হয়ে গেছে শুধু। যে শব্দেরা কোথায় উড়ে গেছিলো তোর ডানা হয়ে, আজ তারা হাওয়া পথে ফিরে এসে ঘিরে আছে আমায়। হাঁটু দুটো বুকের কাছে নিয়ে এসে মাথা রেখে জড়িয়ে নিয়েছি নিজেকে, আচমকা নিজের কাছে বড় বেশি বেআব্রু আমি। তারিয়ে তারিয়ে উপভোগ করি রক্তক্ষরণ। ফোঁটা ফোঁটা লবণাক্ত হয় যখন সময়, ‘অস্ফুটে বোলে  ফেলা স্বীকারক্তিকেউ হতে পারে না, তোর মতো। কেউ নেই তোর মতো। তবু জানি, আমি বেঁচে থাকি। এ এক অন্যরকম বাঁচা, অন্য জীবন, তবু আমি বাঁচি। জীবনের প্রতি এ আমার অন্তহীন সন্ন্যাস।


0 কমেন্টস্:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন